ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদুর রহমান সোহেব

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের ১৭ বছর

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৩ জুলাই ২০১৭

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের ১৭ বছর

আলোক সজ্জায় সজ্জিত প্রিয় ক্যাম্পাসের ভবনগুলো, বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বারান্দাগুলো সাজানো বাহারি রঙের বেলুন ও ফেস্টুনে। সবার হাতে হাতে অনুষ্ঠান সূচীর লিফলেট ও মুখে উৎসাহ উদ্দীপনার ছাপ এ যেন এক বিশেষ দিনকে ঘিরে, এটি আর কিছুই না এ সব কিছুই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে কেন্দ্র করে। গত ১৫ জুলাই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়। এই দিনটি ঘিরে বর্ণিল সাজে রূপ নেয় সবুজ ক্যাম্পাস। যার প্রস্তুতি রাত পোহাবার পূুর্বেই সমাপ্ত হয়। প্রতিষ্ঠা দিবসের উৎসবকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নানান কর্মসূচী গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে রয়েছে পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন অবমুক্তকরণ, আনন্দ র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। তাই সোনালি রোদের খরতাপ উপেক্ষা করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা এককাট্টা হয়ে আনন্দ উৎসবে মুখর করে তোলো ক্যাম্পাস। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ভবনের সামনে সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় লোগো সম্বলিত বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য ড. মোঃ সেকান্দার আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক বেগ, প্রক্টর ড. ফরহাদ হোসেন, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনার পরিচালক ড. মোঃ মিজানুর রহমান। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক , কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। এর পূর্বে কেক কাটার মাধ্যমে আনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড.কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি অত্র অনুষ্ঠানের আয়োজক ও উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। এরপর একাডেমিক ভবন থেকে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালি বের হয় যা রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় ব্যানার, প্ল্যাকার্ডসহ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আনন্দ র‌্যালিতে অংশ নেয় শিক্ষক ,কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ যা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ হতে টিশার্ট ও ক্যাপ দেয়া হয়। সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড.কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও নাচ, গান ও অভিনয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীরা দীর্ঘরাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অডিটরিয়াম মাতিয়ে রাখেন। এরই মাধ্যমে শেষ হয় স্মরণীয় একদিন। উল্লেখ্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১১ ডিসেম্বর ১৯৩৮ সালে ‘বেঙ্গল কৃষি ইনস্টিটিউট’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি এই অঞ্চলের প্রথম কৃষি শিক্ষা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৭ সালে এটি ‘পূর্ব পাকিস্তান কৃষি ইনস্টিটিউট’ নাম ধারণ করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নাম ‘বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট’ এ পরিবর্তন করা হয়। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম বাকৃবিতে স্থানান্তরিত হয়। ২০০১ সালে এই প্রতিষ্ঠানকে ইনস্টিটিউট থেকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪টি অনুষদের অধীনে ৩৫টি বিভাগ রয়েছে। তাছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কৃষিতে অবদান রাখার জন্য এ প্রতিষ্ঠানের অনেক গ্রাজুয়েট স্বাধীনতা পুরস্কার, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, বিজ্ঞান একাডেমিক স্বর্ণপদক ও শেরেবাংলা পদকসহ বিভিন্ন ধরনের পদক লাভ করেন। আর বর্তমানে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে সাউ সরিষা-১, সাউ সরিষা-২, সাউ সরিষা-৩, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আলুবীজ ও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সফলতা, মধু চাষ, নন্দিনী ফুল, পরিবেশ সংরক্ষণে ছাদ বাগান, আধুনিক পশুর চিকিৎসা, টমাটিলো, সাদা ভুট্টা, মুলা, বিভিন্ন বিদেশী ফুলের উৎপাদন সফলতা উল্লেখযোগ্য। অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এ. এফ. এম. জামাল উদ্দিন কাজ করছেন ফুল নিয়ে। তিনি দেশে প্রথম ল্যাসেনথিরাস গাছের ফুল ফুটান। এছাড়াও দেশের একমাত্র ‘জুওনোটিক রোগ গবেষণা ও তথ্য কেন্দ্র’ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত।
×