ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল

চার নম্বরে থাকতে চায় আরামবাগ

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৫ জুলাই ২০১৭

চার নম্বরে থাকতে চায় আরামবাগ

রুমেল খান ॥ কোথায় যাচ্ছে দেশের ফুটবল? এমন প্রশ্নে চোখের সামনে ভেসে উঠবে ব্যর্থতার চিত্র। কেন এমন হলো? এখান থেকে উত্তরণের উপায় কী? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়ত ক্রীড়া সংগঠক থেকে শুরু করে ফুটবল অভিভাবক সবারই জানা। তবুও কোন এক অজানা কারণে সবারই হাত গুটিয়ে থাকা। ফুটবলার তৈরিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তবে তারা একাই দায়ী নয়। দায়ভার বর্তায় দেশের পেশাদার ক্লাবগুলোর ওপরও। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই কিনা কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছেন দিন বদলের। যেমনটা দেখছে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। দেশের ফুটবলের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই কাজ করছে ক্লাবটি। রুগ্ন ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে এবার প্রিমিয়ার লীগের মাধ্যমে ক্লাবটি উপহার দিতে চায় একাধিক প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার। এমনই প্রত্যাশা ক্লাবটির। পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য গত মৌসুমের সফলতাকে ছাপিয়ে এবার আরও ভাল ফল উপহার দেয়া। এবারের লীগে চোখ রাখছে শীর্ষ চারে। দলের ম্যানেজার এজাজ জাহাঙ্গীর জানান, মারুফুল হকের অধীনে ভাল প্রস্তুতি সেরেছে আরামবাগ। টিম স্পিরিট দলটির মূলশক্তি। এছাড়া প্রস্তুতি ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধা ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে জয় আত্মবিশ্বাসী করছে ফুটবলাদের। এবারের মৌসুমে শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি আরামবাগের। এবারের ফেডারেশন কাপে ভাল খেলেও গ্রুপ পর্বই উৎরাতে পারেনি তারা। বিদেশী খেলোয়াড়ের অভাব ভুগিয়েছে। তবে প্রিমিয়ার লীগে ব্যবধান গড়ে দেন সাধারণত বিদেশীরাই। সেটি মাথায় রেখে লীগ শুরুর আগেই পরীক্ষিত তিন নাইজিরিয়ান বুকোলা, ইকাঙ্গা ও কিংসলেকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। দেশী ও বিদেশীর কম্বিনেশনে বড় স্বপ্ন আরামবাগের চোখে। ম্যানেজার এজাজ জানিয়েছেন ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে আছেন মারুফুল হক। তবে সহকারী কোচ সেন্টুর অধীনে চলছে প্রস্তুতি। লীগে ৩০ জুলাই আরামবাগের প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ আরেক জায়ান্ট কিলার রহমতগঞ্জ। দ্বিতীয় সারির তকমা লাগানো ক্লাবটিই গত মৌসুমে চমকে দিয়েছিল সব বড় বড় দলগুলোকে। লীগের মাঝপথে এসে হোঁচট না খেলে হয়ত তৈরি হতো নতুন কোন ইতিহাস। ১২ দলের মধ্যে ষষ্ঠ হয় তারা। তবে সেই হতাশার গল্পের পৃষ্ঠা না উল্টে এবার তাদের প্রস্তুতিটা চলছে সাফল্যের নতুন কাব্যের জন্য। এবারের দলবদলে বেশ ভাল মানের ফুটবলার দলে ভিড়িয়েছে আরামবাগ। তবে বড় দানটা তো তারা ইতোমধ্যেই মেরেছে দেশের অন্যতম সেরা কোচ মারুফুল হককে চুক্তিবদ্ধ করে। দায়িত্ব নেয়ার পরই মারুফুল জানিয়েছিলেন এবারও তারুণ্যেই ভরসা করবে ক্লাবটি। গত বছরের ২৮ জানুয়ারি আবারও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে উন্নীত হয় আরামবাগ। এছাড়া সবাইকে চমকে দিয়ে ফেডারেশন কাপ ফুটবলে হয় রানার্সআপ। তারা এই আসরে ফাইনালে খেলে পাক্কা ১৫ বছর পর। যদিও ফেডারেশন কাপের তিন ফাইনালে উঠেও (১৯৯৭, ২০০১ ও ২০১৬) জিততে পারেনি দলটি। অথচ ওই টুর্নামেন্টে ফাইনালের আগ পর্যন্ত তারাই ছিল একমাত্র অপরাজিত দল। আসরের সবচেয়ে আলোচিত দল ছিল তারাই। আবাহনী শিরোপা জিতলেও এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি নজরকাড়া দল ছিল আরামবাগই। সেই সঙ্গে একটি সফল দল হিসেবে পরিগণিত হয় ‘দ্য রাইজিং স্ট্রেন্থ’ আরামবাগ। অথচ এই আসরে তাদের উত্থান কোন দৈব ঘটনা বা ‘ফ্লুক’ ছিল না। রীতিমতো যোগ্যতা প্রমাণ করেই এই আসরের ফাইনালে উন্নীত হয়েছিল দলটি। ওই আসরে তাদের সাফল্যের কারণ ছিল সাত। প্রথমত : তাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত : ভালমানের খেলোয়াড় সংগ্রহের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয়। তৃতীয়ত : জাতীয় দলের সহকারী ও অভিজ্ঞ কোচ সাইফুল বারী টিটুকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া। চতুর্থত : ভাল বিদেশী ও স্থানীয় ফুটবলার সংগ্রহ। পঞ্চমত : খেলোয়াড়দের টানা অনুশীলন করানো। ষষ্ঠত : খেলোয়াড়কে সাফল্যের জন্য উজ্জীবিত করা এবং সপ্তমত : খেলোয়াড়দের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের লড়াকু হিসেবে তৈরি করা। দেশের ফুটবলে তেমন সাফল্য না থাকলেও বেশ পুরনো দল আরামবাগ। তাদের জন্ম সেই ১৯৫৮ সালে। প্রতিষ্ঠার পরেই তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে নাম এন্ট্রি করে আরামবাগ। ১৯৬৯ সালে তারা দ্বিতীয় বিভাগে ওঠে। তারপর থেকে আরামবাগ ক্লাবকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুধুই এগিয়ে যাওয়ার পালা। ১৯৭৯ সালে প্রথম বিভাগ লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। প্রিমিয়ার বিভাগ লীগ শুরু হওয়ার পর থেকে আরামবাগ ক্লাব প্রায় প্রতিবছরই খেলেছে। পয়েন্ট টেবিলে বরাবরই চতুর্থ কিংবা পঞ্চমস্থানের বাইরে তারা কখনও যায়নি। তাদের বড় শিরোপা জয় তিন, প্রতিটিই বিদেশে। ১৯৯৫ ও ২০০১ সালে সিকিম গবর্নস কাপ এবং ২০০১ সালে ভুটানে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া রানার্সআপ হয় ১৯৮১ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত ‘আনফা কাপ’, ১৯৯৭ সালে সিকিমে অনুষ্ঠিত চিফ মিনিস্টার গোল্ডকাপ এবং ভারতে অনুষ্ঠিত নাগজি গোল্ডকাপেও। আরামবাগ অনেক দেশসেরা খেলোয়াড় সৃষ্টি করেছে। জাতীয় দলের অধিনায়ক আলফাজসহ ফয়সাল, টিটু, আরমান, আপেল, ডন আরামবাগের হয়েই খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন। এ তালিকায় আরও নাম আসবে শোয়েব, বিজন, আসিফ, প্রদীপ, বিদ্যুত, তুষার, রক্সির মতো প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ের। আরও আছেন মানিক, আহমেদ, সালাহউদ্দিন (কাজী সালাহউদ্দিন নয়) প্রমুখ। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার সমষ্টিগত ফলই সাফল্য লাভের পূর্বশর্ত। আর লক্ষ্য যদি নির্দিষ্ট থাকে, তাহলে সাফল্য আসতেও বাধ্য। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ এমন সাফল্য এবারের আসন্ন লীগে পাবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা ক্লাবটির ভক্ত-সমর্থক-অনুরাগীদের।
×