ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এইচএসসিতেও পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে ॥ ফল বিস্ফোরণে ধাক্কা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৪ জুলাই ২০১৭

এইচএসসিতেও পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে ॥ ফল বিস্ফোরণে ধাক্কা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিট বা বেদুর নতুন কঠোর খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির ধাক্কা লাগল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলেও। কঠোর ও যথাযথ খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির ফলে এসএসসির মতো এইচএসসির অব্যাহত সাফল্যেও বড় ধরনের ছেদ পড়েছে। ২০০৩ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর প্রায় প্রতিবছরই পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই কমেছে। এক বছরের ব্যবধানেই পাসের হার প্রায় ৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন, যা গতবারের চেয়ে ২০ হাজার ৩০৭ জন কম। বেড়েছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান, কমেছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। এইচএসসিতে সবচেয়ে বেশি পাস করেছে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ৭২ শতাংশ। এসএসসির মতো এইচএসসিতেও সবচেয়ে কম পাস করেছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল প্রায় ৬৫ শতাংশ। এবার পাস করেছে ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ এ বোর্ডে এবার এক লাখ ৩৭২ পরীক্ষার্থীর অর্ধেকেরও বেশি ফেল করেছে। এবার ফলাফল আগের তুলনায় খারাপ হওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। তবে যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল ঘটেছে তেমনটাই। বছরের পর বছর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে লাগামহীন উদারতার কারণে ফলাফলে রীতিমতো সাফল্যের বিস্ফোরণ ঘটেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে সব সময়েই। শিক্ষার মানে অগ্রগতি না হলেও খাতা মূল্যায়নে দুর্বলতার কারণে বছরের পর বছর ধরে অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে পাসের হার ও জিপিএ-৫। এ অবস্থায় সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি চালু ও কঠোরতা অবলম্বন করলে ফলাফলে তার প্রভাব পড়বে বলেই ধারণা ছিল সকলের। এবারের এসএসসি পরীক্ষাতে প্রথমবারের মতো খাতা মূল্যায়নে নেয়া হয়েছিল নতুন উদ্যোগ। যা কার্যকর করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সেসিপ প্রকল্পের একটি ইউনিট যার নাম বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিট বা বেদু। নতুন এ পদ্ধতিতে খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন হওয়ায় পরীক্ষায় পাসের হার ব্যাপক হারে কমেছিল এসএসসিতে। কমে জিপিএ-৫-সহ বেশকিছু সূচক। এরই ধারাবাহিকতায় এইচএসসিতে বেদুর উদ্যোগ প্রথমবারের মতো কার্যকর করা হয় এবারের পরীক্ষা থেকে। পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে এবার পাসের হার কয়েক বছরের মধ্যে বেশ খানিকটা কমে গেলেও এ পরিবর্তনকে সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ফলাফল কিছুটা আগের তুলনায় খারাপ হলেও মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও সঠিক খাতা মূল্যায়ন জরুরী হয়ে পড়েছিল। যুগের পর যুগ ধরে একটি ত্রুটিপূর্ণ খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি ছিল যার পরিবর্তনের ফলে এখন পরীক্ষার সঠিক ফল পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে আরও কঠোরভাবে উদ্যোগ কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এবার পরীক্ষায় ১০ শিক্ষা বোর্ডের ৮ হাজার ৭৭১টি প্রতিষ্ঠানের ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। পাস করেছে আট লাখ এক হাজার ৭১১ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন, গত বছর ছিল ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ৫৩২টি, গত বছর ছিল ৮৪৮টি। একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ৭২টি, গত বছর ছিল ২৫টি। সাধারণ ৮ বোর্ডেও এবার আগের বছরের তুলনায় ফলাফল খারাপ হয়েছে। এখানে পাস করেছে ৬৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩ হাজার ২৪২ জন, যা গত বছর ছিল ৪৮ হাজার ৯৫০ জন। এক বছরের তুলনায় কমেছে ১৫ হাজার ৭০৮ জন। রবিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কপি হস্তান্তরের পর দুপুর ১টায় সচিবালয়ের সংবাদ সম্মেলন করে সারাদেশের ফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপরই স্ব স্ব কেন্দ্র, বিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট, মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে ফল জানতে পারে পরীক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীর পাশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আলমগীর, অতিরিক্ত সচিব অরুণা বিশ্বাস, অশোক কুমার বিশ্বাস, ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ বিভিন্ন বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোন বোর্ডে কেমন ফল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা গত বছর এ পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৯৩০ জন, গত বছর ছিল ২৮ হাজার ১১০ জন। এক বছরের মধ্যে ঢাকা বোর্ডেই জিপিএ-৫ কমেছে ১০ হাজারেও বেশি। এবার সবচেয়ে কম পাস করেছে কুমিল্লা বোর্ডে। যেখানে পাসের হার ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত বছর ছিল ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৭৮ জন, গত বছর ছিল এক হাজার ৯১২ জন। রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ২৯৪ জন। এই বোর্ডে গত বছর পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ-৫ ছিল ছয় হাজার ৭৩ জন। দিনাজপুর বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ দুই হাজার ৯৮৭ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল তিন হাজার ৮৯৯ জন। চট্টগ্রাম বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ এক হাজার ৩৯১ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ ছিল দুই হাজার ২৫৩ জন। যশোর বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৭০ দশমিক ২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৮১৫ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ৫৮৬ জন। বরিশাল বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৭০ দশমিক ২৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮১৫ জন। গত বছর পাসের হার ৭০ দশমিক ১৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭৮৭ জন। সিলেট বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৭২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০০। গত বছর পাসের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৩০ জন। এইচএসসির বাইরে মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ, জিপিএ-৫ এক হাজার ৮১৫ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল দুই হাজার ৪১৪ জন। কারিগরি বোর্ডে এবার পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ দুই হাজার ৬৬৯ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ছয় হাজার ৫৮৬ জন। হঠাৎ খারাপ ফলের রহস্য কী রবিবার সকালে যখন ফলের কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষামন্ত্রীসহ বোর্ডের প্রধানরা হস্তান্তর করেন তখনই প্রকাশ হয় বহু বছর পর ফলের উর্ধগতিতে ছেদ পড়েছে। তবে এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই এ কথা স্পষ্ট হয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে পরীক্ষায় পাসের হার গত কয়েক বছরের মধ্যে বেশ খানিকটা কমে গেলেও এ পরিবর্তনকে সময়োপযোগী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাসের হার কমার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ হওয়াটাই মুখ্য, পাসের হার নয়। মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে এবার পাসের হার কমলেও আগামীতে এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার রেজাল্ট হয়তো পার্সেন্টেজের দিক থেকে কিছুটা কম হতে পারে। যেহেতু পড়াশোনার গুণগত মানের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে পরীক্ষা পদ্ধতি আরও আধুনিক করা হয়েছে তাছাড়া খাতা দেখাসহ সব দিকে ভালভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। আমি আশা করি, এই অবস্থা কাটিয়ে উঠব। সার্বিকভাবে এই ফলকে যথেষ্ট ভাল হিসেবে বর্ণনা করে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন এবং শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছিলেন, আগে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি যথাযথ ছিল না। শত বছরের একটা পদ্ধতি তিন বছর ধরে পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করেছি। বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদরা কাজ করেছেন। এবার নতুন পদ্ধতিতে যথাযথ মূল্যায়ন হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার কিছুটা কমেছে। আমাদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক এবং এ জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু যারা পাসের হার কেবল বাড়ছে এ কথা শুনে অভ্যস্ত তাদের কাছে একটু বিস্ময় হতে পারে। যেহেতু এটা একটা আমাদের অগ্রগতি, সেই কারণে জিনিসটা আমি সবাইকে স্বাভাবিকভাবে নিতে অনুরোধ জানাব। ম্ল্যূায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার পর পরীক্ষকরা খাতা নিয়ে যান এবং ফলাফল জমা দেন। কিন্তু ‘অভিজ্ঞতায় দেখা যায়’Ñ তারা ভাল করে খাতা দেখেন না অনেকেই। এ কারণে একটি পরীক্ষা পর্যালোচনা পর্ষদ করে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার ব্যবস্থা হয়। একই খাতা ২০টি ফটোকপি করে দেয়া হয় দেশের ২০ জন সেরা পরীক্ষককে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আলাদাভাবে নম্বর নেয়া হয়। দেখা যায়, ২০ জনই ২০ ধরনের নম্বর দিয়েছেন। একজন ছাত্র ৪ পাচ্ছে, আরেকজন ছাত্র এখানে সাত পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে কত পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান অর্জন করাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় কথা আমরা শিক্ষার মান অর্জনের চেষ্টা করছি। শিক্ষকদের মধ্যে তো সমস্যা আছে। এটি কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি। মান বেড়েছে, তবে গুণগত মান বৃদ্ধি করা বড় চ্যালেঞ্জ। এটি শুধু বাংলাদেশের না সারা বিশ্বের চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগে পরীক্ষা অনিশ্চিত ছিল। আমরা শৃঙ্খলার মধ্যে এনেছি। পরীক্ষা শেষের ৬০ দিনের মধ্যে আমরা ফলাফল দেই। আগে পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হতো না বলে অভিযোগ পেয়েছি। এতে দেখা যেত ভাল ছাত্ররা খারাপ আর খারাপ ছাত্ররা ভাল রেজাল্ট করত। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিট গঠন করা হয়। এটা সংক্ষেপে বেদু নামে পরিচিত। এটি তিন বছর ধরে কাজ করছে। শিক্ষক ও হেড এক্সামিনার ঠিকমতো খাতা দেখছেন কিনা, তা তারা খতিয়ে দেখে। বেদু কাজ করার পর থেকে পরীক্ষা ফলাফলে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তিনি আরও বলেন, প্রশ্নপত্র রক্ষা করা একটা কঠিন কাজ। এ কাজে আমরা সফল হয়েছি। প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে এ কাজ সম্ভব হয়েছে। যারা ফেল করছে তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। একটি পরীক্ষায় পাস না করলে জীবনের সবকিছু পাল্টে যায় না। আগামীতে আরও পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ আসবে। ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজ্ঞানের ছাত্র কমে যাওয়ায় আমাদের জন্য আতঙ্কের বিষয় ছিল। বিজ্ঞানের ছাত্র বাড়ানোর জন্য আমরা ক্যাম্পেইন করছি, শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি এবং যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে। ফলে এ বছর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বেড়েছে। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২ লাখ ২৪ হাজার ৩৫২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। পাস করেছে এক লাখ ৭৮ হাজার ২২০ জন। পাসের হারে ৮৩ শতাংশ। নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে বোর্ড চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে প্রথমে প্রধান পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে তাদের মাধ্যমে সারা দেশে সব পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সব শেষে এ বছর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘একটি মান’ বজায় রাখার এই ব্যবস্থা চালু হয়। এ জন্য এই খাতাগুলো দেখে একটা উত্তরপত্র আগেই বাছাই করে আমাদের হেড এক্সামিনাররা বসে এবং দুইবার চেক করে একটা সাধারণ মান ঠিক করে দেন। সে অনুযায়ী পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করেন। চেয়ারম্যানরা আরও বলেছেন, উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিভিন্ন মানের সাড়ে ১২ শতাংশ খাতা বিভিন্ন জনকে দেখানো হয়েছে। খাতা দেখার পরে মিলিয়ে দেখা হয় যে ঠিক হচ্ছে কি হচ্ছে না। প্রধান পরীক্ষকের খাতা দেখার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের রাখা হয় মূল্যায়ন করার জন্য। যাতে দেখা হয় তারা (প্রধান পরীক্ষক) ঠিকমতো খাতা দেখেছেন কিনা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. তপন কুমার সরকার বলছিলেন, পরীক্ষক চাপের মধ্যে ছিলেন কারণ তার চিন্তা ছিল যে তার খাতা আবার দেখা হতে পারে। এ জন্য তাকে কঠোর পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। এবার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোন পরীক্ষকের ফাঁকি দেয়ার সুযোগ ছিল না। তিনি বলেন, শতভাগ হয়ে গেছে এটা আমি বলছি না। নতুন পদ্ধতিতে একই ধারায় নম্বর দেয়ার কারণে তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের চেয়ে বেশি ফেল করেছে। তবে এ বিষয়টি আমাদের কাছে কাম্য ছিল বলে জানান তিনি। এদিগে একই কথা বলছেন, অন্যান্য বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকরাও। সবচেয়ে কম পাস করা কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল খালেক বলছিলেন, এসএসসির মতো এইচএসসিতেও এবার খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। এটা অত্যন্ত কঠোর ও কার্যকরী একটা উদ্যোগ। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে সকল কাজ করেছি। এতে ফলাফলে একটু প্রভাব পড়লেও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে বলেই আমরা মনে করি। তবে আমাদের বোর্ডে ইংরেজীতে শিক্ষার্থীরা অনেকে বেশি ফেল করেছে। মানবিক বিভাগেও অনেক খারাপ করায় পাসের হার কমেছে। কোন গ্রেস নম্বর দিয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না। এসব আমাদের বোর্ডে হয় না। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলছিলেন, আসলে এতদিন খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি যথাযথ ছিল না। সেই তুলনায় এবার অনেক বেশি ভাল একটা উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের সদস্যরা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সময় বোর্ডগুলোতে গেছেন। তারা মনিটরিং করেছে। এটা অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে। এতে পাসের হার কমলেও এটা অনেক ভাল একটা উদ্যোগ। আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ দরকার বলে মনে করেন এ চেয়ারম্যান। এদিকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল নিয়ে কথা বলছিলেন বাংলাদেশ বেসরকারী কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার। তিনি বলছিলেন, মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও তার প্রতিষ্ঠানে ফল খুবই ভাল। তবে এবার সরকারের নেয়া নতুন খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি ছাড়াও কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণে কঠোরতা অবলম্বন ও প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার কারণে সারাদেশে পাসের হার কিছুটা কমেছে। তবে নতুন এ উদ্যোগ দেশের শিক্ষার জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে মত তার। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ছায়েফ উল্লাহ বলছিলেন, পাসের হার কমেছে তবে আমরা খাতা মূল্যায়নে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। এটা শিক্ষার জন্য খুবই ভাল একটা উদ্যোগ।
×