ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএনও তারিক সালমান গ্রেফতার প্রসঙ্গ ॥ বরিশাল ও বরগুনার ডিসি প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ জুলাই ২০১৭

ইউএনও তারিক সালমান গ্রেফতার প্রসঙ্গ ॥ বরিশাল ও বরগুনার ডিসি প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরগুনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনের বরিশালে নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার’ কারণে দুই জেলা প্রশাসককে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি মামলাসহ ওই ইউএনওকে হয়রানির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি একটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান সোমবার বলেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত আনা হয়েছে। তাদের জায়গায় নতুন দুইজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর পিএসের দায়িত্ব পালন করে আসা হাবিবুর রহমানকে জেলা প্রশাসক করে পাঠানো হয়েছে বরিশালে। আর বরগুনার জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন পাবনা জেলা পরিষদের সিইও মোখলেসুর রহমান। দুই ডিসি প্রত্যাহারের কারণ জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক খান বলেন, তারা যে দায়িত্বে ছিলেন, তা পুরোপুরি পালন করতে পারেননি, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি। বিসিএস ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা বশিরুল আলম বরগুনার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন বরিশালের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়া গাজী মোঃ সাইফুজ্জামানও একই ব্যাচের কর্মকর্তা। তার বাড়ি জামালপুরের বকশীগঞ্জে। মোজাম্মেল হক খান বলেন, জেলা প্রশাসকের পদায়ন বা প্রত্যাহার একটি স্বাভাবিক ঘটনা, কারণ চাকরিটাই বদলির। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটু বলার আছে, আমাদের তারিক সালমন বরগুনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। তার বিষয়ে একটি মামলা হয়েছিল আদালতে। সেই মামলায় জামিনযোগ্য একটি ধারায় জামিন হয়নি এরকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এবং পরবর্তীতে জামিন হয়েছে। তার সিনিয়র ছিল জেলা প্রশাসক দুইজন, তারা তাকে যেভাবে গাইড করার কথা ছিল এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে যেভাবে বিষয়টি অবহিত রাখা উচিত ছিল, সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা আমার মনে হয় যে অবহেলা অথবা ব্যর্থ হয়েছে। দুই ডিসিকে অপসারণের এই সিদ্ধান্তে অন্য জেলার প্রশাসকরাও সতর্ক হবেন মন্তব্য করে মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের একটু স্মরণ করিয়ে দেয়া যে এই ধরনের কাজে আরও বেশি প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দেখানো দরকার এবং যথাসময়ে এ ব্যাপারে সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা দরকার। এটি একটা লেসন হতে পারে অন্য জেলা প্রশাসকদের জন্য। তারিক সালমন বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপিয়েছিলেন’ অভিযোগ করে গত ৭ জুন মামলা করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। ওই মামলায় সমন জারির প্রেক্ষাপটে ১৯ জুলাই তারিক সালমন আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মোঃ আলী হোসাইন। একই বিচারক দুই ঘণ্টা পর ইউএনও তারিকের জামিন মঞ্জুর করেন। আগৈলঝাড়া উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশুদিবস-২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই শিশুর আঁকা দুটি ছবি ব্যবহার করে স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রটি তৈরি করা হয়েছিল বলে তারিক সালমনের ভাষ্য। তাকে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ধরে নেয়ার ছবি প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিস্মিত হয়েছেন জানিয়ে তার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ছবিতে বিকৃত করার মতো কিছু তারা দেখেননি বরং এটি একটি ‘সুন্দর কাজ’। এই সমালোচনা আর ক্ষোভের মধ্যে শুক্রবার ওবায়েদউল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তারিক সালমনকে নাজেহালের দিন বরিশালের আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের ছয় সদস্যকে শনিবার সরিয়ে দেয়া হয়। এই প্রেক্ষাপটে রবিবার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়েদ উল্লাহ সাজু বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবিটি যে শিশুর আঁকাÑ তা তার জানা ছিল না। এদিকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ ওঠার পর বরিশালের জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকেও তারিক সালমনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সোমবার সাংবাদিকদের জানান, ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো কিছু তারা পাননি। এ কারণে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়েছে। তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা ও তার পরের ঘটনাপ্রবাহে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেছে কিনাÑ তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে বলেও জানান তিনি। প্রত্যাহার হওয়া দুই ডিসি মঙ্গলবার ডিসি সম্মেলনে যোগ দেবেন কিনা জানতে চাইলে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, কেবিনেট তাদের আহ্বান জানিয়েছে। আদেশ হয়ে গেলে সে আসবে কিনাÑ এটা তাদের বিষয়। এর সিদ্ধান্ত কেবিনেট নেবে। তবে এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক না এসে ভারপ্রাপ্ত কেউ তার বদলে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি। তারিক সালমনের ঘটনা উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক খান বলেন, এরকম একটা পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যই নতুন করে দুইজন জেলা প্রশাসককে পদায়ন করেছি আমরা। যাদের পদায়ন করা হয়েছে তারা ফিটলিস্টে ছিলেন। তারা যোগ্য কর্মকর্তা, আশা করছি, তারা সেখানে দায়িত্বশীল আচরণ করবেন এবং জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে গিয়ে সফলতার পরিচয় দেবেন। মানববন্ধন স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার সাবেক (বর্তমানে বরগুনা সদর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী তারিক সালমানকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে বরিশাল জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামানের বদলির আদেশ স্থগিত ও পুনঃবিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিকেলে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনের সড়কে বরিশালের সর্বস্তরের জনগনের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচীতে প্রথমে পুলিশ বাধা প্রদান করলেও পরে আর বাধা দেয়নি। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে মোঃ শাহাজাদা হিরা বলেন, জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান স্যার নির্দোষ।
×