ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ আবাসনের অভাবে ঝরে পড়ছে অনেক কর্মজীবী নারী

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৪ জুলাই ২০১৭

নিরাপদ আবাসনের অভাবে ঝরে পড়ছে অনেক কর্মজীবী নারী

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ দেশের অর্থনীতিতে কর্মজীবী নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে বেড়েছে নারীর অগ্রগতি। সেইসঙ্গে আবার বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে কর্মক্ষেত্র থেকে নারীর একাংশ ঝরে পড়তেও দেখা যাচ্ছে। প্রতিবন্ধকতার মধ্যে অন্যতম নারীর আবাসন সঙ্কট। নারীর নিরাপদ আবাসন সঙ্কটের সমস্যা শুধু রাজধানীতেই নয় বরং দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও গ্রামেও। কর্মজীবী নারীর জন্য সরকারী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হোস্টেলের সংখ্যা মাত্র সাতটি। এসব হোস্টেলে মোট আসনের বিপরীতে শুধুমাত্র রাজধানীতেই কর্মজীবী নারীর সংখ্যা কয়েক হাজার গুণ বেশি। আর এ কারণে কর্মজীবী নারীদের জন্য দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় পর্যায়ক্রমে মহিলা হোস্টেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ইতোমধ্যে ২০টি প্রকল্প পাস হয়েছে। ৬০টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মহিলা হোস্টেলের আসন আরও ২ হাজার ৪৭৫টি বাড়ানোর কাজ চলছে। কর্মজীবী মহিলাদের নিরাপদ আবাসন সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে মহিলাবিষয়ক অধিদফতর স্ব-অর্থায়নে সারাদেশে ৭টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালনা করে আসছে। রাজধানী ঢাকা শহরে ৪টি এবং খুলনা, যশোর, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ১টি করে মোট ৮টি হোস্টেলের মাধ্যমে কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এতে ১ হাজার ৬০৮ কর্মজীবী নারী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। মহিলাবিষয়ক অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৩০ আসন বিশিষ্ট এবং মিরপুর ও খিলগাঁও হোস্টেলে উর্ধমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৫৫৮ আসনের কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যেই, সাভারের বড় আশুলিয়ায় কর্মরত নারী গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ৭৪৪ সিটের হোস্টেল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেখানে ভর্তির কাজ চলছে। সাভারের আশুলিয়ায় গার্মেন্টসে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জন্য ৭৯৮ আসনের হোস্টেল নির্মাণ হচ্ছে। ঢাকার নীলক্ষেতে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল সংলগ্ন নতুন ১০তলা ভবনে ২৪৫ আসনের হোস্টেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া, শেরপুর জেলাধীন নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল কাম ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের কাজ এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নার্সেস হোস্টেল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৬ তলা ফাউন্ডেশনের ওপর হোস্টেল ভবন নির্মাণ করা হবে। হোস্টেলে ১৩০ কর্মজীবী মহিলা নিরাপদ আবাসিক সুবিধা পাবেন এবং একই ভবনে ২০ কর্মজীবী মায়ের শিশুর জন্য ডে- কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা থাকবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা অধিদফতরের মহাপরিচালক বেগম সাহিন আহমদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু হোস্টেল নয় নারীরা যাতে তাদের শিশু সন্তানকে ডে কেয়ারে রেখে কাজে যেতে পারেন সেই উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। বর্তমানে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর পরিচালিত ৪৩টি ডে কেয়ার সেন্টার আছে। আর ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে ৬০টি ডে কেয়ার সেন্টার নির্মাণ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে আরও ৪২৯ট ডে কেয়ার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকায় মহিলা সংস্থা পরিচালিত সংস্থার প্রধান কার্যালয় বেইলি রোডে ৯তলা থেকে ১২তলা পর্যন্ত কর্মজীবী মহিলাদের নিরাপদ আবাসনের সুবিধা দেয়ার জন্য ২০৭ আসন বিশিষ্ট ‘শহীদ আইভি রহমান কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল’ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নারীদের অধিক হারে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সব মিলিয়ে মোট ৭টি হোস্টেল পরিচালিত হচ্ছে। কর্মজীবী নারীদের তুলনায় আসন সংখ্যা খুবই সীমিত জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় মহিলা হোস্টেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×