ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইইডিসিআরের নজরদারিতেও ধরা পড়েনি

চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণ বের করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৫ জুলাই ২০১৭

চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণ বের করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা

মিখিল মানখিন ॥ হঠাৎ করে দেশে চিকুনগুনিয়া প্রাদুর্ভাবের কারণসমূহ বের করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রোগ নজরদারি ব্যবস্থাতেও ধরা পড়েনি। গবেষণামূলক প্রতিবেদন না থাকায় অনুমাননির্ভর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। সংশ্লিষ্টদের অনেকে চিকুনগুনিয়াকে নতুন রোগ হিসেবে তুলে ধরছেন। অথচ ২০১২ সালে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় অনেক চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়। তবে ওই বছর রোগটি সীমিত এলাকাতে শুরু হয়ে স্বল্প সময়েই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। রোগ নজরদারি করতে নতুন পদ্ধতি চালু করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। পদ্ধতির নাম দেয়া হয় ‘মুঠোফোন ভিত্তিক রোগ নজরদারি ব্যবস্থা’। গত ২০১২ সালে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হওয়া এ পদ্ধতি স্বল্প সময়ে কম ব্যয়ে দেশে রোগের আচরণ সম্পর্কে ধারণা পেতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর সহায়তায় মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন বয়সী (২০ বছরের বেশি) লোকজনের সঙ্গে স্বাস্থ্য অবস্থা সম্পর্কে আলাপ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। নির্ধারিত প্রশ্নসমূহের মাধ্যমে বের করে আনা হবে স্বাস্থ্য তথ্য। বছরে বারবার এ ধরনের জরিপ চালানোর কথা ছিল। এতে নির্দিষ্ট কোন এলাকা, মানুষ ও রোগের পুরো চিত্র বেরিয়ে আসে। আর সেই অনুযায়ী দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন বৃদ্ধি এবং রোগ মোকাবেলা করতে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে সরকার। কিন্তু আইইডিসিআর’র এই প্রকল্পটি এক বছর আগেই আলোচনার বাইরে চলে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত একটি ভাইরাসের নাম। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী মশাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহন করে। এটি নতুন কোন ভাইরাস নয়। ১৯৫২ সালে প্রথম তানজানিয়ায় রোগটি শনাক্ত হয়। এখন বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে রোগটি দেখা যায়। ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে এই রোগটির প্রকোপ প্রথম দেখা যায়। তবে এর আগে এই রোগীটি বাংলাদেশে অন্য নামে পরিচিত ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমার কাছে চিকুনগুনিয়া একটি নতুন নাম। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় চিকুনগুনিয়া রোগের ধরন ও গতিবিধি বুঝতে সময় লেগেছে। তবে প্রাদুর্ভাবের কয়েকদিন পরই পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে সিটি কর্পোরেশন। একই সুরে কথা বলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কমেছে। মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন প্রকার মশা চিহ্নিত করে তাদের প্রকৃত প্রজননস্থান ও বাহিত ভাইরাস এবং তাদের দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহ নিয়ে গবেষণা করতে হবে। মশা বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, দেশে ১২৩ প্রকারের মশা রয়েছে। তবে চার থেকে পাঁচ প্রকারের মশাই বেশ আলোচিত। বাকি অনেক মশার ক্ষতিকারক দিক ও গতিবিধি এখন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা দরকার। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে প্রাদুর্ভাব হওয়া সংক্রামক রোগসমূহ মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতাসমূহ তাই বলে দিচ্ছে। বর্তমানে রাজধানীর ২ হাজার বাসায় গিয়ে বিভিন্ন প্রকার মশার নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। পরবর্তীতে এই পর্যবেক্ষণমূলক কাজের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
×