ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কত পার্সেন্ট পাস করল তা বিবেচ্য নয়, মানুষ হওয়াটাই মুখ্য ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৪ জুলাই ২০১৭

কত পার্সেন্ট পাস করল তা বিবেচ্য নয়, মানুষ হওয়াটাই মুখ্য ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পায় সেজন্য তার সরকার শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার হ্রাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কত পার্সেন্ট পাস করল, কত পার্সেন্ট পাস করল না; সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। মানুষ হওয়াটাই মুখ্য, পাসের হার নয়। মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে এবার পাসের হার কমলেও আগামীতে এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যাবে। রবিবার তার সরকারী বাসভবন গণভবনে এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফল গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষার ফলে সন্তোষ প্রকাশ করে আরও বলেন, এবার রেজাল্ট হয়তো পার্সেন্টেজের দিক থেকে কিছুটা কম হতে পারে। যেহেতু পড়াশুনার গুণগত মানের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে, পরীক্ষা পদ্ধতি আরও আধুনিক করা হয়েছে। তাছাড়া খাতা দেখাসহ সবদিকে ভালভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। আশা করি, এ অবস্থা কাটিয়ে উঠব। এবার রেজাল্ট একটু খারাপ হলেও আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করে গড়ে তুলে এর গুণগত মানের দিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রয়োগ করেছি। সকল বিষয়ের প্রতি বিশেষ করে উত্তরপত্র মূল্যায়নে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ১০ শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ফল হস্তান্তর করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রতিরক্ষা সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে লালমনিরহাট এবং শরীয়তপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষায় পাস ফেল নিয়ে না ভেবে শিক্ষার মান বাড়াতে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে এবং এই বয়সে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন দেয়া। এ সময় ছেলেমেয়েরা যেন মাদকাসক্ত ও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের ছেলেমেয়ে কার সঙ্গে মিশছে, কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছে কিনা; এ বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। ছেলেমেয়েরা নিজেদের কথাগুলো যেন বন্ধুর মতো তার বাবা-মাকে বলতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। অভিভাবকরা সন্তানদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করলে তারা কখনও বিপথে যাবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। পরীক্ষার ফল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে পাসের হার কী ছিল, আর এখন কী? আমরা পরীক্ষা নেয়া ও ফল প্রকাশের বিষয়টি একটা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছি। ফল পাওয়া নিয়ে এখন আর আগের মতো ঝামেলা পোহাতে হয় না। ঘরে বসেই এখন সবাই ফল পেতে পারে। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী যারা কৃতকার্য হয়েছে তাদের অভিনন্দন এবং অকৃতকার্যদের মন দিয়ে পড়াশোনা করে আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের থেকে কিছুটা কমে আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহটা কম। অথচ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাটা একান্তভাবে প্রয়োজন। বিজ্ঞান শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে ১২ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সরকারের উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ থাকবে, শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করবে মনযোগ দিয়ে। সেই সঙ্গে নিজেদের গড়ে তুলবে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে। পিতা-মাতার প্রতি তাদের দায়-দায়িত্ব পালন করবে, সেই সঙ্গে দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যও পালন করবে। তিনি বলেন, পাস করার জন্য, ভাল ফল করার জন্য প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। ভালভাবে পড়তে হবে। পড়াশোনায় মন দিতে হবে। প্রতিদিনের কোন সময়টা ভাল সেটা পড়াশোনার জন্য বেছে নিতে হবে। কারও ছেলেমেয়েই যেন বিপথে না যায়-এই আশাবাদ ব্যক্ত করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেখাপড়া শিখে সবাইকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। কারণ, ভবিষ্যতে এদেশের নেতৃত্ব তোমাদেরই দিতে হবে। ভাল বিজ্ঞানী হতে হবে, ভাল শিক্ষক হতে হবে। নাগরিক হতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তো এখনকার প্রজন্মই সামনে আসবে। নিজেদের সেভাবে তৈরি করতে হবে। আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবার মাত্র ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ পাস করার বিষয়ে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে রেজাল্টে দেখলাম, একটা বোর্ডের অবস্থা খুবই খারাপ। এত বড় বড় অফিসার ওখান থেকে আসে। আমাদের মুখ্য সচিব থেকে শুরু সবই তো কুমিল্লার। আর এই বিভাগটি ঢাকার কাছে। এর আগে কেবিনেট সেক্রেটারি ছিলেন তিনিও কুমিল্লার। বড় বড় অফিসারও কুমিল্লার। সেই কুমিল্লার এই দুরবস্থা কেন? কুমিল্লা কেন পিছিয়ে থাকবে? এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার লক্ষ্য বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব যেন সারা বিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকবে বিস্ময়ের সঙ্গে। আল্লাহর রহমতে আমরা সেটা করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী স্বাধীন জাতি। আমরা গর্বিত জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব সেভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করে বলেন, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি গত এসএসসি পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করা হয়েছিল। তাতে পাসের হার কিছু কমেছিল। সেই পদ্ধতি এবার এইচএসসিতে প্রয়োগ করা হয়েছে।
×