ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গর্ভবতী মায়ের ভ্রমণ

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৫ জুলাই ২০১৭

গর্ভবতী মায়ের ভ্রমণ

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদ। মুসলিম উম্মাহর সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জীবনে আসে অতি আনন্দময় ঈদুল ফিতর। এই ঈদ মা-বাবা, ভাই-বোন সকলে মিলে একসঙ্গে উদযাপন করে, সাধ্যমতো চেষ্টা করে আনন্দ করতে। গর্ভবতী মায়েরাও বাদ যায় না এর থেকে। তারাও মাতে ঈদ-আনন্দে। গর্ভবতী মা’দের বেশি দূর যাত্রা করা নিরাপদ নয়। তারা বাস-ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমার ইত্যাদি যানবাহনে করে বাড়ি যান ঈদ করতে, সকলের সঙ্গে মিলিত হতে। গর্ভকালীন সময়কে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমভাগ অর্থাৎ গর্ভকালীন প্রথম তিনমাস ভ্রমণ করা নিরাপদ নয়। এই সময়ে যেসব স্থানে জনসমাগম বেশি অর্থাৎ বাজার, মার্কেট, সিনেমাহল, বিয়ে-বাড়ি ইত্যাদি স্থানে কম যাওয়া উচিত, কেননা যেখানে লোক সমাগম বেশি সেখানে বিভিন্ন খারাপ ধরনের ভাইরাস বেশি রয়েছে। আর প্রথম তিনমাস এসব ভাইরাস অর্থাৎ ঞড়ীড়ঢ়ষধংসড়ংরং, ড়ঃযবৎ (ংুঢ়যরষষরং, াধৎরপবষষধ ুড়ংঃবৎ, ঢ়ধৎাড়ারৎঁং ই১৯), জঁনবষষধ, ঈুঃড়সবমধষষড়ারৎঁং ধহফ ঐবৎঢ়বংব ইত্যাদি দিয়ে ইনফেকশন হয় এবং তা গর্ভফুলের মাধ্যমে বা প্রসব চলাকালীন সময়ে শিশু ও নবজাতকের মধ্যে পরিচালিত হয়। এই সংক্রমণ শিশুর মধ্যে হয় এবং গর্ভস্থ শিশু সাধারণত ইন্ট্রাইউটেরাইন গ্রোথ রেস্ট্রিকশন, মাইক্রোকেফালী, ক্যালসিফিকেশন, কনজাংটিভাইটিস, ইত্যাদি নিয়ে আসে। তাই সংক্রমণের ফলে অসুস্থ শিশুর জন্ম হয়, এমনকি শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং গর্ভকালীন প্রথম তিনমাস মায়েদের ভ্রমণ একেবারই নিরাপদ নয়। এ ছাড়া ঈদের সময় রাস্তাঘাটে থাকে প্রচ- ভিড়। যে কোন সময়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সুতরাং গর্ভবতী মায়েরা অত্যন্ত সাবধানে ভ্রমণ করবেন। মায়েরা বেশিক্ষণ ধরে ভ্রমণ করবেন না। বাস-স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকবেন না যাতে গরম, ধুলায় গর্ভবতী মা বেশি ক্লান্ত না হয়ে পড়েন। বাসের মধ্যস্থানে বসতে হবে তাকে, জানালার পাশে সিট হলে ভালো হয়। গর্ভকালীন প্রথম তিনমাস বমি বমি লাগা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি থাকে, তখন জানালার পাশে ভ্রমণ করলে ভাল হয়, এ সময়ে বমি নিরোধক বড়ি খেলেও ভাল। এ ছাড়া সঙ্গে শুকনো খাবার, পানীয় থাকতে হবে। ট্রেনে, স্টিমারে ভ্রমণ হয় সাধারণত আরামদায়ক। গর্ভকালীন দ্বিতীয় তিনমাস অর্থাৎ চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ মাসে মায়েদের শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভাল থাকে। তবু তারা হয় ক্লান্ত। প্রয়োজন পর্যাপ্ত খাবার, আরামদায়ক পোশাক, পানীয়, বসার সুব্যবস্থা, বিশ্রাম এবং সময়মতো বাথরুমের সুব্যবস্থা। না হলে হতে পারে ইউরিন ইনফেকশন, এসিডিটি, পায়ে ক্র্যাম্পিং ব্যথা ইত্যাদি। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা হয় শেষ তিন মাসে। এ সময় গর্ভবতী নারীর শরীর ভারি হয়ে যায়। ভ্রমণ করতে হবে ট্রেন বা স্টিমারে। ৩২ সপ্তাহের পর বিমানে পরিবহন করা নিষেধ। এছাড়া গর্ভকালীন সময়ে এনিমিয়া, হার্ট ডিজিজ, রেস্পিরেটরী ডিজিজ, বা ভাঙ্গা হাড় থাকলে বিমানে ভ্রমণ করা উচিত নয়। গর্ভকালীন চেকআপের সময় যদি দেখা যায় মায়ের হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, গর্ভফুল নিচে থাকা, পূর্বের প্রিম্যাচিওর ডেলিভারী ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে তার ভ্রমণের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যতটা সম্ভব ভ্রমণ এড়াতে হবে। এজন্য পরিবারের সবাইকে সচেতন হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ভ্রমণকালীন সময়ে গর্ভকালীন পরিচর্যা, ওষুধ, বিশ্রাম ইত্যাদির কথা। কোন কিছুই যাতে বাদ না পড়ে। সকল গর্ভবর্তী মায়েদের জন্য রইল ঈদ শুভেচ্ছা। ডাঃ ইসরাত জাহান (ইলা) সহকারী অধ্যাপক, গাইনী বিভাগ, সোহরাওয়ারর্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।
×