ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ

সীতাকুণ্ডের ৩০ পাহাড়ে ১০ হাজার অবৈধ বসতি

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৭ জুলাই ২০১৭

সীতাকুণ্ডের ৩০ পাহাড়ে ১০ হাজার অবৈধ বসতি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের অবৈধ বসবাস। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী ১০ হাজার ৯৫০ পরিবারে প্রায় ৪০ হাজার সদস্যের অবৈধ বসবাস রয়েছে জঙ্গল সিলিমপুরের প্রায় ৩০টি পাহাড়ে। পাহাড়ের চূড়ায়, মাটি কেটে ধাপে ধাপে ও পাহাড়ের পাদদেশ মিলে প্রায় ৪০ হাজার লোকের বসবাস আছে অবৈধভাবে। আলীনগর ও জঙ্গল সিলিমপুরের প্রায় ১ হাজার একর পাহাড়ী বনভূমি আক্কাস বাহিনীর সাঙ্গপাঙ্গ ও ইয়াসিন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। মাত্র ৭-৮ হাজার টাকায় প্রথমে পাহাড়ের পাদদেশে মেলে ২ শতক জায়গা। পাহাড় কাটার পর বাসযোগ্য হলেই এর দাম উঠে লাখ টাকায়। পাহাড়ের চূড়ায় থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলেই শুধু ছিন্নমূল ও বাস্তুহারা কমিটির চাঁদা দিলেই চলে। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের খুঁটি যেমন বসানো হয়েছে অবৈধভাবে। তেমনি প্রশাসনের প্রবেশাধিকারেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে নিয়ন্ত্রকদের সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে। সেখানে সীতাকু- থানা পুলিশেরও নিয়ন্ত্রণ নেই আইনশৃঙ্খলায়। ফলে ছিন্নমূল বস্তি আর আলী নগর বস্তিগুলো গড়ে উঠেছে জেলা প্রশাসনের আড়ালে পৃথক সম্রাজ্যে। গত বৃহস্পতিবার রাত প্রায় তিনটার দিকে জঙ্গল সিলিমপুরের ১নং সিলিমপুর ওয়ার্ডের বিবিরহাট এলাকার জনৈক ইয়াসিনের পাহাড়ে মাটি ধসের ঘটনা ঘটলেও পাহাড়ের মালিকানা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ বসবাসকারীরাও। সরকারী খাস জমির অংশ হিসেবে দুটি সম্রাজ্যের দখলে ৩০টি পাহাড়ে রয়েছে প্রায় ১ হাজার একর পাহাড়ী ভূমি। যেখানে এক সময় ছিল বন্য গাছের বনাঞ্চল এখন তা পাহাড়ী জনপদে পরিণত হয়েছে। সীতাকু- থানার আওতায় হলেও একটি অংশের প্রবেশ রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ ধরে দুয়েক কিলোমিটার। আবার ফৌজদারহাট রেল স্টেশনের ৫শ’ গজ আগেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিলিমপুর সিডিএ আবাসিক এলাকার পথ ধরেও দেড় কিলোমিটার পাড়ি দিলেই দূর থেকে দেখা যায় ছিন্নমূলের নামে গড়া দুটি সম্রাজ্যের পাহাড়ী আবাসস্থল। তবে সবচেয়ে সোজাপথ সিএমপির বায়জিদ থানার বাংলাবাজার হয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার পার হলেই শুরু হয় কর্দমাক্ত হেঁটে চলার পথ। মোটামুটি ৪-৫ কিলো পার হলেই পরিচয় মেলে ছিন্নমূলের নামে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাঁচাপাকা স্থাপনা। তবে সেখাকার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও সন্ত্রাসীদের হাতে। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী ও ছিন্নমূল বস্তিবাসীর নিয়ন্ত্রকের মৃত্যুর পরই নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ইয়াসিন বাহিনীর হাতে। চারটি ধাপে এই এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে এই ইয়াসিন বাহিনী। জঙ্গল ছিলিমপুরের তিনটি প্রবেশদ্বারের বাংলাবাজারের প্রবেশদ্বারেই রয়েছে প্রায় অর্ধশত সন্ত্রাসী ইয়াসিনের ইনফরমার। মিডিয়ার লোক বা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য সন্দেহ হলেই খবর চলে যাচ্ছে ভেতরে। এরপরই শুরু হয় বাধা। একই পরিস্থিতি সিডিএর সিলিমপুর আবাসিক এলাকার সড়কেও রয়েছে। তবে সেখানে সন্ত্রাসীদের নজরদারি ততটা কঠোর নয়। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে পাহাড় ও টিলা টপকিয়ে জঙ্গল ছিলিমপুরে পৌঁছানো যায়। দীর্ঘ প্রায় দুইযুগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে সরকারী পাহাড় দখল চললেও এখন চলছে সাজানো গোছানোর মতোই। টাকার পরিমাণে পরিবর্তন আসছে মালিকানার। যারা এক সময় বিনে পয়সায় দখল করে বসবাসযোগ্য করেছে পাহাড়ের পাদদেশ তারা এখন বিক্রি করছে লাখ টাকায়। নিচে যারা ছিল তারা ক্রমশ পাহাড় কাটতে কাটতে আর দখল বিক্রি করতে করতে পাহাড়ের ওপরে উঠছে। ছিন্নমূল বস্তিবাসীর সমিতির হিসাব অনুযায়ী ১৫০ টাকা মাসিক চাঁদা দিয়ে সমিতির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। তবে প্রায় ৪০ হাজার লোকের বসবাস রয়েছে আলীনগর ও ছিন্নমূল বস্তি এলাকায়। প্রায় ১ হাজার একর এলাকা ঘিরে গড়ে উঠা ভূমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন অনেকটা অকার্যকর।
×