ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. আবদুল ওয়াহাব

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৩ জুলাই ২০১৭

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ

রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয় বাংলাদেশ যেন সোনার হরিণ, বাঙালীর যুগ যুগান্তরের কামনা-বাসনার ফসল। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বাঙালী সংস্কৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। মানবিকতা গুণে ঋদ্ধ বাঙালী সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তির বহির্প্রকাশ বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। এই বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের সুনিপুণ কারিগর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বিশ^রাজনীতির কলহপূর্ণ-বিপদসঙ্কুল-জটিল চক্রজালের শত বাধা অতিক্রমকারী মানবিকতার পতাকাধারী ক্যারিশম্যাটিক রাষ্ট্রনেতা প্রাধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। যে কোন দেশের জন্য প্রয়োজন পড়ে নেতৃত্বের, প্রয়োজন পড়ে এমন একজন জ্ঞানী-প্রাজ্ঞ-সাহসী মানুষের যাঁর বহুমাত্রিক দ্যূতিতে উদ্ভাসিত হয় দেশ-দেশের সর্বস্তরের মানুষ অর্থাৎ লোক সাধারণ, রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রজাতন্ত্রের প্রশাসন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমনি একজন প্রতিভাময়ী সাহসিনী রাজনীতিক যাঁর নেতৃত্বের দ্যূতিতে বিশে^র অন্যসব দেশ থেকে বাংলাদেশ নক্ষত্রতুল্য উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন, মনন ও মূল্যবোধ তাঁর আদরের সুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিধ্বস্ত দেশ নির্মাণ এবং দেশের সর্বাঙ্গীন কল্যাণের গুরুদায়িত্ব সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মকা- তিনি স্বানন্দে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, ধনে-মানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক নিয়মে। অদূরভবিষ্যতে এদেশ সর্বক্ষেত্রে বিশে^র সব দেশকে ছাড়িয়ে যাবে এ কথা নির্দ্ধিধায় বলা চলে। বিশে^র সর্বশ্রেষ্ঠ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ^দরবারে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। যার ফলে রবীন্দ্রচিন্তার বস্তুনিষ্ঠ বিচার বিবেচনার সুবর্ণ সুযোগ আমরা পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথের বিশাল সৃষ্টি-কর্মযজ্ঞ নিয়ে সেভাবে ব্যাপক গবেষণা কিংবা সৌধপ্রতিম গ্রন্থ রচিত হয়নি। আশা করা যায় এখন তা হবে বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রবীন্দ্র সাহিত্যের, শিল্পকর্মের, সঙ্গীতের এবং উপেক্ষিত মানুষ বিশেষ করে দরিদ্র কৃষককুল নিয়ে যে ভাবনা আজ তার নানামুখী তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। এতে করে উন্মোচিত হবে বাঙালী সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত। এই বিদ্যাপীঠকে কেন্দ্র কারও একালের দেশী-বিদেশী তীক্ষèধি সাহিত্য চিন্তকরা সরাসরি এগিয়ে আসতে সক্ষম হবেন। কারণ বাংলাদেশে এখন রবীন্দ্রচর্চার উপযোগী রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও সাস্কৃতিক অবকাঠামো সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রজাদরদি মনীষী বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর মানবদরদি রাষ্ট্রনায়ক রাজনীতির কবি বাংলার দুঃখী কৃষকের, বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানÑ এই মহান এবং শ্রেষ্ঠ দুই বাঙালীর চিন্তা-আদর্শের মেলবন্ধনে আজ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়। এই বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদগাতা বাংলাদেশের আর এক রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত এই রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয় বিশ^ব্যাপী আলোর দ্যূতি ছড়াবে, সর্বমানবের কল্যাণকামী রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন যা তিনি ব্যক্তিগত জীবনযাপন এবং তার সৃষ্টির মাধ্যমে উত্তরসূরিদের জন্য রেখে গেছেন। রবীন্দ্র দর্শনই হবে এই বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মসূচীর মৌল আদর্শ। এই বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মসূচীর মাধ্যমে বিশ^-জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হবে বাংলাদেশ। বিশে^র সমগ্র মানবিক দর্শনচর্চাকারী, সাহিত্যসাধক এবং বরেণ্য কবি-প-িত-গবেষক চতুর্দিক থেকে ছুটে আসবেন এই বাংলায়, এই রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়ে। এর মাধমে বাংলাদেশে ঘটবে বিশ^বিদ্বজ্জন সমাগম। চীন, জাপান, রাশিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিখ্যাত সব অধ্যাপক বাংলাদেশে ছুটে আসবেন। রবীন্দ্রনাথকে জানার আগ্রহেই ওইসব বিদ্বজ্জন বাংলাদেশে আসবেন, সেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। রবীন্দ্র বিশ^াবিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার নতুন অধ্যায় সূচিত হবে। রবীন্দ্রনাথ মানুষকে ভালবাসার জন্য বিশ^ বিবেকের কাছে যে আবেদন রেখে গেছেন রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি রবীন্দ্রনাথের পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসার আহ্বানকে ফলপ্রসূ করার জন্য বিশ^বিদ্বৎসমাজ, জ্ঞানী-প-িত-গবেষকগণকে একত্রিত করে একটি মানবিকতাবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যার কেন্দ্রে অবস্থান করবে বাংলাদেশ এবং অবশ্যই এর মাধ্যম হবে বাংলাদেশের নব প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়। অর্থাৎ একুশ শতকের সূচনাপর্বে মানবিক জ্ঞানচর্চার নতুন ধারার উদ্বোধন করবে বাংলাদেশ। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে বাংলা ভাষাচর্চা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এতে বাংলা ভাষা, বাঙালী সংস্কৃতি আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। এই কীর্তির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর হয়ে থাকবেন বিশ^ময়। কেননা তিনি স্বেচ্ছায় ও নিজ উদ্যোগে এই কীর্তিময় কাজটি সম্পন্ন করছেন। এ বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে বিশ^দরবারে বাংলাদেশ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আইকন হিসেবে চিহ্নিত হবে, ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে দূর-বহুদূর। রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যাঁরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন তাঁদের নাম আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাম-লীর অন্যতম সদস্য এইচ টি ইমাম, বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী, অধ্যাপক নাসিম উদ্দিন মালিথা, চয়ন ইসলাম (সাবেক এমপি), হাসিবুর রহমান স্বপন (এমপি) প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ^জিৎ ঘোষ। তিনি সৌভাগ্যবান বটে। তাঁকে অভিনন্দন জানাই, তাঁর সাফল্য কামনা করি সর্বান্তকরণে। আমরা অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানাই শেখ হাসিনাকে তিনি শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন করলেন। জয়তু শেখ হাসিনা। লেখক : সাবেক পরিচালক বাংলা একাডেমি
×