ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ৪৪ গ্রাম প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৬ জুলাই ২০১৭

যশোরে ৪৪ গ্রাম প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ কয়েক দিনের টানাবর্ষণে মণিরামপুরের নয়টি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার কামালপুর ও মোহনপুরসহ ৪৪টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়ছে কাঁচা বাড়িঘর। একইসঙ্গে ৪৬৩টি মাছের ঘের ভেসে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন চাষীরা। ডুবেছে ফসলের জমিও। খেটে খাওয়া মানুষেরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় বেড়েছে আর্থিক অনটন। বাড়িঘর বসবাস অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় অনেকে আশ্রয় নিচ্ছেন রাস্তাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাছাড়া পানি ঢুুকে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে গত বছরের মতো এবারও মণিরামপুরের শ্যামকুড় ইউনিয়নের বাসিন্দারা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে মণিরামপুরের শ্যামকুড় ইউনিয়নের হাসাডাঙ্গা, আমিনপুর, নাগোরঘোপ, চিনাটোলা, শ্যামকুড়, জামলা, মুজগুন্নি, হালসা, ঘুঘুরাইল, আগরহাটি, তেঘরি, সৈয়দ মোহাম্মদপুর ও বাঙ্গালীপুর গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার, খানপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভরতপুর, ঘুঘুদা, গোপালপুরের অংশবিশেষ ও শেখপাড়া গ্রামের প্রায় ২৫০টি পরিবার, দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের দুর্বাডাঙ্গা, কুশখালি, হরিণা ও কোনাকোলা গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার, কুলটিয়া ইউনিয়নের সুজাতপুর, হাটগাছা, বাজেকুলটিয়াসহ আশপাশের এলাকার প্রায় ২৫০ পরিবার, চালুয়াহাটি ইউনিয়নের গৌরীপুর, রতনদিয়া, রতেœশ্বরপুর, আটঘর ও গুপিকান্তপুর গ্রামের ২৫০ পরিবার, হরিদাসকাটি ইউনিয়নের নেবুগাতী, পাঁচকাটিয়া, ভুলবাড়ি ও কুচলিয়া গ্রামের ২৫০ পরিবার, মনোহরপুর ইউনিয়নের খাকুন্দি, বাজিতপুর, ভবানিপুর, মনোহরপুর ও কপালিয়া গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবার, মশ্মিমনগর ইউনিয়নের চাকলা, হাকিমপুর ও পারখাজুরা গ্রামের প্রায় ১৫০ পরিবার এবং হরিহরনগর ইউনিয়নের ডুমুরখালী এলাকার ৩০টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া মণিরামপুর শহরের কামালপুর ও মোহনপুর কারিগরপাড়ার ৩৩৫টি পরিবার জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। এদিকে টানাবর্ষণে মুক্তেশ্বরী ও টেকা নদীর পানির উজান ঢলে উপজেলার বিল কেদারিয়াসহ আশপাশের প্রায় ৩৮০ হেক্টর এরিয়ার ৪৬৩টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন মাছচাষীরা। আমতলীতে ৪০ গ্রাম নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, ভারী ভর্ষণ ও লঘুচাপের প্রভাবে সাগর ও পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমতলী ও তালতলী উপকূলীয় অঞ্চলের চরসহ ৪০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত সাতদিন ধরে ভারী বর্ষণে জনজীবন বিপর্যয় হয়ে পড়েছে। আমনের বীজতলা পচে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে কৃষকরা। জানা গেছে, গত সাতদিন ধরে ভারী বর্ষণ ও লঘুচাপের প্রভাবে সাগর ও পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১.৫ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাগর মোহনা ও পায়রা নদীসংলগ্ন চর প্লাবিত হয়েছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় দুই উপজেলার মাঠঘাট তলিয়ে কৃষি কাজ বন্ধ রয়েছে। আমনের বীজতলায় বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে কৃষকরা। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমতলীর বালিয়াতলীর বয়াতি বাড়িসংলগ্ন ২০০ মিটার ভাঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পায়রা নদীর পানি প্রবেশ করে বালিয়াতলী, ঘোপখালী, পশুরবুনিয়া, দক্ষিণ ঘাপখালী ও চরকগাছিয়া এবং তালতলীর তেতুঁলবাড়ীয়া নামক স্থানের ১ কিলোমিটার ভাঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে তেঁতুলবাড়িয়া, নলবুনিয়া, আগাপাড়া ও মোয়াপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফেনীতে ক্ষতি ৫ কোটি টাকা নিজস্ব সংবাদদাতা ফেনী থেকে জানান, অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে ফেনীর পরশুরাম-ফুলগাজী উপজেলার বেশকিছু এলাকা বন্যকবলিত হয়েছে। মুহুরী ও কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে দুই উপজেলার ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বানের পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, ডুবে গেছে আমন বীজ তলা, ভেঙ্গে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ সড়কসহ গ্রামীণ জনপথ। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টি আর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী পানির তোড়ে মুহুরী, কহুয়া আর সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ১১ পয়েন্টে ভেঙ্গে গেছে। বানের পানিতে সম্পদের পাশাপাশি বন্যকবলিত এলাকার জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। রমজান আলী জানান- অনেক এলাকায় বানের পানি ঘরে ঢুকে যাওয়ায় রান্নার চুলা জ্বলেনি অধিকাংশ ঘরে। বৃষ্টি সামান্য বন্ধ হওয়ায় বন্যার পানি ভাটিতে নামতে শুরু করলেও ভোগান্তি কাটছে না এলাকাবাসীর।
×