ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চেস্টার বেনিংটনের মৃত্যুতে পশ্চিমা সঙ্গীতাঙ্গনে শোক

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ২৪ জুলাই ২০১৭

চেস্টার বেনিংটনের মৃত্যুতে পশ্চিমা সঙ্গীতাঙ্গনে শোক

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ জনপ্রিয় মার্কিন রক ব্যান্ড লিঙ্কিন পার্কয়ের লিড ভোকালিস্ট চেস্টার বেনিংটন মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলসে নিজ বাসগৃহ থেকে তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল মাত্র ৪১ বছর। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত জানা না গেলেও প্রাথমিক আলামতে একে আত্মহত্যা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। জনপ্রিয় এ শিল্পীর অকাল মৃত্যুতে পশ্চিমা সঙ্গীতাঙ্গনজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়, বৃহস্পতিবার লস এ্যাঞ্জেলসে নিজ বাসগৃহ থেকে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বেনিংটনের মুখপাত্র জানিয়েছে, তিনি কোন সুইসাইড নোট লিখে যাননি। তার মৃতদহের পাশে একটি খোলা মদের বোতল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বেনিংটনের ময়নাতদন্ত এখনও শুরু হয়নি। তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আকস্মিক এ মৃত্যুতে শোকে ভেঙ্গে পড়েছেন এ তারকার অগণিত ভক্ত। টুইটার ছেয়ে গেছে বেনিংটনের সহকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের শোকবার্তায়। লিঙ্কিন পার্কয়ের লিড ভোকালিস্ট ও র‌্যাপার মাইক শিনোদা, উপস্থাপক জিমি কিমেল, সঙ্গীত তারকা নিক্কি সিক্স, ফারেল উইলিয়াম, মার্কিন অভিনেত্রী এ্যাশলি গ্রীন, গ্যাবি সিডিব, ব্যান্ডদল ওয়ান রিপাবলিকসহ অনেকেই টুইটারে জানিয়েছে তাদের শোকবার্তা। চেস্টার বেনিংটনের দীর্ঘদিনের সহকর্মী মাইক শিনোদা লিখেছেন, শোকাহত ও আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি। বিশ্বাস হচ্ছে না, তবুও সত্য। শীঘ্রই আমরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে যাচ্ছি। জনপ্রিয় মার্কিন উপস্থাপক জিমি কিমেল লিখেছেন, চেস্টার আমার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তার মতো নরম মনের মানুষ আর দেখিনি। তার পরিবার ও সহকর্মীদের জন্য সহমর্মিতা জানাই। মার্কিন পপ ব্যান্ড ওয়ান রিপাবলিক লিখেছে, চেস্টার, তুমি আমাদের হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছ। আত্মহত্যা হলো পৃথিবীর বুকে চরে বেড়ানো এমনই এক ‘শয়তান’, যে আমাদের চারপাশেই ওতপেতে থাকে। চিরবিদায় চেস্টার। সঙ্গীত রচয়িতা ও সুরকার নিক্কি সিক্স লিখেছেন, শেষবার যখন দেখা হলো তখন চেস্টার আমাকে বলেছিলেন, তিনি খুব সুখে আছেন। তবে কেন এমন হলো? তার পরিবার, সন্তান ও লিঙ্কিন পার্কয়ের সদস্যদের জন্য সমবেদনা রইল। মার্কিন অভিনেত্রী এ্যাশলি গ্রীন লিখেছেন, চেস্টার বেনিংটনের মতো একজন প্রতিভাবান মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তার ও তার পরিবারের জন্য কষ্টে মন ভেঙ্গে যাচ্ছে। আরেক অভিনেত্রী লিখেছেন, চিরবিদায় চেস্টার। মনে হচ্ছে যেন কেউ আমার বুকের পাঁজরে জোরে আঘাত করেছে। বিষণœতা থেকে আমাকে অনেকবার উদ্ধার করেছিলেন তিনি, অথচ তিনিই কিনা ‘ডিপ্রেশন’ নামের ওই ভয়ঙ্কর দানবের শিকার হলেন! এদিকে চলতি বছর প্রকাশিত হয় ‘লিঙ্কিন পার্ক’ ব্যান্ডের সপ্তম এ্যালবাম ‘ওয়ান মোর লাইট’। বেনিংটনের মৃতদেহ উদ্ধারের দিনই এ এ্যালবামের ‘টকিং টু মাইসেল্ফ’ গানটির ভিডিও প্রকাশ করে দলটি। গানটির অতিপ্রাকৃত সুর ও কথা এবং বেনিংটনের রহস্যময় গায়কীর জন্য এরই মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে গানটি। বেশ কয়েকদিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন বেনিংটন, ছিলেন মাদকাসক্ত। ‘টকিং টু মাইসেল্ফ’ গানে যেন রয়েছে বেনিংটনের এ মানসিক অবস্থারই ছাপ। মিউজিক ভিডিওতে চেস্টারের বিভিন্ন সময়ের কনসার্টের কিছু ছবি ও ভিডিও জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর কিছু দৃশ্যে মঞ্চ মাতাতে দেখা গেছে এ তারকাকে। ভিডিওটির শেষে দেখা গেছে, মঞ্চ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন বেনিংটন আর ঝাপসা হয়ে আসছে তার অবয়ব। এ সরে যাওয়াই যে তার শেষ যাওয়া হবে এমনটা কি ভেবেছিল কেউ? নাকি আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন বেনিংটন- এমনই সব প্রশ্ন এ মুহূর্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভক্তদের মনজুড়ে। এদিকে চেস্টার বেনিংটনের মৃত্যুতে আগামী ২৭ জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছে ব্যান্ডটি। ওই দিন ‘ওয়ান মোর লাইট’ শিরোনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলজুড়ে কনসার্টে অংশ নেয়ার কথা ছিল লিঙ্কিন পার্কের। ব্যান্ড সদস্যদের মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আয়োজকরা। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ছয় সদস্যের ব্যান্ডদল ‘লিঙ্কিন পার্ক’। রক ঘরানার এ ব্যান্ডটি ভিন্নধর্মী গায়কী ও লিরিকের কারণে শুরু থেকেই দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০০০ সালে প্রকাশিত তাদের প্রথম এ্যালবাম ‘হাইব্রিড থিয়োরি’ দিয়েই সবার নজরে আসেন তারা। সে সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত চেস্টার বেনিংটনের বিশেষ সাক্ষাতকার চোখে পানি নিয়ে আসে অনেক ভক্তেরই। শৈশবে যৌন নিগ্রহের শিকার হওয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা অকপটে স্বীকার করেন বেনিংটন। এছাড়াও তার বর্ণময় অতীত নজর কাড়ে দর্শকের।
×