ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে দেখা মিলছে না দর্শনার্থীদের

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২২ জুলাই ২০১৭

শেরপুরে দেখা মিলছে না দর্শনার্থীদের

সিনেমার মান নিম্নমুখী হওয়া তথা নিম্নমানের গল্প, কপি পেস্ট কাহিনী এবং আকাশ সংস্কৃতির বিভিন্ন উপভোগ্য টিভি সিরিয়াল, হিন্দী, তামিলের পাশাপাশি কলকাতার বাংলা সিনেমার সহজলভ্যতায় ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক সময়ের জনপ্রিয় সিনেমা হলগুলো। এ ছাড়া মোবাইল, ইন্টারনেটের মতো উন্নত প্রযুক্তির জাদুর ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সিনেমা হলের প্রয়োজনীয়তা। হারিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয়তা, দেখা মিলছে না দর্শনার্থীদের। চলচ্চিত্র শিল্পে বিপর্যয় দেখা দেয়ায় সারাদেশের ন্যায় বিনোদনপ্রিয় এলাকা শেরপুরেও বন্ধ হয়ে পড়েছে ৯টি প্রেক্ষাগৃহ। এর মধ্যে যশোরের মনিহার সিনেমার আদলে নির্মিত শহরের খোয়ারপাড় এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ১৪শ’ সিটবিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহ ‘লিখন’ এবং শহরের প্রাণকেন্দ্র কাকলি মার্কেটস্থ ‘পদ্মা’, বটতলাস্থ মেঘনা সিনেমা হলো। এ ছাড়া নালিতাবাড়ির ১টি, নকলার ২টি, শ্রীবরদীর ২টি ও ঝিনাইগাতীর ১টি বন্ধ থাকলেও বিশেষ উৎসবে অপর একটি সিনেমা হলে ছবি প্রদর্শিত হয়। যদিও শেরপুর সদরে রূপকথা, সত্যবতী ও কাকলী নামের ৩টি হল চালু রয়েছে শুধু বনেদি ব্যবসার ধারাবাহিকতা নামক নিয়ম রক্ষার জন্যই। তদুপরি বন্ধ হয়ে যাওয়া হলগুলোসহ ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চালু থাকা সিনেমা হলগুলোর স্থাপনাতেই গড়ে উঠেছে নানাবিধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এখনও যে ৩টি সিনেমা হল টিকে আছে তার প্রায় সবই নোংরা পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনার চিত্র। ওইসব হলের আসবাবপত্র এখনও মান্ধাতার আমলেরই রয়ে গেছে। হলের অধিকাংশ সিট ভাঙ্গা ও ছারপোকার বাসায় পরিণত হয়েছে। হলের টয়লেটগুলো অত্যন্ত অপরিষ্কার ও নোংরা। হলে দর্শকদেরও তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। সিনেমা হলগুলোর নোংরা পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে দর্শকদের প্রচুর অভিযোগ থাকলেও সেদিকে হল কর্তৃপক্ষের তেমন কোন দৃষ্টি নেই। এক যুগ আগেও যেখানে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সকল শ্রেণী-পেশার মানুষই পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে আসতেন। কিন্তু বর্তমানে তার পুরোটাই উল্টো। শুধু একশ্রেণীর নি¤œ আয়ের গ্রামের কিছু মানুষ মাঝেমধ্যে ওইসব সিনেমা হলে দর্শক হিসেবে দেখা যায়। অথচ একসময় আমাদের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত সব শ্রেণীর মানুষের কাছে নির্মল বিনোদনের নির্ভরযোগ্য উপাদান ছিল আমাদের বাংলা ছবি। এ দেশে নির্মিত ছবিগুলো দেখার জন্য দর্শক ভিড় জমাতেন সিনেমা হলে। প্রিয় তারকা অভিনীত ছবিটি দেখতে দর্শক উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করতেন। যে শুক্রবারে নতুন ছবি মুক্তি পেত, তা দেখার জন্য টিকেট করতে দর্শকদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যেত সিনেমা হলের সামনে। বেশ কয়েকদিন হাউসফুল থাকত। উৎসাহী দর্শকের চাহিদার কারণে অনেক সময় সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ ‘স্পেশাল’ শোর আয়োজন করতে বাধ্য হতো। পিছিয়ে ছিল না দেশের উত্তর সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ছোট্ট জেলা শেরপুরও। ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই জেলায় ১২টি সিনেমা হলেই ব্যবসা ছিল রমরমা। অথচ যুগের পরিবর্তন আর বাংলা চলচ্চিত্রের নির্মাণশৈলী, বিপণন ও প্রদর্শনী ব্যবস্থার সবক্ষেত্রেই চরম দুরবস্থা ও সঙ্কটময়তার কারণে সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও হল মালিকদের অব্যবস্থাপনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে এক সময়কার বনেদি সিনেমা ব্যবসায়ীদের প্রিয় প্রেক্ষাগৃহ। -রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর থেকে
×