ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সিদ্দিকুরের ওপর হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে এক ছাত্র

৫ হাতের কম দূরত্ব থেকে পুলিশ টার্গেট করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৬ জুলাই ২০১৭

৫ হাতের কম দূরত্ব থেকে পুলিশ টার্গেট করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খুব কাছ থেকে ছাত্রদের টার্গেট করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। সে সময়ই সিদ্দিক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ৫ হাতের কম দূরত্ব থেকে পুলিশ টার্গেট করে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। তাহলে এখন পুলিশের এত প্রশ্ন কেন? তাহলে সিদ্দিকের ওপর হামলার জন্য পুলিশের বিচার চাইতে পারি না? সে দিনের ঘটনার এভাবেই বর্ণনা দিলেন সিদ্দিকুর রহমানের বন্ধু ও সহপাঠীরা। এদিকে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, সিদ্দিকুরের চোখে জখমের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে নতুন করে আরও একটি তদন্ত করা হবে। এদিন সকালে সিদ্দিকুরকে দেখতে আসেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনইউ) উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। সিদ্দিকের বন্ধু ও সহপাঠীরা পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ার ভিডিও দেখিয়ে জানান, আমাদের এক বন্ধুই এ ভিডিও করেছে। সে এতদিন ভয়ের কারণে এটা প্রকাশ করেনি। আজ যখন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া মঙ্গলবার হাসপাতালে এসে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন। এখন তাদের প্রশ্ন, তাহলে সিদ্দিকুরের ওপর হামলার বিচার পাব না। ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০ জুলাই শাহবাগে পরীক্ষার রুটিন ও তারিখসহ একাধিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থী ও পুলিশ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। তখনই একদম কাছ থেকে পুলিশ ছাত্রদের টার্গেট করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ সময় সেখানে থাকা নীল পাঞ্জাবি পরা সিদ্দিকুর রহমান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে সে অবস্থায় রেখেই পুলিশ সামনে থাকা ছাত্রদের দিকে এগিয়ে যায়। সিদ্দিকুরের সহপাঠী ফরিদউদ্দিন জানান, যখন ছাত্রদের অযথাই ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন সিদ্দিকুর একজনকে উদ্ধারে এগিয়ে যায়। এরপর তার চোখ লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। সিদ্দিকুরের সহপাঠীরা জানান, পুলিশের বক্তব্য কতটা মিথ্যা, টিয়ারশেলের আঘাত কিনা। সেটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু তারপরও তারা যদি অস্বীকার করতে চায়। তাহলে এ ভিডিও ফুটেজ তারা দেখতে পারে। যে পুলিশ এ কাজ করেছে তার বিচার দাবি করছি। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আমরা ভিডিও ফুটেজসহ আরও অনেক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি। এরই মধ্যে একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাব, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। বিশেষজ্ঞরা জানান, টিয়ারশেলের গ্যাস কখনও সরাসরি নিক্ষেপ করা যায় না। নিচুতেও নিক্ষেপ করা যায় না। তাহলে শেলটা পড়ে যায়। বিস্ফোরণ হয় না। এটাকে মিনিমাম ৪৫ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে মারতে হয়। যাতে বাতাসে এটা বিস্ফোরিত হয়ে গ্যাসটা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। শেলটা আস্তে করে নিচে পড়ে যায়। তবে ঘটনার দিনের ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ৪৫ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে নয়। সরাসরি খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল (টিয়ারশেল) নিক্ষেপ করে। তারপরই সিদ্দিকুর পড়ে যান। গত ২০ এপ্রিল শাহবাগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় আহত তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুরের চোখের চিকিৎসা চলছে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বাঁ চোখের এক পাশ থেকে আলো দেখছেন সিদ্দিকুর রহমান। তবে ডান চোখে কোন আলো দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিদ্দিকুর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ে পাঠাবে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, কলেজছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের চোখে জখমের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে নতুন করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পর্যায়ে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ে একসভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা সিদ্দিকুরের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এ ঘটনায় পুলিশের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন যদি সন্তোষজনক না হয়। তাহলে আমরা প্রয়োজনের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শাহবাগ মোড় বন্ধ হলে, সারা ঢাকা শহরে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই আমাদেরও নির্দেশনা ছিল। কোনভাবে মোড় যেন বন্ধ না হয়। সুতরাং এখানে সরকারী দলকে আন্দোলন করতে দেয়, বিরোধীদের দেয় না এমন অভিযোগ সত্য নয়। অপরদিকে সিদ্দিকুরের চোখের ওই জখম পুলিশের টিয়ারশেলের কারণে কিনা। তা নিয়ে সন্দিহান হলেও বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানান ডিএমপি কমিশনার। দেখতে গেলেন জাতীয় বিশ্বদ্যালয়ের উপাচার্য মঙ্গলবার সকালে সিদ্দিকুর রহমানকে দেখতে যান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনইউ) উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। এ সময় তিনি তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তিনি সিদ্দিকুরের চোখ হারানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি সিদ্দিকুর রহমানের মা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিদ্দিকুরের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও তাদের অবহিত করেন। উপাচার্য সিদ্দিকুর রহমানের পরিবারের প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এইচ এম তায়েহীদ জামাল শিপু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×