ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও পাহাড়ধস

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ২৪ জুলাই ২০১৭

আবারও পাহাড়ধস

আবারও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপে অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সীতাকু-ের দুর্গম অঞ্চল ছলিমপুরে পাহাড়ধসে মাটি চাপা পড়ে নারী ও শিশুসহ নিহত হন ৫ জন এবং আহত ৪ জন। উল্লেখ্য, স্থানীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসেও ভারি বর্ষণজনিত কারণে পাহাড়ধসের জন্য জারি করা হয়েছিল সতর্কতা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মাইকিং করাসহ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অপসারণের। তবে অধিকাংশই ছিন্নমূল মানুষ রাতারাতি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে যাবে কোথায়? অতঃপর অনিবার্য ঠাঁই হয়েছে মাটির গহীনে। ১৯৯৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১২ বার। তবে এবারই এর পরিমাণ ও মৃতের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। এর আগে ১৩ জুন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশব্যাপী মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণে সার্বিকভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে পার্বত্য তিন জেলায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। সেখানে পাহাড়ীঢল ও পাহাড়ধসে নিহতের সংখ্যা ১২০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বান্দরবান এবং চট্টগ্রামের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। সব মিলিয়ে পাহাড়ধস, মাটি ও দেয়াল চাপায় মৃতের সংখ্যা তিন শতাধিক হতে পারে, যাদের মধ্যে রয়েছে অনেক নারী ও শিশু। উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে কয়েক সেনা সদস্যের মৃত্যুর খবরও আছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, পাহাড়ধস ও দেয়াল চাপায় এসব মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ অনেকটা মানবসৃষ্ট। মূলত এসব পাহাড় আগ্নেয়শিলা দ্বারা গঠিত নয়, বরং অধিকাংশই মাটির টিলা। তদুপরি প্রায় গাছপালা ও বনজঙ্গলবিহীন। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অত্যধিক মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করার তাগিদে পাহাড়ের গাছপালা নির্মমভাবে নির্মূল করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মাটির প্রয়োজনে অবিরাম পাহাড় কাটা তো আছেই। অতঃপর প্রবল বর্ষণসহ ঢল নামলে বৃক্ষহীন ও ন্যাড়া পাহাড়গুলোর মাটি আলগা হয়ে ধসে পড়ে পাদদেশে বসবাসকারী মানুষের বসতভিটার ওপর। এই অঞ্চলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ও দেয়াল ধসে একাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে থাকে। ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়, দেয়াল ও ভূমিধসে প্রাণহানি ঘটে ১২৭ জনের। স্থানীয় প্রশাসন পাহাড়ের ঢালে বসবাসরতদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ তাদের সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিলেও কার্যত তা ব্যর্থ হয়েছে। এর বাইরেও চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন থেকে চলছে জলাবদ্ধতা সঙ্কট। চট্টগ্রামের দুঃখ চাক্তাই খাল সংস্কারসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি হলেও বরাবরই তা থেকে গেছে উপেক্ষিত। নির্বাচিত সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং নির্বাচিত মেয়রসহ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর এই চাওয়া-পাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন পুরোপুরি। সরকার আসে, সরকার যায়। তবে বাস্তবে মানুষের দুর্ভোগ কমে না আদৌ, বরং আরও বেড়ে যায়। অথচ বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এমনটি হওয়ার কথা নয়। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সরকারের আমলে নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা, মিলেছে নানা প্রতিশ্রুতি। বলা হয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আমূল সংস্কারসহ উন্নয়নে নেয়া হবে নানা পদক্ষেপ। বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের চাক্তাই ও অন্যান্য খাল-নালা পুনরুদ্ধার এবং নাব্য রাখার ব্যবস্থা করা হবে। বাস্তবে কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হলেও জনজীবন একটু হলেও সান্ত¡না পেত। কিন্তু হা হতোস্মি! মানুষকে এখনও পানিতে ডুবে অথবা পাহাড় চাপায় অসহায়ভাবে মরতে হয় যৎসামান্য প্রাকৃতিক বিড়ম্বনায়? প্রশ্ন হলো, যে দেশটিতে পদ্মা সেতুর মতো সুবিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হচ্ছে প্রায় স্বউদ্যোগে, সেখানে কি প্রতিরোধ করা যায় না জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস? চট্টগ্রামসহ তিন পার্বত্য জেলায় সার্বিকভাবে পরিবেশ রক্ষাসহ পাহাড় কাটা, বসতি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ীঢলের পানি নির্গমনে নিতে হবে সুষ্ঠু ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা।
×