ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রেক্ষাগৃহের ইতিবৃত্ত

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ২৪ জুলাই ২০১৭

প্রেক্ষাগৃহের ইতিবৃত্ত

শনিবারের জনকণ্ঠে দেশের নানা অঞ্চলের সিনেমা হল নিয়ে পাতাজুড়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে হাল আমলে সিনেমা হলের সঙ্কটের কথা। এককালের সরগরম সব প্রেক্ষাগৃহ বর্তমানে শুধুই স্মৃতিময় অধ্যায়। কোথাও ভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, কোথাও বা সেখানে খোলা মাঠ। এককালে শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে শিল্প এলাকা টঙ্গীর আনারকলি সিনেমা হলে ছবি দেখতে যেতেন একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এখন হলটি না থাকলেও সংশ্লিষ্ট সড়কটি হলের নাম আনারকলি ধারণ করে সেই স্মৃতি জাগরূক রেখেছে। সাধারণ মানুষের চিত্তবিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের তুলনা নেই। বাস্তব জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক সঙ্কট ও টানাপোড়েন ভুলে দু-আড়াই ঘণ্টার জন্য হাসি-কান্না আর নাটকীয়তায় পূর্ণ নাচে-গানে ভরপুর ছায়াছবি খেটে খাওয়া মানুষকে আমোদের পাশাপাশি এক ধরনের জীবনশক্তিও দান করে থাকে। স্বাভাবিক সুস্থ চিত্তবিনোদনের অভাবে একজন মানুষ মনোবৈকল্যর শিকার হতে পারে বলে সতর্ক করে দেয়া হয় আধুনিক মনোবিজ্ঞানে। আমাদের দেশের গড়পড়তা মানুষ যাত্রাপালা, নাটক এবং সিনেমাকেই পছন্দের বিনোদন মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে আবহমানকাল থেকে। বিশেষ করে নগরবাসী শ্রমজীবী এবং মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী শ্রেণীর কাছে সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে চলচ্চিত্র দর্শন দারুণ এক চিত্তবিনোদন। এর মধ্য দিয়ে ঘরের বাইরে যাওয়া, সামাজিক মেলামেশা এবং একই সঙ্গে আনন্দলাভের চমৎকার সুযোগ ঘটে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ বদলেছে, মানুষের বিনোদন লাভের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। অবস্থাসম্পন্নরা সিনেমা হলে না গিয়ে ঘরে বসেই সিনেমা উপভোগের সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করছেন। বিশাল পর্দার টিভি কিনে তারা সিনেমা দেখেন। ভিসিপির যুগ কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়ে এসেছে ভিসিডি, ডিভিডি এবং ইউটিউবের অত্যাধুনিক কাল। বিশেষ করে ইন্টারনেটের কল্যাণে ইউটিউব থেকে ইচ্ছামাফিক সিনেমা দেখার বিপুল সুযোগ চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। নিম্নবিত্ত শিক্ষাবঞ্চিত খেটে খাওয়া মানুষও নিজের ঘরে বা পাড়া-মহল্লার কারও বাইরের ঘরে বসে টেলিভিশনের মাধ্যমে ঢালিউডের ছবি দেখার সুযোগ গ্রহণ করছেন। এসব কারণেই সিনেমা হলগুলোর কদর আর আগের মতো নেই। সারাদেশে হাজারের ওপর সিনেমা হলের ভেতর কমতে কমতে তার সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে তিন শ’র কিছু ওপরে। দেশের প্রায় সব জেলা শহরেই ছিল সিনেমা হল। এখন বহু জেলায় আর নেই। দেড় কোটি মানুষের রাজধানী মেগাসিটি ঢাকায় প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ৩৩ থেকে কমে ঠেকেছে ১৮টিতে। পছন্দের সিনেমা আর অনুকূল পরিবেশ পেলে নিশ্চয়ই মানুষ আবার সিনেমা হলে যাবে। সে লক্ষ্যে জীর্ণশীর্ণ সাবেক আমলের হলগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে সবার আগে। সাউন্ড সিস্টেম ও ছবি প্রক্ষেপণের মানও উন্নত করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা যুগের চাহিদা মাথায় রেখে বিনোদনসমৃদ্ধ সুস্থ ধারার ছবি নির্মাণ করতে হবে। একযোগে ৬৪ জেলায় চলচ্চিত্র উৎসব হবে অক্টোবরে, তারই জোর প্রস্তুতি চলছে শিল্পকলা একাডেমিতে। পক্ষকালব্যাপী এ বর্ণাঢ্য উৎসবের জন্য ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে নির্বাচক ও জুরি কমিটি। প্রতিটি জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে ছবি দেখার সুযোগ মিলবে স্ব-স্ব জেলার দর্শকদের। বিষয়ভিত্তিক পাঁচটি বিভাগে সাজানো হয়েছে উৎসব। আশা করা যায় হলবিমুখ দর্শকরা চলচ্চিত্র উৎসবের ছবি দেখে আবারও হলমুখী হওয়ার তাগিদ বোধ করবেন।
×