ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে নতুন পরিবহন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে: আনিসুল হক

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ২৪ জুলাই ২০১৭

রাজধানীতে নতুন পরিবহন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে: আনিসুল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে নতুন পরিবহন ব্যবস্থা আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। সোমবার রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। অনুষ্ঠানে পরিবহন সেক্টরের প্রতিনিধিরা বলেন, আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ি রাজধানীতে সড়ক কম থাকায় যানজটের ভোগান্তি দিন দিন বেড়ে চলেছে। এশারণে পরিবহন মালিক ও চালকদের আয়ও কমছে। যানজট সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দাবি জানান তারা। পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইনে চালকদের শাস্তি কমানোর দাবি জানান পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। আনিসুল হক বলেন, রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এমন বিশৃঙ্খলা দেশের আর কোনো জেলায় নেই। আবার ঢাকার পরিবহন মালিক শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেন। কিন্তু সবাই বিরক্ত এই পরিবহন ব্যবস্থার ওপর। তাই রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা নতুন একটি পদ্ধতি নিয়ে আসছি। তিনি বলেন, নতুন এ পরিবহন ব্যবস্থা আমার বা মালিকপক্ষের না। বিশ্বের যেসব দেশে পরিবহন সেবায় কোনো বিশৃংখলা ছাড়া গণপরিবহন চলে এটি হচ্ছে সেই ব্যবস্থা। রাজধানীর পরিবহন সেবায় নতুন এ ব্যবস্থা চালু করা খুবই কঠিন কাজ। তবে আমরা এ কঠিন কাজ আস্তে-ধীরে বাস্তবায়ন করব। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর দেখা যাবে এক লেনে চলছে লাল বাস অন্য লেনে সবুজ। আবার অন্য লেনে দেখা যাবে সাদা বাস। নতুন পরিবহন ব্যবস্থায় কি কি থাকবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, নতুন পরিবহন ব্যবস্থায় যাত্রী ওঠা-নামা করার জন্য কোনো মারামারি থাকবে না। পরিবহনগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে যাত্রীদের ওঠাবে এবং গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আসবে। এছাড়া ঢাকা শহরে ৫টি বাস টার্মিনাল, বাসের জন্য আলাদা লেনসহ প্রায় চার হাজার নতুন বাস নামানো এবং পাঁচ বছরের পুরাতন বাস উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া রাজধানীতে এতোগুলো গণপরিহন কোম্পানি থাকবে না এবং সব পরিবহন কোম্পানিগুলোকে ৫-৬টি কোম্পানিতে নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি। আনিসুল হক আরও বলেন, পরিবহনের মালিকদের বিনিয়োগ অনুযায়ী তারা মুনাফা পাবেন। তাদের বিনিয়োগ ও মুনাফা সবসময় নিরাপদ থাকবে। নতুন ব্যবস্থায় মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীরা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না। তবে আমি সবাইকে বলতে চাই, এক দু’দিনে এই ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব নয়, আমরা সবাই মিলে আস্তে-ধীরে এ ব্যবস্থা চালু করবো। রাজধানীর গণরিবহন সমস্যা সমাধানে সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকেই উদ্যোগ নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছিল পুরনো বাস আস্তে আস্তে তুলে দেয়া হবে। নামানো হবে চার হাজার নতুন বাস। এই বাসগুলো চলবে পৃথক লেনে। একেক এলাকার বাসের রং হবে ভিন্ন। এছাড়া বাস স্টপেজ থাকবে নির্ধারীত। গত বছর বাসগুলো নামার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তা আনা সম্ভব হচ্ছে না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের মধ্যেই নতুন বাস রাজধানীর রাস্তায় নামবে। পরিবহন মালিক শ্রমিকরাও মনে করেন এই সেক্টরকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এক্ষেত্রে যানজট বড় বাঁধা বলেও মনে করেন তারা। অনুষ্ঠানে মেয়র জানান, ব্যাংক ঋণের সুদ বেশি হওয়ার কারণে মালিকরা গাড়ি নামাতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। আমরা এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। কম সুদে গাড়ি নামানোর জন্য ঋণ দিতে সরকার সম্মত হয়েছে।৪ দশমিক ছয় শতাংশ সুদে এখন গাড়ি নামানোর ঋণ পাওয়া যাবে। এটা সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আশাকরি আমাদের নতুন এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে মালিক শ্রমিক সবাই যুক্ত থাকবেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। মেয়রর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষন করেন মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, নতুন গাড়ি নামানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। তবে আমরা চাই নতুন গাড়ি নামানোর সময় পুরনো গাড়িগুলো যেন সরকার কেনার ব্যবস্থা করে। তাহলে মালিকরা কিছু হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। সব মিলিয়ে পুরনো গাড়ির জন্য মালিকরা প্যাকেজ মূল্য দাবি করেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, ওসমান আলী, বাতেন বাবু প্রমুখ।
×