ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস

দুদিনের টানা বর্ষণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৬ জুলাই ২০১৭

দুদিনের টানা বর্ষণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দু’দিনের টানা বর্ষণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষ। সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ অবস্থান করছে। সমুদ্রবন্দরসমূহকে দেয়া তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদফতর। বৃষ্টিপাত আরও দু’একদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। মঙ্গলবারও বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়ে রাজধানীবাসী। দিনভর চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি। নগরীর রাস্তাঘাট ও গলিপথ হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর। জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজও রাজধানীবাসীর জীবন বিষিয়ে তুলেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবহাওয়ার এমন অবস্থা থাকতে পারে। তবে ওইদিন বৃষ্টিপাত কম থাকবে। আগামী শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাতমুক্ত আবহাওয়া থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপরূপে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মঙ্গলবার আবহাওয়াবিদ শাহিনুর ইসলাম জানান, মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তা এবং লঘুচাপের কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়ার এমন অবস্থা আগামী দু’দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী শুক্রবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি ঘটতে পারে বলে জানান শাহিনুর ইসলাম। এদিকে গত দু’দিন ধরে বৃষ্টি পড়ছে রাজধানীতে। মঙ্গলবার বেড়ে যায় বৃষ্টির পরিমাণ। আর বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, সেই সব এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবারও ওই সব এলাকা বিশেষ করে রাজধানীর মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ, রাজাবাজার, তেজতুরি বাজার, কাওরান বাজার, মৌচাক মোড়, পুলিশ লাইন, নাখালপাড়া, তেজকুনি পাড়া, খিলগাঁও, পুরাতন ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, কাকরাইল, মোহাম্মদপুর, আদাবর, কল্যাণপুর, টিকাটুলি, হাটখোলা, রাজধানী সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, ধানম-ি ২৭নং রোডসহ অনেক স্থানে সৃষ্টি হয় সাময়িক জলাবদ্ধতা। গত কয়েক মাস ধরেই নগরজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। সংস্কারের অভাব ও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। বৃষ্টির পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ওই সব জায়গা। এমনিতেই ব্যবহারের অনুপযোগী রাজধানীর ৪০ ভাগের বেশি রাস্তা। রাজপথ থেকে অলিগলি সবখানেই রাস্তার বেহাল দশা। কোথাও বিশাল গর্ত। সংস্কারের অভাবে কোথাও কোথাও রাস্তা পরিণত হয়েছে ড্রেনে। তবে রাজপথ থেকে রাজধানীর অলিগলির চিত্র খুবই করুণ। সংস্কার না থাকায় দুর্ভোগের শেষ নেই নগরবাসীর। কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে রাস্তা মেরামতে পট হোলস কর্মসূচী দিয়ে লোক দেখানোর কাজ চলে প্রতি বছরই। সংস্কারের ক’দিন পরই বেহাল চিত্র ফুটে ওঠে। প্রতি বছরই এমন অভিজ্ঞতা পেতে হয় নগরবাসীর। বিশেষ করে বৃষ্টিপাত হলে নগরীবাসীর দুর্ভোগের মাত্রা যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাস্তার ওপর জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পা রাখতে গিয়ে অজান্তেই গর্ত পড়তে হয় পথচারীদের। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারটায় শান্তিনগর এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। পাশাপাশি রয়েছে ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে সৃষ্ট খোঁড়াখুঁড়ি। কর্ণফুলী গার্ডেন থেকে মালিবাগ মোড় পর্যন্ত রাস্তায় হাঁটু পানি। ফুটপাথের দোকানপাট উঠে গেছে। অনেক দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে ভিজে যাচ্ছে রিক্সযাত্রীদের পা। পানি নিচে থাকা খানাখন্দের ভয়ে পথচারীর চলাচলও কমে যায়। পানির কারণে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক সিএনজি চালিত অটোরিক্সার। রাজধানীর শান্তিনগরের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবারই বৃষ্টির সময় দোকানের ভেতরে পানি ওঠে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ফুটপাথ দিয়েও মানুষ হাঁটতে পারে না। রাস্তায় সিটি কর্পোরেশনের ময়লা-আবর্জনাগুলো পানিতে ভেসে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মালিবাগ মোড় থেকে কাকরাইল, শান্তিনগর, রাজারবাগে ফুটপাথে হকারদের পণ্যের বর্জ্যগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়। বৃষ্টি হলে এগুলো ড্রেনের মুখ বন্ধ করে দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন আবুল হোসেন। ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। নয়া পল্টন মোড় থেকে নটরডেম কলেজ পর্যন্ত পানি জমে ওঠে। ফকিরাপুলের বাসিন্দারা জানান, কয়েক ঘণ্টার মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেই এই এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি হলে এখানে হাঁটু পানি জমে যায়। রিক্সা এ সময় যেতে চায় না। দু’একটি রিক্সা পেলেও বেশি ভাড়া চায়। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় ৩-৪ ফুট পানি জমে যায়। তখন অনেক চেষ্টা করেও রিক্সা পাওয়া যায় না। পরে অনেক কষ্টে ভিজে ভিজে বাসে উঠতে হয়। বৃষ্টিতে নিউমার্কেটের এক নম্বর গেটের সামনের সড়কে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি। নিউমার্কেটের ভেতরে আংশিক এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে নিউমার্কেটের এক নম্বর গেট সংলগ্ন হাঁটার পথে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। হাঁটার পথের চেয়ে দোকানের উচ্চতা বেশি থাকায় ভেতরে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। রামপুরা ব্রিজ থেকে মৌচাক পর্যন্ত রাস্তার অবস্থাও বেহালদশা। এলাকাবাসী জানায়, গত এক মাস ধরে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। রাস্তাজুড়ে পিচ্ছিল কাদা। তৈরি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। হাঁটতে গেলেও পিছলে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন অনেক পথচারী। যানবাহনগুলোকে চলতে হয় ধীরে ধীরে। দিনভর বৃষ্টির কারণে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, গঙ্গা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ী এলাকার অধিকাংশ প্রধান নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ৪টি নদীর পানি। আর পর্যবেক্ষণাধীন ৯০টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৫০টির বৃদ্ধি এবং ৩৭টির পানি বৃদ্ধি পায়।
×