ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণী আক্তার সান

মিতালিদের কাঁদিয়ে শিরোপা ইংল্যান্ডের

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ২৬ জুলাই ২০১৭

মিতালিদের কাঁদিয়ে শিরোপা ইংল্যান্ডের

ঘরের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে মহিলা বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ইংল্যান্ড। এগারোতম আসরে ইংলিশ মেয়েদের এটি চতুর্থ সাফল্য। এর আগে ১৯৭৩, ১৯৯৩ ও সর্বশেষ ২০০৯ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুলীন দেশটির প্রমীলা ক্রিকেট দল। অন্যদিকে ২০০৫ সালের পর ফাইনালে উঠে এবারও শিরোপা জেতা হলো না উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের সুপার পাওয়ার ভারতীয় মেয়েদের। ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে এসেও পারল না ভারতের মেয়েরা। দুর্দান্ত দাপটে একের পর এক দুর্ধর্ষ সব প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে ফাইনালে উঠেও ইংল্যান্ডের কাছে ৯ রানে হেরে গেল মিতালি রাজের দল। নিঃশ্বাস ছোঁয়া দূরতেœ এসে স্বপ্নভঙ্গ শচীন-টেন্ডুলকর, বিরাট কোহলির দেশের ক্রিকেটকন্যাদের। অন্তিম লড়াইটা জিতলেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেতেন মিতালি-ঝুলন গোস্বামীরা। ঐতিহাসিক লর্ডসে ইতিহাসের হাতছানি দেয়া দ্বৈরথে এক পর্যায়ে পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ভারত। আয়োজকদের ২২৮/৭Ñএর জবাবে ১ ওভার ২ বল আগে ২০৯ রানে অলআউট হয় মিতালিরা। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের পথে ৬ উইকেট নিয়ে ফাইনালে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ ইংলিশ পেসার এনা সুরবসোল। আসরজুড়ে ধারাবাহিক ব্যাটিংশৈলী উপহার দিয়ে ‘ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’ সতীর্থ টেমি বেমন্ট। মেয়েদের বিশ্বকাপে কুলীন ইংল্যান্ডের এটি চতুর্থবারের মতো শিরোপা জয়। অল্পের জন্য ইতিহাস গড়তে না পারলেও নিজেদের খেলা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটে ‘মেয়েদের শচীন’ খ্যাত অধিনায়ক মিতালি। লর্ডসে শুরুতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে প্রত্যাশিত সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারেননি ইংল্যান্ড ব্যাটাররা। সারা টেলরের ৪৫, নাটালি স্কিভারের ৫১ ও শেষ দিকে ক্যাথরিন ব্রান্টের ৩৪ ও জিনি গুণের ২৫ রানের ইনিংসে ভর করে ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছিল ২২৮ রান। ভারত এই রান সহজেই তাড়া করে জয় পাবে, এমনটাই হয়ত ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। ৮৬ রানের ইনিংস খেলে ভারতের শুরুটাও ভালভাবেই করেছিলেন ওপেনার পুনম রাউত। অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে দেয়া সেমিফাইনালে অপরাজিত ১৭১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলা হারমানপ্রিত কাউর করেছিলেন ৫১ রান। বেদা কৃষ্ণমূর্তিও ৩৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যায়ের ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়েছে ভারতকে। ৪৩ থেকে ৪৯Ñ এই সাত ওভারে মাত্র ২৮ রান তুলতেই ভারত হারিয়েছে ৭টি উইকেট! ফলে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংও করতে পারেননি ভারতের ব্যাটাররা। ৪৮.৪ ওভার ব্যাটিং করেই ২১৯ রানে গুটিয়ে গেছে ইনিংস। পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারলেও হয়ত প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বাদ পেতেন ভারতের মেয়েরা। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচটিতে দারুণ বোলিং করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের ডানহাতি পেসার এনা সুরবসোল। ৯.৪ ওভার বোলিং করে ৪৬ রানের বিনিময়ে তিনি নিয়েছেন ৬টি উইকেট। বলাবাহুল্য, স্মরণীয় নৈপুণ্যের পর ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তাঁরই হাতে। ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘অবিশ্বাস্য একটা খেলা হলো। অনুভূতিটা বলে বোঝাতে পারব না। একটা সময় মনে হচ্ছিল, আমরা ম্যাচ থেকে হারিয়ে গিয়েছি। কিন্তু হারমানপ্রিত আউট হতেই আমরা ম্যাচে ফিরে আসি।’ ছোটবেলায় ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা শুরু। ২৫ বছরের এই পেসার বলছিলেন, ‘এটা বিশ্বকাপ ফাইনাল। সর্বোচ্চ চাপের খেলা। নতুন ব্যাটসম্যানরা সব সময় চাপের মধ্যে থাকবে। আমরা জানতাম, দু-একটা উইকেট পড়লেই ভারত চাপে পড়ে যাবে।’ আর ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিথার নাইট বলেছেন, ‘ভারতকেও কৃতিত্ব দিতে হবে। ওরা দুর্দান্ত খেলেছে। পুনম তো খুব ভাল ব্যাট করল।’ এ যেন ২০০৫ সালের এ্যাকশন রিপ্লে। সেবারের মতো একইভাবে প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে তুলে ফাইনালে পৌঁছেছিলেন ঝুলন, মিতালিরা। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। যেভাবে শুরুটা হয়েছিল সেভাবে শেষ হলো না। লিগ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর যেভাবে সেমিফাইনালে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তা থেকে যেন জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে দিয়েছিল আপামর ভারতবাসী। কিন্তু শেষ বেলায় সব প্রত্যাশায় জল ঢেলে খালি হাতেই ফিরতে হলো। ঝুলন, মিতালিদের হয়ত এটাই শেষ বিশ্বকাপ। কেরিয়ারের শোকেসে বিশ্বকাপ রাখা হলো না বিশ্ব মহিলা ক্রিকেটের সফলতম এক ব্যাটার ও বোলারের। একরাশ হতাশা নিয়েই থামতে হলো তাদের। শেষ বেলায় আর উত্তেজনা ধরে রাখতে পারেনি ভারতের মেয়েরা। কিছুটা টেনশনেই উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন তারা। যার ফল হার। আবারও খালি হাতে বিশ্বকাপের আসর থেকে ফেরা। এত ভাল ক্রিকেট খেলার পরও। এই আফসোস হয়ত কখনওই যাবে না ভারতীয় ক্রিকেটের। ঠিক যেভাবে ২০০৩ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে শেষ হয়েছিল দাদাবাবু সৌরভ গাঙ্গুলীদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। মিতালির ভাগ্যটাও যেন দাদার পরিণতিবরণ করল। কষ্ট বুকে চেপে ভারত অধিনায়ক মিতালি রাজ বলেন, ‘আমরা ফাইনালে খুবই ভাল খেলেছি। শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়াই করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাপটা নিতে পারিনি। অযথা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আউট হয়েছি।’ হারলেও প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামীর প্রশংসাও শোনা যায় মিতালির গলায়। বাংলার সর্বকালের সেরা মহিলা পেসার সম্পর্কে মিতালি বলেন, ‘ঝুলন একজন ক্লাস বোলার। এটা বহু বার প্রমাণ করেছে ও। আজকের ম্যাচেও ইংল্যান্ডকে এত কম রানে আটকে রাখার অন্যতম কারণ ওঁর বোলিং। দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ঝুলন। তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে ও আদর্শ।’
×