ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে বছরে আসছে লাখো মানুষ ॥ বাড়ছে বস্তি

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৩ জুলাই ২০১৭

কেরানীগঞ্জে বছরে আসছে লাখো মানুষ ॥ বাড়ছে বস্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ২২ জুলাই ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সময় অসময়ে উপকূলীয় এলাকা তথা উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমাগত ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙ্গন, খরা, বন্যার ফলে কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ভূমিহীনদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কমছে সাধারণ মানুষের মাঠ পর্যায়ে কাজের সুযোগ। ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দারিদ্র্যের কশাঘাতে সহায়-সম্বলহীন মানুষ প্রতিনিয়ত গ্রাম থেকে পরে রাজধানী ঢাকাসহ কেরানীগঞ্জমুখী ধাবিত হচ্ছে। শুধু কেরানীগঞ্জেই প্রতিবছর ১ লাখ হতদরিদ্র মানুষ কাজের খোঁজে আসছে। শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকলে আগামী দুই দশকে গ্রাম থেকে শহর অভিমুখী মানুষের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে বলে ধারণা করছেন জলবায়ু ও নগর পরিকল্পনাবিদরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রাম ও উপকূলীয় এলাকা থেকে জলাবায়ুজনিত বিরূপ প্রভাবে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ মানুষ কেরানীগঞ্জে এসে জনসংখ্যাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে বাড়ছে কেরানীগঞ্জে আবাসন সঙ্কট। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাড়িভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য। এতে স্বল্পআয়ী এ সকল জনগোষ্ঠীর দিন দিন ভোগান্তি চরমে উঠছে। তারা আরও বলছেন, বাসস্থানের সমস্যা দক্ষিণ এশিয়ার নগরগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলেও ঢাকা মেগাসিটির ও তৎসংলগ্ন কেরানীগঞ্জে এ বস্তি সমস্যাকে সম্পূর্ণভাবে দূরীভূত করা অতি সহজে সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, কেরানীগঞ্জে আগত এসব জনসংখ্যার মধ্যে অধিকাংশই বস্তিতে বসবাস করে। এর মধ্যে ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠীই পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করছে। বেসরকারী এক নগর গবেষণা সংস্থার জরিপে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জে প্রায় ৫শ’ বস্তি ও ভাসমানসহ মোট ১ লাখ লোক বসবাস করে। অর্থাৎ বর্তমান কেরানীগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় জনসংখ্যা ৪০ শতাংশ ও বহিরাগতদের সংখ্যা ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে নি¤œ আয়ের লোক ও বিভিন্ন পেশায় চাকরিরত অবস্থায় বসবাস করছে। এর মধ্যে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ঝিনাইদহ, দিনাজপুর, রাজশাহী, জামালপুর ও ময়মনসিংহ উল্লেখযোগ্য। প্রতিবছর মাথাপিছু আয় সূচক ভাল থাকলেও উপকূলীয় এলাকা থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবে বাসস্থান হারিয়ে ঢাকাসহ কেরানীগঞ্জে আসে। এভাবে এ জনগোষ্ঠীর শহরমুখী অভিগমন থাকলে শহরে আবাসন সঙ্কট দেখা দেবে। বাড়বে নগর দারিদ্র্য, খাদ্যাভাব ও জনসংখ্যা। কিন্তু শহরগুলোতে প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা ও অবকাঠামো না থাকায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে কেরানীগঞ্জে গ্রামাঞ্চলে এলাকায় আবাদি ও তিন ফসলি জমিগুলোতে পাল্লা দিয়ে বসতি বাড়ছে। বসতির গৃহায়ণ স্বল্পমেয়াদি হলেও ঢাকা শহরে এ সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী রূপে পরিণত হচ্ছে। এভাবে ফসলি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হলে কেরানীগঞ্জবাসীর পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
×