ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আফগান বংশোদ্ভূত ডেনিশ স্ট্রাইকার নাদিয়ার স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২৪ জুলাই ২০১৭

আফগান বংশোদ্ভূত  ডেনিশ স্ট্রাইকার নাদিয়ার স্বপ্ন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিজ দেশ ছেড়ে এসেছিলেন নাদিয়া নাদিম। শৈশবকালে পরিবারের সঙ্গে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে আসেন ডেনমার্কে। এখন ডেনমার্ক মহিলা ফুটবল দলের জার্সি গায়েই চলমান ইউরো মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছেন তিনি। হল্যান্ডে চলমান এ আসরে সবার নজর কেড়ে নিয়েছেন তিনি আফগান বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে। ২৯ বছর বয়সী এ স্ট্রাইকার দাবি করেছেন শুধু ক্রীড়াতে মেয়েদের অংশগ্রহণই তার জন্মভূমিতে নারীদের জন্য যত বাধ্যবাধকতা সেটা ভেঙ্গে যেতে পারে। ২০০০ সালে মা এবং চার বোনের সঙ্গে দেশ ছাড়েন নাদিয়া। তার বাবা তালেবানদের হাতে নিহত হয়েছিলেন। এরপরই দেশে থাকাটা আর নিরাপদ মনে করেননি তারা। ইউএস জাতীয় মহিলা সকার লীগে পোর্টল্যান্ড থর্নসের সঙ্গে ফুটবল খেলা শুরু করেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে নাদিয়া বলেন, ‘দেশ ছেড়ে আসা ব্যতীত আমাদের অন্য কোন উপায় ছিল না। কারণ সবকিছুই ভয়ানক হয়ে উঠেছিল সেখানে বাস করার জন্য। আমরা এক মানব পাচারকারীর সহায়তায় ডেনমার্কে এসেছিলাম। তখন থেকে এখানেই আছি।’ ডেনমার্কের শরণার্থী শিবিরে থাকার সময় নাদিয়া ফুটবল খেলতে শুরু করেন। তখন ছেলেদের সঙ্গেই খেলতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে তেমন কিছুই করার ছিল না। যেখানে ছিলাম সেটার খুব কাছাকাছিই ছিল বড় একটি ক্লাব। সেখানেই আমি ফুটবল খেলতে শুরু করি।’ ডেনমার্কের বেশ কয়েকটি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন নাদিয়া। এরপর নিউজার্সির ক্লাব স্কাই ব্লুর হয়ে খেলার সুযোগ পান ২০১৪ সালে। এর দুই বছর পর তিনি পোর্টল্যান্ডে যোগ দেন। এ বিষয়ে নাদিয়া বলেন, ‘পোর্টল্যান্ডের হয়ে খেলাটা বিশাল ব্যাপার। এটা ১০০ ভাগ স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই বিষয়। আমার মনে পড়ে যখন ছোট ছিলাম তখন ভাবতাম কিভাবে একজন পেশাদার ফুটবলার হওয়া যায়। এখন যে অবস্থানে এসেছি সেটা ওই চিন্তাধারারই ফলাফল। সুতরাং এটাকে আমি বিস্ময়করই বলব এবং এমন একটি ক্লাবে থাকতে পারাটা সত্যিই এক বড় মর্যাদা।’ ২০০৯ সালে ডেনমার্কের জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান নাদিয়া। ডেনিশ ফেডারেশন ইমিগ্রেশন আইনটাকে পর্যালোচনা করে তাকে দলে নেয়। তিনটি ইউরো কোয়ালিফাইংয়ে তিনি ডেনিশ জার্সি গায়ে ২২ ম্যাচ খেলে ৯ গোল করেন। তবে এর মধ্যে ৭টি গোলই তিনি করেছেন এ বছরের ইউরো অভিযাত্রায়। এ বিষয়ে নাদিয়া বলেন, ‘আগের টুর্নামেন্টগুলো আমার জন্য কিছুটা ব্যতিক্রম ধরনের ছিল। যারা কোচ ছিলেন আমার ওপর তেমন কোন আস্থাই ছিল না। তাই আমি ভেবেছিলাম আমার পক্ষে বড় কিছু করা হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু এখন সবকিছুই বদলে গেছে। আমি খেলোয়াড় হিসেবে উন্নতি করেছি। এর পাশাপাশি কোচদের বিশ্বাসও অর্জন করেছি।’ বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে এবার ইউরোতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলের জয় এবং স্বাগতিক হল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলের পরাজয়ের ম্যাচে দারুণ নজরকাড়া খেলা উপহার দিয়েছেন নাদিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করা এবং ডেনমার্কের হয়ে খেলার পাশাপাশি নাদিয়া মেডিক্যালে পড়াশুনাও করেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও নিজের জন্মভূমি আফগানিস্তানকে ভুলে থাকতে পারেন না এ স্ট্রাইকার। আফগানিস্তান থেকে কোন মহিলা এ্যাথলেট বেরিয়ে আসা একটা সময় খুবই দুরূহ ব্যাপার ছিল। কিন্তু নাদিয়া মনে করেন সবকিছুর পরিবর্তন ঘটছে ধীরে ধীরে। তিনি বলেন, ‘এখন বেশকিছু মহিলা এ্যাথলেট বেরিয়ে আসছে। এমনকি একটি মহিলা ফুটবল দল করার বিষয়টিও আলোচনায় আছে।
×