ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ৫ বছরের কীর্তি

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২৪ জুলাই ২০১৭

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের  ৫ বছরের  কীর্তি

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খুবই কম। কিন্তু ইচ্ছাশক্তির জোর আর দক্ষতা যে সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও কাজের অসীম ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে তা দেখিয়ে দিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতিকে দেশ ভুলতে পারবে না। ভুলতে পারবে না রাষ্ট্রপতি ভবনও। আগামী দিনে সাধারণ মানুষ যত বার রাইসিনা হিলে পা রাখবে তত বার মনে করতে হবে কীর্ণাহারের বাঙালিকে। কখনও দেশের বিদেশমন্ত্রী, কখনও প্রতিরক্ষামন্ত্রী, আবার কখনও অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাঙালির গর্বের কারণ হয়েছেন রাজনীতিক প্রণব মুখোপাধ্যায়। অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের অধিকারী হন ২০১২ সালে। ভারতীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা একেবারেই কম। অনেকাংশেই তা সরকার নিয়ন্ত্রিত। তবে কিছু এমন অধিকার রয়েছে যা একমাত্র রাষ্ট্রপতিই প্রয়োগ করতে পারেন। আর এই পাঁচ বছরে এমনই কিছু কাজ তিনি করেছেন যা বাঙালি হিসেব তো বটেই, ভারতের সব নাগরিককেই গর্বিত করবে। রাষ্ট্রপতির অন্যতম অধিকার ফাঁসির আসামির প্রাণভিক্ষা বিবেচনা করা। বছরের পর বছর পরে থাকা সেই সব আর্জির ফাইল ফেলে রাখেননি প্রণব। বেশ কয়েকজন ‘কুখ্যাত’অপরাধীর প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করেছেন তিনি। সেই তালিকায় ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অভিযুক্ত আজমল কাসভ, সংসদ হামলায় অভিযুক্ত আফজল গুরু, মুম্বই বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ইয়াকুব মেমনদের নাম রয়েছে। ১৯৮৬ সালে একই পরিবারের তেরোজনকে হত্যার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত গুরমিত সিংহের প্রাণভিক্ষার আর্জিও খারিজ করে দেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। আবার, চারজনের প্রাণদণ্ডের সাজা বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করেছেন তিনি। ভারতে বরাবরের নিয়ম ছিল কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনেতা এলে তাঁকে কোনও পাঁচতারা হোটেলে অতিথি হিসেবে রাখতে হয়। কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাষ্ট্রপতি ভবনের ১২টি ঘরকে নতুন করে সাজিয়ে ছোট্ট বুটিক হোটেল বানিয়ে ফেলা হয়। এর জন্য অনেক খরচ হলেও বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য স্থায়ী খরচ কমে যায়। একটা সময়ে অবশ্য বিদেশি অতিথিরা রাষ্ট্রপতি ভবনের সাউথ কোর্টের গেস্ট হাউজে থাকথেন। ব্রিটেনের যুবরাজ চার্লস স্ত্রী ডায়নাকে নিয়ে এখানে থেকেছেন। কিন্তু পরে সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নতুন করে তা চালু করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর আমলে রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা থেকে হামিদ কারজাই-সহ অনেকেই। তাঁর আমলে জমি অধিগ্রহণ থেকে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্ডিন্যান্সে সিলমোহর দিয়েছেন প্রণব। তাঁর আমলেই ধর্ষককে চরম সাজা দিতে আইন সংশোধন হয়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময়েই প্রণব জানিয়ে দিয়েছিলেন, কথায় কথায় অর্ডন্যান্স জারি করার পক্ষপাতী তিনি নন। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কেন্দ্র অর্ডিন্যান্স চাইলেও তিনি সরকারের প্রতিনিধিদের রাষ্ট্রপতি ভবনে ডেকে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। এমন নজির ভারতীয় ইতিহাসে নেই এমন নয়, তবে বিরল। একটা সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলেই হতো শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও শপথ নেন দরবার হলে। কিন্তু এই হলটিতে শব্দ প্রক্ষেপণের সমস্যা থাকায় পরবর্তীকালে তা বন্ধ হয়ে যায়। নরসিমা রাও, অটলবিহারী বাজপেয়ী থেকে মনমোহন সিংহের সময়ে শপথগ্রহণের স্থান তাই ঐতিহাসিক দরবার হল থেকে চলে যায় অশোক হলে। প্রণব মুখোপাধ্যায় ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনতে বিশেষজ্ঞদের এনে দরবার হলের শব্দ প্রক্ষেপন ব্যবস্থা ঠিক করেন। যদিও তাঁর আমলে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দরবার হলে শপথ নেননি। বড় মাপের অনুষ্ঠান করার জন্য বেছে নেন দরবার হলের সামনের লন। রাষ্ট্রপতি ভবন এতকাল ছিল ভিভিআইপিদের জায়গা। সাধারণ মানুষের কোনও প্রবেশাধিকারই ছিল না। এখন আর তা নেই। দেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা খুলে দিয়ে গেলেন প্রণব। চালু হয়েছে অনলাইন বুকিং। যার মাধ্যমে যে কেউ বেড়াতে যেতে পারেন ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রধানের বাসভবন। গোটাটা ঘুরে দেখা যাবে। দেখতে পাবেন বিভিন্ন রাষ্ট্রপতিদের ব্যবহার করা সামগ্রী, তাঁদের পাওয়া উপহার। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিল্প সংস্কৃতি ক্ষেত্রের কৃতীদের নিয়ে গিয়ে আধুনিকতম ব্যবস্থা করেছেন। দুষ্প্রাপ্য বইয়ের ভাণ্ডার রাষ্ট্রপতি ভবনের লাইব্রেরিকে সম্পূর্ণ ডিজিটাইসড করেছেন বাঙালি রাষ্ট্রপতি।
×