ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাল সনদে চাকরি, লেনদেনে মোটা অঙ্কের টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৫ জুলাই ২০১৭

জাল সনদে চাকরি, লেনদেনে মোটা অঙ্কের টাকা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মণিরামপুরের মাহমুদকাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদে চাকরি মিলেছে হারুনার রশীদ নামে এক ব্যক্তির। জাতীয় পরিচয়পত্র ও এসএসসি পরীক্ষার সাল হিসেবে হারুনের বয়স ৩৫-৩৬ বছর হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্মতারিখ জাল করে জন্মসনদ, অষ্টম শ্রেণীর সনদ তৈরি করিয়ে চাকরিটা বাগিয়েছেন তিনি। আর হারুনের এ কাজের সহযোগিতায় ছিলেন টেংরামারী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রভাষচন্দ্র। হারুন ১৯৯৬ সালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও মোটা টাকা পেয়ে প্রধান শিক্ষক তার বয়স কমিয়ে অষ্টম শ্রেণী পাসের সনদপত্র দিয়েছেন। এসব জালিয়াতি করে চাকরিটা পেতে হারুনকে প্রায় ১১ লাখ টাকা গুনতে হয়েছে বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। হারুনার রশীদ স্থানীয় মাহমুদকাটি গ্রামের আসতুল্লা মোল্লার ছেলে। সম্প্রতি মণিরামপুরে ৪৫টি সরকারী প্রাইমারি স্কুলে দফতরি কামপ্রহরী নিয়োগে তিনি মাহমুদকাটি প্রাইমারি স্কুলে নিয়োগ পেয়েছেন। এদিকে ভুয়া সনদে হারুনের চাকরি মেলায় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। এর বিচারের দাবিতে নিয়োগবঞ্চিত স্কুলের দাতা সদস্য পরিবারের এক সদস্য আলম বিভিন্ন দফতরে অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রাপ্ত কাগজপত্রে দেখা যায়, ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী হারুনের জন্ম ১৯৮২ সালের ১৮ জুলাই। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (এনআইডি) ৪১১৩৭১৬৮৩৫০৪। ১৯৯৬ ও ৯৭ সালে এ হারুন স্থানীয় টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে দুই দফা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করতে পারেননি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী হারুনের বর্তমান বয়স প্রায় ৩৫ বছর। আর এসএসসি পরীক্ষার সাল হিসাব করলে তার বয়স দাঁড়ায় প্রায় ৩৭ বছর। হারুন যে ১৯৯৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন, এ তথ্য তার সহপাঠী বর্তমান পল্লী চিকিৎসক ওয়াহিদসহ অনেকেই নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, হারুন একটি চক্রের সাহায্যে তার জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে তাতে মাস ও তারিখ ঠিক রেখে ১৯৮২ সালের জায়গায় ১৯৮৭ বসিয়ে জন্মসনদ, স্কুল সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন। এসব কাগজপত্র তিনি ঠিকঠাক করে রেখেছিলেন ২০১৫ সালে। তাকে সহযোগিতা করেছেন টেংরামারী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রভাষচন্দ্র, তৎকালীন খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুনসুর আলী ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কৃষ্ণগোপাল। মাহমুদকাটি সরকারী প্রাইমারি স্কুলের নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থী স্কুলের দাতা সদস্য পরিবারের সদস্য আলম জানান, ২০১৫ সালে একবার এ পদে নিয়োগের কথা ছিল। হারুনের সঙ্গে তিনিও সে সময় ওই পদে আবেদন করেন। তখন হারুন চাকরির আশায় এসব জাল কাগজ তৈরি করেছিলেন। পরে অবশ্য নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেইবার হারুনের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘এবার নিয়োগের সময় আমি ইউএনও মোহাম্মদ অতুল ম-লের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলনে, দাতা হিসেবে আমারই চাকরিটা হবে। কিন্তু তিনি নয় লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরিটা হারুনকে দিয়েছেন।’ এ ব্যাপারে টেংরামারী সম্মিলনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রভাষচন্দ্র বলেন, ‘এসব অফিস সহকারী লিখে আনে। আমি শুধু স্বাক্ষর করি।’ হারুন তো ১৯৯৬ সালে আপনার স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন, তাহলে বয়স কমিয়ে তাকে কিভাবে সনদ দিলেন? এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘কেউ আমার স্বাক্ষর জালও করতে পারে।’ জানতে চাইলে আবেদন যাচাই-বাছাই ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মাহমুদকাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ঝরনা রানী মিত্র বলেন, ‘হারুন স্কুলে এসেছে। তাকে এখনও নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি। তাছাড়া তাকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করতে দেয়া হয়নি।’ নৈশপ্রহরী নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি মণিরামপুরের সদ্য বিদায়ী ইউএনও মোহাম্মদ অতুল ম-ল বলেন, ‘সময় কম থাকায় সবকিছু যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে নিয়োগপত্র দেয়ার কথা। যদি কাগজপত্রে অনিয়ম থাকে, তাহলে তখন তা ধরা পড়বে।’
×