ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সেই বিচারপতি জয়নুল আবেদিনের আগাম জামিন বহাল

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৫ জুলাই ২০১৭

সেই বিচারপতি জয়নুল আবেদিনের আগাম জামিন বহাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীনের আগাম জামিন বহাল রেখেছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হতে পারেন এ আশঙ্কায় দৈনিক জনকণ্ঠের দুটি প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ১০ জুলাই এ আগাম জামিন নিয়েছিলেন সাবেক এ বিচারপতি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা লিভ টু আপীল আবেদনের নিষ্পত্তি সোমবার আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপীল বেঞ্চ হাইকোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারপতি জয়নুলের আগাম জামিন বহাল রাখেন। একইসঙ্গে দ্রুত রুল নিষ্পত্তিরও নির্দেশ দেন আপীল বিভাগ। আদালতে জয়নুল আবেদীনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আগাম জামিন বাতিলের পাশাপাশি হাইকোর্টের আদেশও বাতিল চেয়েছিলাম। তবে আদালত আমাদের লিভ টু আপীল নিষ্পত্তি করে রুল নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত আগাম জামিন বহাল রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, দ্রুত রুল নিষ্পত্তির করতেও নির্দেশ দিয়েছে আপীল বিভাগ। আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করতেই দুদককে চিঠি দিয়েছিল সুপ্রীমকোর্ট। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নির্দেশেই ওই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে দুদকের এ সংক্রান্ত এক নথিতে। সুপ্রীমকোর্টের চিঠির পর দুদক জানিয়েছিল ওই চিঠির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে গত ৫ ও ১৭ জুন ‘সাবেক বিচারপতির দুর্নীতি তদন্তে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসনের বাধা!’ এবং ‘সাবেক এক বিচারপতির দুর্নীতি তদন্তে থেমে নেই দুদক’ শিরোনামে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন যুক্ত করে আগাম জামিনের আবেদন করেন সাবেক বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন জনকণ্ঠে এ দুটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে তিনি গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১০ জুলাই বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। একইসঙ্গে আপীল বিভাগের সাবেক এ বিচারপতিকে কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে আদেশে। আবেদনে ঢাকা জেলার ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করে দুর্নীতি দমন কমিশন। গত মঙ্গলবার দুদকের আবেদন শুনানি নিয়ে আপীল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত কোন আদেশ না দিয়ে তা নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। সোমবার সেই আবেদনের শুনানি হয়। এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায় নিয়ে গত ৯ জুলাই সংসদে ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের প্রসঙ্গটিও আসে। জনকণ্ঠের ওই প্রতিবেদনগুলো উদ্বৃত করে প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করতে গিয়ে এ বিষয়টি তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ওই চিঠি দেয়ার মাধ্যমে বিচারপতি এস কে সিনহা ন্যায়বিচারের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। যা দ-বিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি সুপ্রীমকোর্টের নাম শুধু ব্যবহারই করেননি, তিনি সুপ্রীমকোর্টের প্যাড ব্যবহার করেছেন, যদিও এটা ছিল তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’ উল্লেখ্য, মোঃ জয়নুল আবেদীন ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২০০৯ সালে আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসরে যান তিনি। আলোচিত এ বিচারপতি ২০০৪ সালে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত বলে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টাও করেছিলেন বলে জানা গেছে। আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয় দুদক। দুদকের দেয়া নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি জয়নুল আবেদীন ২০১০ সালের ২৫ জুলাই হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করেছিলেন। রিটের ওপর শুনানি গ্রহণের পর বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দেন। ওই সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রিট খারিজের ফলে এখন দুদকের দেয়া নোটিসের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে আর কোন আইনগত বাধা নেই। সম্পদ বিবরণী চেয়ে গত ১৮ জুলাই দুদক বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীনকে নোটিস দিয়েছিল বলে তিনি জানান। রিট দায়েরকারীর আইনজীবী আহসানুল করিম ওই সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে দুদক সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিস দেয়। ওই নোটিস দেয়ার প্রক্রিয়া আইনানুগ হয়েছে বলে আপীল বিভাগের সিদ্ধান্ত রয়েছে। আপীল বিভাগের সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের জন্য মানা বাধ্যকর। এ যুক্তিতে আদালত রিটটি উপস্থাপন করা হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দেন।
×