ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৬ জুলাই ২০১৭

প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন পরিচালক আনু জায়গীরদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার শেয়ারবাজারসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী শেখ এ পরোয়ানা জারি করেছেন। শেয়ারবাজারবিষয়ক ট্রাইব্যুনালে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলাটির বিচারকার্য পরিচালনার জন্য সোমবার পূর্বনির্ধারিত ছিল। কিন্তু এদিন আসামিরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হননি। এতে বাদীপক্ষ গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর জন্য আবেদন করে। এর আলোকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, এ মামলায় বিচারকার্য পরিচালনার জন্য সোমবার পূর্বনির্ধারিত ছিল। কিন্তু অভিযুক্ত আনু জায়গীরদার এবং মশিউর রহমান এদিন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হননি। এতে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আবেদন করে। এর আলোকে ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। একই মামলার আসামিরা ছিলেনÑ প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজসহ প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন চেয়ারম্যান এমএ রউফ চৌধুরী, পরিচালক সাঈদ এইচ চৌধুরী ও আনু জায়গীরদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান। এরই মধ্যে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল এমএ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরী বেকসুর খালাস পেয়েছেন। অন্যদিকে এ মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে আসামি মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজ বন্ধ ছিল, যা গত ২ মে পর্যন্ত কার্যকরী ছিল। এর পর মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজ আবার শুরু হয়। এরই আলোকে সোমবার বিচারকাজের জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিল। এ মামলায় মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজে দুই দফায় ৬ মাস করে এক বছরের স্থগিতাদেশ দেয় উচ্চ আদালত। প্রথমবার ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল এ বিচারকাজে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে ২৯ নবেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নবেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে। এ সময় এক নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। একই ভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এসব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দো-সুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করতেন। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯-এর ২১ ধারাবলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯-এর ১৭ ধারার ই(২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২৪ ধারার অধীনে আসামিদের শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
×