ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়ার মুক্তি সিনেমা হল এখন খোলা মাঠ

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২২ জুলাই ২০১৭

পটিয়ার মুক্তি সিনেমা হল এখন খোলা মাঠ

সিনেমা হলের জৌলুস এখন আর নেই। এক সময় গ্রামগঞ্জে থেকে সিনেমা দেখতে কিশোর-তরুণ, যুবক-যুবতী ও গৃহবধূরা শহরের সিনেমা হলে গিয়ে ভিড় করত। দর্শকরা টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত। টিকেটের জন্য অনেক সময় মারামারির ঘটনাও ঘটত। হলগুলো ছিল সবসময় হাউসফুল। হলে প্রদর্শিত হতো সকলে দেখার মতো সামাজিক ছবি। ছবির শুরুতে হাসি, আনন্দ। শেষ পর্যায়ে আবেগ, দুঃখ, বেদনায় ভরা থাকত। বাস্তব চিত্রের মতো দর্শক প্রথমে হাসি, আনন্দ পেয়ে পরে চোখে কান্নার জল নিয়ে হল থেকে বের হতো। সিনেমা হলের এসব দৃশ্য স্মৃতির পাতা থেকে যেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি আলোচিত সিনেমা হল ছিল চট্টগ্রামের পটিয়া মুক্তি সিনেমা হল। তখন দক্ষিণ চট্টগ্রামে আর কোন সিনেমা হল না থাকায় এখানে ছিল দর্শকদের প্রচুর ভিড়। ১৯৮৪ সালে পটিয়ায় মুক্তি সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা হয়। চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলে বিনোদন পিয়াসী লোকেরা মুক্তি সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখত। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সিনেমা হলে ভিড় থাকত। ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল আজহা ও দূূর্গা পূজার সময় সিনেমার টিকেট পাওয়া খুবই দুষ্কর ছিল। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট নিয়ে সিনেমার টিকেট কাটত দর্শকরা। ধাক্কাধাক্কি, মারামারি করে অনেক সময় এ টিকেট সংগ্রহ করতেন। কালো বাজারে টিকেট বিক্রি হতো। মুক্তি সিনেমা হল আদৌ কোন নির্মিত সিনেমা হল ছিল না। এটি পটিয়ার পেশাজীবীদের সংগঠন পটিয়া ক্লাবকে সিনেমা হলে রূপান্তরিত করা হয়। পটিয়া ক্লাব ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৪ সালে এমএ কাদের নামের এক ব্যবসায়ী পটিয়া ক্লাবকে ভাড়ায় নিয়ে সিনেমা হল চালাতেন। যার নাম ছিল মুক্তি সিনেমা হল। তখনকার সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সার্কেল অফিসার) স্যার গ্যাগরী গোমেজ টিনের ছাউনি ও মাটির ঘরে পটিয়া ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতা-উত্তর পটিয়া ছিল মহকুমা। এ মহকুমা শহর দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর ছিল। মহাকুমা প্রশাসক পটিয়া ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে পদাধিকারবলে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সাধারণ সম্পাদকের হাতে রয়েছে নির্বাহী ক্ষমতা। মুক্তি সিনেমা হলে দর্শকরা কাঠের চেয়ারে বসে সিনেমা দেখতেন। যে দিন ক্লাবের সভা থাকত সেদিন সিনেমা হল বন্ধ থাকত। এ ক্লাবে সিনেমা ছাড়াও গান, নাটক, থিয়েটার মঞ্চস্থ হতো। ’৯০-এর পর পটিয়ায় সবুজ সিনেমা ও পরবর্তীতে ছদ্মা সিনেমা নামের আরও দুটি সিনেমা হল চালু হয়। ১৯৯৫-এর ভয়াবহ ভূমিকম্পে চট্টগ্রামের বিবিরহাট এলাকায় হাজী বিল্ডিং ধসে পড়ার পর মুক্তি সিনেমা হলের নড়বড়ে অবস্থার অজুহাত দেখিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কেএম হাবিবুল্লাহর নির্দেশে মুক্তি সিনেমা হল বন্ধের নির্দেশ দেয়। এর পর থেকে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। হলটি ভেঙ্গে খোলা মাঠে পরিণত হয়। নতুন একটি সিনেমা হল ভবন নির্মাণের ব্যাপারে ব্যবসায়ী এমএ কাদের পটিয়া ক্লাবের তৎকালীন সেক্রেটারিকে টাকা দিলেও ভবন নির্মাণ করে একটি হল দেয়নি। এর পর থেকে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তি সিনেমা হলে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবি প্রথম প্রদর্শিত হয়। এটি খুবই দর্শকদের বাজিমাত করে। তখনকার সময়ে টিকেটের মূল্য ছিল প্রথম শ্রেণী ৬.৫০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণী ৪.৫০ টাকা ও তৃতীয় শ্রেণী ৩ টাকা। ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত সিনেমার প্রতি লোকজনের আগ্রহ কমতি ছিল না। ’৯০-এর পর দেশে ভিসিপি চালু হলে ঘরে বসেই সিনেমা দেখতে গিয়ে লোকজন সিনেমার প্রতি আকর্ষণ কমতে থাকে। বর্তমান যুগে মোবাইল ফোনে সিনেমা দেখা যায়। আর সিনেমা হলে যেসব ছবি প্রদর্শিত হয় তা পর্নোগ্রাফিতে ভরা। -বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া থেকে
×