ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে সাইবার হামলা

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৪ জুলাই ২০১৭

বিশ্বে প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে সাইবার হামলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হ্যাকাররা প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও আক্রমণ করে যাচ্ছে। এক হিসেবে শুধু র‌্যানসমওয়্যারের কারণেই ২০১৬ সালে ক্ষতি হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ সাইবার অপরাধজনিত ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৬ লাখ কোটি ডলারে। হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে হ্যাকাররা প্রথমেই টার্গেট করে ব্যাংকের সাধারণ কর্মীদের আর তাদের ভুলের ফাঁদে ফেলে গ্রাহক তথ্য চুরি এবং পেমেন্ট সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রবিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘ব্যাংকের তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁঁকি প্রস্তুতি’ শীর্ষক কর্মশালায় এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। যৌথভাবে কর্মশালার আয়োজন করে বিআইবিএম ও ট্রান্স আইটি সলিউশন। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর এবং বিআইবিএম গবনির্ং বোর্ডের চেয়ারম্যান ফজলে কবির। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এবিবি চেয়ারম্যান আনিস এ খান, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোঃ শিরিন এবং ট্রান্স আইটি সলিউশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম চৌধুরী (মিজান) বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মোঃ আহসান হাবীব। কর্মশালায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রুবাইয়াত আকবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলা করতে ব্যাংকের সর্বস্তরে অধিকতর সচেতন করার কোন বিকল্প নেই। হ্যাকারদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক ও ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে কর্মরত সবাইকে সাইবার আক্রমণের ধরন সম্পর্কে ধারণা লাভ ও এর প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, ক্রমবর্ধমান সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় এবং নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ব্যাংকের সব কর্মীর সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, সাইবার নিরাপত্তা বিশ্বব্যাপী উদ্বিগ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান আইটি কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। একই সঙ্গে আইটি নিরাপত্তা বিষয়ে একটি গাইড লাইনও প্রস্তুত করেছে। বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এজন্য স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে। প্রত্যেকটি ব্যাংককে আলাদা আলাদাভাবে সাইবার সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করতে হবে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে। ব্যাংকারদের সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোঃ শিরিন বলেন, মাঝারি মাপের প্রাকৃতিক বিপর্ষয় হলে অনেক ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। আর বড় ধরনের বিপর্যয় হলে কোন ব্যাংকেরই সেবা দেয়া সম্ভব নয়। কারণ ডাটা সেন্টারের যে ধরনের নিরাপত্তা দরকার তা ব্যাংকগুলোর নেই। ট্রান্স আইটি সলিউশনের সিইও আমিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে তথ্য নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী শুধু ঢাকা বা বড় শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতি জেলা পর্যায়ে ব্যাংক কর্মীদের জন্য এরকম ভিন্নধর্মী কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে। ট্রান্স আইটি এর পক্ষ থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী সেশনে সাম্প্রতিক কালের চাঞ্চল্যকর কয়েকটি সাইবার ঝুঁকি র‌্যানসমওয়্যার আর ফিশিং আক্রমণ কিভাবে পরিচালিত হয়, তার বাস্তব নমুনা প্রদর্শন করা হয়। অনিরাপদ ওয়াইফাই ব্যবহার করে ল্যাপটপ হ্যাক করার মাধ্যমে হ্যাকাররা কিভাবে দুর্বলতার সুযোগ নেয় তা উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের সামনেই তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় বক্তারা বলেন, প্রচলিত ধারার চেয়ে ভিন্নধর্মী ট্রেনিংয়ে সাইবার বিপদ চোখের সামনে তুলে ধরে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় দেখানো হলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হবে। পরিপূর্ণ সচেতন কর্মীরাই আর্থিক খাতের সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
×