ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসম্পূর্ণ চামড়া শিল্পনগরী

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ২৭ জুলাই ২০১৭

অসম্পূর্ণ চামড়া শিল্পনগরী

‘আমরা শুরু করি, শেষ করি না’- রবীন্দ্রনাথের বহুউক্ত এই কথাটি সম্প্রতি সাভারে স্থানান্তরিত চামড়া শিল্পনগরীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বহু দেনদরবার, প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা- সর্বোপরি সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পকে সাভার নেয়া হলেও, সেটা মূলত অদ্যাবধি কাজের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী সেখানে ১৫৪টি শিল্প-কারখানার মধ্যে মাত্র ৬২টি শুরু করেছে চামড়া উৎপাদন। ট্যানিং প্রায় স্থাপন করেছে ৭৭টি প্রতিষ্ঠান। কারখানা চালুর জন্য আবেদন করেছে ৭২টি প্রতিষ্ঠান। মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে তিতাস গ্যাস। পানির সংযোগ নিয়েছে মাত্র ৫৫টি প্রতিষ্ঠান। আরও যা দুঃখজনক, তা হলো, চামড়া শিল্পনগরীর অন্যতম অনুষঙ্গ কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিন্ডি) নির্মাণের কাজ শেষ করতে আবারও সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অথচ প্রধানত বর্জ্য শোধনাগার না থাকার জন্যই সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তরের এত ব্যাপক উদ্যোগ ও আয়োজন। অবশ্য এর বাইরেও রয়েছে ট্যানারি শিল্প মালিকদের জমি বরাদ্দ, ব্যাংক ঋণ বিষয়ক জটিলতা, শ্রমিকদের আবাসনসহ অন্য নানা সমস্যা। এতসব সমস্যা ও জটিলতা নিয়ে আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় সাভার শিল্পনগরী আদৌ সচল ও কার্যক্ষম হতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে বিস্তর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কোরবানির ঈদে ৩৫-৪০ লাখ কাঁচা চামড়া, বছরের প্রায় ৩০ শতাংশ সংগৃহীত হয়ে থাকে। অপ্রস্তুত ও অকার্যকর চামড়া শিল্পনগরীর কারণে সমূহ ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশে-বিদেশে ১০ হাজার কোটি টাকার চামড়াজাত পণ্যের বাজার। অন্যদিকে বুড়িগঙ্গার মতো মারাত্মক দূষণের মুখে পড়েছে ধলেশ্বরী নদী ও সংলগ্ন জলাশয়। ইতোপূর্বে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের ব্যাপারে ট্যানারি শিল্প মালিকরা যা করেছিলেন, তা সমর্থনযোগ্য নয়। তবে দুঃখজনক হলো, একশ্রেণীর চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিক সরকার ও আদালতের নির্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়েই যাচ্ছিলেন। সত্যি বলতে কি, রাজধানী তথা বুড়িগঙ্গার অসহনীয় ও তীব্র ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে বেশ কয়েক বছর আগেই হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত লবণ, সালফিউরিক এ্যাসিড, ক্রোমিয়াম ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক, মানবদেহ, পশুপাখি সর্বোপরি প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এখন একই ঘটনা ঘটতে চলেছে সাভারে। ট্যানারি শিল্প মালিকদের দাবির মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত প্রায় সবই মেনে নিয়েছে। সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে জমি বরাদ্দসহ কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা ইটিপি স্থাপন কাজও চলছে। ব্যাংক ঋণেরও সমস্যা নেই। কিছু ট্যানারি সেখানে কাজ শুরুও করেছে। অথচ সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পুরোপুরি চালু হলে অনেকটাই সহজসাধ্য হয়ে উঠবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার। তবে কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে সাভারে। এই যেমন, সেখানে বর্জ্য শোধনাগারে লবণ পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। ফলে দূষিত লবণ পানি গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরীতে। তবে অচিরেই সে সমস্যা সমাধান করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে বিসিক। একই সঙ্গে চামড়া শিল্পের ৪০ হাজার শ্রমিকের পুনর্বাসনও অত্যাবশ্যক। যেসব ট্যানারির মালিক সাভারে শিল্পপ্লট পাননি, গ্যাস-বিদ্যুত-পানি সংযোগসহ তাদের বিষয়টিও বিবেচনা করা বাঞ্ছনীয়।
×