ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন মূল্যায়নে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৬ জুলাই ২০১৭

নতুন মূল্যায়নে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে রবিবার। পরীক্ষায় কৃতকার্য সব শিক্ষার্থীকে আমাদের অভিনন্দন। নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নের প্রভাব পড়েছে পরীক্ষার ফলে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। পাসের হার কমার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ হওয়াটাই মুখ্য, পাসের হার নয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে এবং এই বয়সে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন দেয়া। পাস-ফেল নিয়ে না ভেবে শিক্ষার মান বাড়াতে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী পাসের হার কমার তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, খাতা সঠিক মূল্যায়ন করার ফলে এটা হয়েছে। পাসের হার কম হওয়া ইতিবাচক মনে করছেন তিনি। আটটি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে এবার মোট ১১ লাখ ৬৩ হাজার ১৭০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে আট লাখ এক হাজার ২৪২ জন। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী এ বছর সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। সব শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে এ বছর। অন্যদিকে কোন শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। ফল বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, চারটি শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজীতে পাসের হার কমে গেছে এবং বহু নির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) অংশে অনেকেই পাস করতে পারেনি। লক্ষণীয় হলো, ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীদের ফল তুলনামূলকভাবে ভাল হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের ৭৪ শতাংশই ঢাকা মহানগরের। এ থেকেই রাজধানীর কলেজগুলোর শিক্ষার মানের অগ্রসরতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অন্যভাবে বলা যায়, ঢাকার সঙ্গে শহরের বাইরের কলেজগুলোর ব্যবধান প্রকট হয়ে উঠেছে। এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবনের বড় ধরনের একটি বাঁক ফেরার কেন্দ্র। এ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর একজন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। কাজেই ভাল ফলের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকম-লীসহ সংশ্লিষ্ট সবার যতœবান ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে অনুত্তীর্ণদের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি আনার চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করা দরকার। নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে পাসের ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ক্রমাগত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার গুণগতমান কতটা বেড়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে থাকে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে পরীক্ষার উত্তরপত্র ‘উদারভাবে’ মূল্যায়নের ফলে বছরের পর বছর পাসের হার ও ভাল ফলের এমন দৃষ্টান্ত দৃশ্যমান হচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা, যারা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে। শিক্ষার উন্নত গুণগতমান সে কারণে জরুরী তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষার মান বাড়ানোর কথা আমরা বারবার বলে আসছি। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার মানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সে লক্ষ্যে প্রয়োজন মানসম্মত শ্রেণীকক্ষ, যা নির্ভর করে মানসম্পন্ন শিক্ষকের ওপর। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিত করা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। দেশের সেই ভবিষ্যত নাগরিকদের গড়ে তোলার দায়িত্ব যাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে তাদের মান হতে হবে প্রশ্নাতীত। পরীক্ষার ফলের সঙ্গে শিক্ষার মানের বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষার মানের উন্নতি হলে পরীক্ষার ফলেরও উন্নতি হবেÑ এটা সাধারণ হিসাব। কিন্তু রাতারাতি শিক্ষার মান বাড়ানো অসম্ভব। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
×