ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

শ্রাবণসন্ধ্যায় রবিরশ্মির নিবেদন রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ জুলাই ২০১৭

শ্রাবণসন্ধ্যায় রবিরশ্মির নিবেদন রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবারের ঘন বর্ষায় প্রতিদিনই ঝরছে বৃষ্টি। অবিরল বারিধারায় স্বরূপে দৃশ্যমান হয়েছে রূপময় ঋতু বর্ষা। তাই তো নানা নাগরিক বিড়ম্বনার মাঝেও সুন্দরের অনুরাগীদের কাছে উপভোগ্য হয়ে ধরা দিয়েছে বর্ষাকাল। প্রায়শই শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বর্ষারানীর বন্দনাভিত্তিক আয়োজন। মঙ্গলবার শ্রাবণ সন্ধ্যায় তেমনই এক আয়োজন হলো রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান দিয়ে সাজানো ছিল এ সঙ্গীত আসর। কবিগুরুর বর্ষার রূপে মুগ্ধ হওয়ার বর্ণনাময় সঙ্গীতানুষ্ঠানটির শিরোনাম ‘কী হাওয়ায় মাতালো’। সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সঙ্গীত সংগঠন রবিরশ্মি। রবিরশ্মির পরিচালক বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মহাদেব ঘোষের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তিনি বলেন, নিবেদিত প্রাণ শিল্পীরা কাজ করছে এই সংগঠনে। তাদের খুব বেশি চাওয়া-পাওয়া নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান গাওয়ার মাঝেই তারা খুঁজে নেয় অন্যরকম এক আনন্দ। সংগঠনের বিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী অক্টোবর মাসে দুই দিনের উৎসবের আয়োজন করা হবে। সেই আয়োজনটিতে থাকবে ঢাকার বাইরের শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনা। সংক্ষিপ্ত কথন শেষে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। অনেক কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। সবাই মিলে গেয়ে ওঠে ‘বিশ্ববীণারবে বিশ্বজন মোহিছে/স্থলে জলে নভতলে বনে উপবনে’। প্রথম গানেই ঝরে পড়ে শ্রোতার করতালি। দ্বিতীয় গানে উঠে আসে বৃষ্টি জাগানিয়া মেঘের কথা। সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় ‘ওই কি এলে আকাশ পারেÑদিক ললনার প্রিয়/চিত্তে আমার লাগলো তোমার ছায়ার উত্তরীয়/মেঘের মাঝে মৃদঙ্গ তোমার বাজিয়ে কি ও...’। ততক্ষণে মিলনাতনে যেন গানের সুরে ভর করে ধরা দিয়েছে ভরা বর্ষা। বৃন্দ সুরে গাওয়ার তৃতীয় গানের শিরোনাম ছিল ‘বুঝি এল, বুঝি এল ওরে প্রাণ’। সমবেত পরিবেশনার পর সিলভিয়া সমদ্দার শীলার গাওয়া ‘উতল ধারা বাদল ঝরে’ গানের মাধ্যমে শুরু হয় একক গান। উত্তম কুমার শর্মা গেয়ে শোনান ‘আজি হৃদয় আমার’। ‘পুব হাওয়াতে দেয় দোলা’ শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফারহিন ইসলাম। বর্ষার বন্দনায় মাহদী সাবিয়ার রহমান গেয়ে শোনান ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদরদিনে’। ‘আজ শ্রাবণের আন্ত্রণে’ শীর্ষক গান শোনান বিষ্ণুপদ দাস। শারমিন আক্তার স্বর্ণার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’। দীপা ধর গেয়ে শোনান ‘আজি শ্রাবণ ঘন গহন মোহে’। মহাদেবস সাহা পরিবেশন করেন ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’। এছাড়াও একক কণ্ঠে গান শোনান রাজিব ফেরদৌস, পারমিনা তোড়া, রাবেয়া আক্তার, দীপ্তি চৌধুরী প্রমুখ। সম্মেলক সুরে শেষ হয় বর্ষাভিত্তিক এ সঙ্গীতানুষ্ঠান। গাওয়া হয় ‘শ্যামল ছায়া নাইবা গেলে’ ও ‘যায় দিন শ্রাবণ দিন যায়’। তাজউদ্দীন আহমদের জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক ভাস্বর ব্যক্তিত্ব তাজউদ্দীন আহমদ। তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় ও সফল নেতৃত্ব প্রদান। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে অনন্য অবদান রচনাকারী মেধাবী, পরিশ্রমী ও গণমনস্ক নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাদুঘর মিলনায়তনে জননায়ক তাজউদ্দীনকে জানানো হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী। আলোচনা করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ওয়ালিউল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি। তাজউদ্দীন আহমদের লেখা চিঠি ও ডায়েরি থেকে পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী সৈয়দ শহীদুল ইসলাম নাজু ও মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। এছাড়া সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করে আব্দুল্লাহ মেমোরিয়াল হাই স্কুল ও আগারগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আলোচনায় তাজউদ্দীন আহমদকে অকুতোভয় দেশপ্রেমিক যোদ্ধা উল্লেখ করে সিমিন হোসেন রিমি বলেন, বাবা আজীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। জীবনভর এক সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। সমস্যার গভীরে চলে যেতেন, সমস্যার সমাধান কিভাবে করবেন তাই নিয়ে সবসময় ভাবতেন। তাজউদ্দীন আহমদ ছোটবেলা থেকেই মানুষের জন্য চিন্তা করতেন, এগিয়ে যেতেন আর্তমানবতার সেবায়। তাই আমি এখনও তাকে খুঁজে বেড়াই। ২১ বছর বয়স থেকে তাজউদ্দীনের কাজগুলো মানুষের মনে এ ধারণা তৈরি করল যে তাকে বিশ্বাস করা যায়। তিনি সৎ, দায়িত্বশীল ও মিথ্যা কথা বলেন না। তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি থেকে উদ্ধৃত করে রিমি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ ‘জনগণের রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কাপাসিয়ার এক জনসভায় তাজউদ্দীন বলেছিলেন, তিনি এমন একটি রাষ্ট্র দেখতে চান যেখানে কোন দুর্নীতি থাকবে না। সুখী ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে আসতে বলেছিলেন সবাইকে। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পর্বে আবদুল্লাহ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা গেয়ে শোনায় তিনটি গান। এগুলো হলোÑ ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’, ‘আজ যত যুদ্ধবাজ পতাকায় বাঁধা লাল সূর্যটা’, ‘একটি কণ্ঠে হাজার কণ্ঠে’। এছাড়া ‘এগিয়ে যাও বাংলাদেশ’ গানের সুরে নাচ করে। আগারগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে ‘মাঝি নাও ছাড়িয়া দে’ ও ‘সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তে তুমি’। এছাড়াও তারা ‘গারে সবাই হৃদয় দিয়ে বাংলা মায়ের গান’ ও ‘মাতাল সুরে বাজলো বাঁশি’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে।
×