ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাকি বহু-ব্রহ্মান্ড!

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৬ জুলাই ২০১৭

নাকি বহু-ব্রহ্মান্ড!

এ র্পযন্ত আমরা একক এক নিঃসঙ্গ বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের কথা বলেছি। কিন্তু বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড নিঃসঙ্গ একক তো না-ও হতে পারে! বা এক সঙ্গে অনেকগুলো, এমনকি অসীম সংখ্যক বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড, পাশাপাশি সমান্তরালেও তো থাকতে পারে? পারবে না কেনো? এমনতরো পরিস্থিতিতে বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড’কে হয়ত ‘বহু-ব্রহ্মান্ড’ও বলা চলে। মার্কিন র্দাশনিক ও মনস্তত্ত্ববিদ উইলিয়াম জেমস সমান্তরালে স্থাপিত বা বিদ্যমান অসীম সংখ্যক বিশ্বব্রহ্মা-কে বোঝাতে, ১৮৯৫ সালে ‘মাল্টিভার্স’ নামক নতুন পরিভাষা সৃষ্টি করেন। বহুব্রহ্মা- নামক দৃশ্যকল্প বা সিনারিয়োকে আসলে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, স্ট্রিং তত্ত্ব (string theory)), ব্রেন তত্ত্ব (brain theory) ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যার প্রয়াস বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ বহু-ব্রহ্মা-ের বাস্তব সম্ভাব্যতা স্বীকৃতি পাচ্ছে এবং বিদ্যমান তত্ত্বগুলোতে যেসব অসামঞ্জস্যতা ও অব্যাখ্যেয়তা রয়েছে, সে সবের মোক্ষম সমাধান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়াও জীবনের আর্বিভাব ও বিকাশের জন্য এই যে আমাদের নিজেদের বিশ্ব-ব্রহ্মা-টিকে পরিপাটি সূক্ষ্ম মিহিভাবে সামঞ্জস্যর্পূণ বলে মনে হয়, তারও উত্তর বহুব্রহ্মা- সিনারিয়োর সাহায্যে পাওয়া সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘এ্যানথ্রোপিক প্রিন্সিপল’ অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মা- যা সে তাই, কারণ আমরা এখানে তার এই বিশেষ সংস্করণটিকে পর্যবেক্ষণের অনুমোদন পেয়েছি। আমাদের বিশ্বব্রহ্মা- যে স্থানগত মাত্রার মধ্যে অবস্থান করছে, সেই একই মাত্রার স্থানে সমান্তরালে একাধিক বা বহুব্রহ্মা- থাকতে পারে বৈকি! তবে এমতাবস্থা থাকবে আমাদের মহাজগতীয় দিগন্তবৃত্তের সীমানা ছাড়িয়ে, দূরে। তারা এমনকি কৃষ্ণ-বিবরের অভ্যন্তরেও থাকতে পারে বা থাকতে পারে অপ্রবেশগম্য মাত্রার স্থানে। তারা আমাদের অতি কাছেও থাকতে পারে, বা এমনকি আমাদের স্থানগত মাত্রার অভ্যন্তরে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে বন্দীদশায়ও থাকতে পারে বা ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আমাদেরটির ওপরে চেপে বসে থাকতে পারে। কোন কোন সমান্তরাল বহুব্রহ্মা-ের, আমাদের বিশ্বব্রহ্মা- থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক ধ্রুবক ও প্রাকৃতিক নিয়মবিধি থাকতে পারে। কাজেই আসলে আমরা কেবল আমাদের নিজেদের বিশ্বব্রহ্মা-কেই অনুভব করতে পারব এবং কখনই বহুব্রহ্মা-কে দেখার বা তার/তাদের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই, হয়ত। এর অর্থ, বহু-ব্রহ্মা-ের অস্তিত্ব প্রমাণ করার প্রমাণ আমরা করতে বা দিতে পারব না। ফলে বহুব্রহ্মা- নামক ধারণাটি উপপ্রমেয় বা হাইপোথেটিকল থেকে যাবে। তবে বহুব্রহ্মা- নিশ্চিতভাবেই সময়ের ওপরেও নিহিতভাবে প্রভাব ফেলবেই ফেলবে। আর এমনও হতে পারে যে, সময় সম্বন্ধে এবং সময়ের তীর চিহ্নিত তথা একমুখী দিক (এ্যারো অব টাইম) নিয়ে যে উপলব্ধি বা হৃদয়ঙ্গমবোধ আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে, সেটি আসলে সময় সম্বন্ধে সার্বিক ধারণার স্থানীয়করণ ছাড়া আর কিছু নয়। লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক
×