ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৫ জুলাই ২০১৭

ঢাকার দিনরাত

ব্যক্তির কারণেই কখনো কখনো ঢাকা কলঙ্কিত হয়ে ওঠে। সেই কলঙ্ক ঘোচাতে অনেক সময় বড্ড দেরি হয়ে যায়। কয়েক বছর আগে পল্লবীর ডিওএইচএসের একটি ডাস্টবিন থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল গৃহকর্মী আদুরীকে। খবরটি সে সময়ে সাড়া ফেলেছিল। গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান যে নির্যাতন চালাতেন আদুরীর ওপর তা শিউরে ওঠার মতোই। এমন নির্যাতন ঢাকার আরও অনেক পরিবারে ঘটে না, সেকথা কি আমরা জোর দিয়ে বলতে পারব? সে যাক, সাধারণত এ ধরনের নির্যাতনের বিষয়টি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাপা পড়ে যায়। এক্ষেত্রে তা হয়নি বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির কারণেই। নির্যাতিতা আদুরীর পক্ষে মামালা লড়েছে এই সমিতি এবং শেষ পর্যন্ত বিচারে রায় পাওয়া গেছে। অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। এটি প্রথম এবং নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক। আদালতের পর্যবেক্ষণে যথার্থই বলা হয়েছে, এ ধরনের নির্যাতন সমাজের সবাইকে কলঙ্কিত করেছে। বিলম্বিত বোধোদয় অবশেষে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সমন্বিত সভা হয়েছে যেখানে মন্ত্রী, দুই মেয়র, চিকিৎসক, ব্যাধি-বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তবে শনিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কর্তাব্যক্তিদের কণ্ঠে প্রায় একই সুর শোনা গেছে। মারাত্মক ভাইরাস বহনকারী মশা নিধন এবং প্রায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন একটি বিপজ্জনক রোগ নিয়ন্ত্রণÑ এ দুটি বড় কাজ যাদের ওপর ন্যস্ত তারা যখন একই সুরে কথা বলেন, তখন আমজনতার সেটি ভালোভাবে নেয়ার কথা নয়। একদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, অপরদিকে সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষ। মানুষের ভোগান্তি এবং অসহনীয় কষ্ট এখানে বিশেষভাবে বিবেচনার বিষয়। কর্তৃপক্ষ সেদিকেই পূর্ণ মনোযোগ দেবেন। নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাবেন না, সেটাই প্রত্যাশিত। এ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে, আবারও দু’কথা লিখবার দরকার পড়ত না যদি এ ধরনের সভা আরও আগে আয়োজিত হতো। সেইসঙ্গে কর্তাব্যক্তিদের কণ্ঠে যদি আমরা না শুনতে পেতামÑ চিকুনগুনিয়া নিয়ে মিডিয়া আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বলাবাহুল্য চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সান্নিধ্যে এলে যে কোন সুস্থ ব্যক্তিরই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বারই কথা। এই অভিজ্ঞতা ও অভিব্যক্তি যথাযথভাবে মিডিয়ায় তুলে আনতে গেলে অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করা হলে পাঠক/ দর্শক তথা সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হবেনÑ এটা যারা অস্বীকার করতে চান, তাদের হয়তো সত্যভীতি (ট্রুথফোবিয়া) রয়েছে। আমরা দায়িত্বশীল পদে আসীনদের কাছে আরও দায়িত্বশীলতা আশা করি। টাকা ৩০ হাজার কোটি মাত্র যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এই তথ্য বিশ্বব্যাংকের। আর যানজটের কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত কয়েক বছরের বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে আর্থিক ক্ষতির এ আনুমানিক পরিমাণ পাওয়া যায়। ঢাকায় এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। বিশ্বব্যাংক বলছে, এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও যে বাড়বে, তা বলা বাহুল্য। যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোন উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। মানুষের হাঁটার গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার বলে মনে করা হয়। ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য থেকে এসব চিত্র উঠে এসেছে। আমরা আগেও বলেছি যে, রাজধানীর যানজট নিরসনে একের পর এক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন পরিকল্পনাই আলোর মুখ দেখেনি। কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু কাজ হলেও তা এতই দায়সারা যে নগরীর যানজট দূর করা সম্ভব হয়নি। ঢাকার যানজট নিরসনে বৃত্তাকার সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ৯১ কিলোমিটার আউটার সার্কুলার রুট চালুর সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে সে পরিকল্পনা। রাজধানীর চারপাশে সার্কুলার নৌরুটের পরিকল্পনা করা হয়েছিল সড়কে যাত্রীর চাপ কমাতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকরীভাবে তা চালু করা সম্ভব হয়নি। ওয়াটার বাস আছে ঠিকই, কিন্তু সার্ভিসের কোন ঠিক নেই। অথচ রাজধানীর নগর পরিবহনকে ঢেলে সাজাতে খুব বেশি বেগ পাওয়ার কথা নয়। ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস সারবে ভুল শুনছি না তো! কথাটা ডা. বিশ্বরূপ রায় চৌধুরী আবার বললেন। কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ শব্দ ব্যবহার না করে সরাসরি ‘কিওর’ (রোগমুক্তি) শব্দটি উচ্চারণ করলেন দিল্লী থেকে আগত ওই খ্যাতিমান পুষ্টিবিদ। অনেক বই লিখেছেন তিনি স্বাস্থ্য বিষয়ক, যার একটির নামÑ ডায়াবেটিস টাইপ ওয়ান অ্যান্ড টু- কিওর ইন সেভেন্টি টু আওয়ার্স। তার ওরিয়েন্টেশনও ছিল অভিন্ন বিষয়ে। এই প্রথম ঢাকায় এমন একটি সেশন হলো ডায়াবেটিস রোগীদের কল্যাণে, এই চিকিৎসকও প্রথম এলেন ঢাকায়। তবে ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি বিষয়ক বিকল্প এই চিকিৎসা পদ্ধতি দেশে চালু হয়েছে কিছুকাল আগেই। তাতে সফলতাও এসেছে বলে জানালেন ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস। তিনিই ঢাকায় গড়ে তুলেছেন হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার, যেখানে হৃদরোগেরও চিকিৎসা হচ্ছে বিকল্প পদ্ধতিতে। তাতেও সফলতা পেয়েছেন তিনি। ডা. বিশ্বরূপকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ডা. গোবিন্দই। আমরা জানি, হার্টের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের পক্ষে ওই ব্যয়ভার মেটানো কঠিন। তবে আশার কথা হলো দেশে এখন বিকল্প হলিস্টিক পদ্ধতিতে হার্টের রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। অনেক সময় শুধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, থেরাপী গ্রহণ ও নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যায়ামের মাধ্যমে উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট সুস্থ রাখার উদাহরণ মিলছে। এ ধরনের ব্যতিক্রমী রোগ-ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা পদ্ধতি দেশে নতুন। অপারেশন ছাড়াই হার্টের ব্লকেজ অপসারণের কৌশলের কারণে দেশের হৃদরোগীদের ভেতর এ সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ছে। শুক্রবার ডা. বিশ্বরূপের দু’ঘণ্টার মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের পুরোটা সময় ছিলাম মিলনায়তনে। শুধু রোগীই নয়, প্রচুর চিকিৎসকও উপস্থিত ছিলেন। বলা যায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তন পরিপূর্ণ ছিল। ডা. বিশ্বরূপ রায়ের বক্তব্য শেষ হলে তিনি সুধীজনের কাছে আহ্বান জানান কারও কোন প্রশ্ন থাকলে সেটি উত্থাপনের জন্য। প্রতিটি প্রশ্নের জবাব তিনি দেবেন। সত্যি সত্যি প্রচুর প্রশ্ন এলো এবং তিনি সবগুলোর উত্তর দিলেন। প্রশ্নকর্তারাও সন্তুষ্ট। বিজ্ঞানসম্মত, যুক্তিনিষ্ঠ ও পরীক্ষালব্ধ তথ্যউপাত্ত তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি আগ্রহীদের কৌতূহল বাড়িয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে কারও রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সুগার থাকলে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক স্তরে নিয়ে আসার জন্য ডা. বিশ্বরূপ তিন বেলা খাবারের বিশেষ চার্ট দেন। সেইসঙ্গে কয়েক ধরনের খাবার খেতে কড়াকড়িভাবে নিষেধ করে দেন। তার পরামর্শ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মেনে চললে তিন দিনেই ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে আর বাড়তি সুগার থাকবে না। তার মতে তখন আর ওই ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এমন কথা আর বলা যাবে না। অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টায় রোগমুক্তি ঘটবে। দীপনপুর : স্বস্তিময় পাঠকেন্দ্র প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে পাঠকের। জঙ্গীরা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল শাহবাগের আজিজ মার্কেটে তার প্রকাশনা কার্যালয়ে। সেই দীপনের ৪৫তম জন্মদিনে তার পরিবারের পক্ষ থেকে তার স্মৃতির উদ্দেশে উদ্বোধন করা হয়েছে ‘দীপনপুর’- বইঘর। সেখানে বই কেনা যাবে, বসেও পড়া যাবে। খিদে লাগলে খেয়ে নেয়াও যাবে। বেশ ছিমছাম নিরিবিলি পরিবেশ। ২৮০০ বর্গফুটের দীপনপুরে একটা কর্ণার আছে শিশুদের জন্য। সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত দীপান্তর নামের এই কর্ণারে বসে শিশুরা খেলবে, হুল্লোড় করবে, বইয়ের পাতায় রং করবে। বই পড়া আর রসনার খোরাক মেটাবার জন্য আছে ক্যাফে দীপাঞ্জলি। ভারি খাবারের ব্যবস্থা নেই, আয়োজন আছে স্ন্যাকস, চা, কফির। দীপনপুরে করা হয়েছে ছোট্ট একটা মঞ্চ, নাম দীপনতলা। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন বা কবিতা পাঠের আসরের জন্য যে কেউ এই মঞ্চ ভাড়া নিতে পারবেন। এই তো গত সপ্তাহে এখানেই হয়ে গেল ‘পরনকথা’-র আয়োজন। বয়ষ্ক ব্যক্তিরা একটু নিরিবিলি পড়তে চাইলে তার জন্য আছে সিনিয়র সিটিজেন কর্ণার। আছে প্রার্থনাকক্ষও। ওয়াশ রুম রয়েছে তিনটে। বসে পড়ার জন্য রাখা হয়েছে পুরনো বইয়ের চমৎকার একটা সংগ্রহ। এই বইগুলো কেনা যাবে না, শুধুমাত্র বসে পড়ার জন্যই রাখা। দীপনপুরে পাওয়া যাচ্ছে পরিচিত প্রকাশনীগুলোর উল্লেখযোগ্য বইগুলো। বিদেশী বইও থাকবে আগামীতে। বইয়ের অর্ডার করে আসা যাবে, এমনকি বাসায় বসে বই পাবার জন্য অর্ডার করা যাবে অনলাইনেও। দীপনপুর শাহবাগ থেকে হাঁটা-দূরত্বেই, কাঁটাবন মোড়ের কাছে ২৩০ এলিফ্যান্ট রোডে, অটবির শো রুমের ওপরতলায়। ২৩ জুলাই ২০১৭ [email protected]
×