ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যানজটের ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২২ জুলাই ২০১৭

যানজটের ক্ষতি

ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম। শুধু তাই নয়, বিশ্বের যানজটপূর্ণ শহরের শীর্ষ তালিকায়ও রয়েছে ঢাকার নাম। দীর্ঘ পরিকল্পনা ও নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও যানজট নিয়ন্ত্রণে কোন উদ্যোগই কার্যত কাজে আসছে না। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। সংস্থাটি বলেছে, ৩৫ লাখ বস্তিবাসীসহ রাজধানীতে বসবাসরত বেশির ভাগ নাগরিক মৌলিক সেবা, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। গত ১০ বছরে যানবাহন চলাচলের গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে সাত কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে। যা হেঁটে চলার গড় গতির চেয়ে কিছুটা বেশি। প্রতিবেদন বলেছে, প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির সব কর্মকাণ্ড ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় প্রতিনিয়তই চাপ বাড়ছে রাজধানীর ওপর। প্রতিদিন নতুন নতুন গাড়ি নামছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব, সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখানে নাগরিকসেবা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এ কথা সত্য যে, রাজধানীর প্রতিদিনের এক যন্ত্রণার নাম যানজট। কোনভাবেই যেন যানজটকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নগরবাসী বাধ্য হয়েই যেন সয়ে যাচ্ছে যানজটের এই অত্যাচার। ফ্লাইওভার, অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কারবিহীন রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িসহ নানা কারণে এই যানজট তীব্র হচ্ছে। ১০ মিনিটের রাস্তা ১ ঘণ্টায়ও শেষ হচ্ছে না। ঘর থেকে বের হলে কোন্ সময় গন্তব্যে পৌঁছা বা ফিরে আসা যাবে তা বলা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। রাজধানীর যানজট নিরসনে অগ্রাধিকারভিত্তিক কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, কিছু কাজ চলছে। এর মধ্যে ঢাকায় কিছু ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ইতোমধ্যে মহাখালী ফ্লাইওভার, বাসাবো-খিলগাঁও ফ্লাইওভার, বনানী-কুড়িল ফ্লাইওভার, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার চালু হয়েছে। নির্মাণাধীন মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারও আংশিক চালু করা সম্ভব হয়েছে। ফ্লাইওভারগুলো চালু হওয়ার কারণে ঐসব অঞ্চলে যানজট অনেকাংশে কমে এসেছে, যা খানিকটা স্বস্তিদায়ক ও যানজটের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক। তবে পরিধি, লোকসংখ্যা এবং ঢাকামুখী মানুষের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে করে ঢাকার যানজট নিয়ে নতুন করে ভাবা জরুরী হয়ে পড়েছে। ঢাকার যানজটের আরেক কারণ জলাবদ্ধতা। এখন বর্ষাকাল চলছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, তার মানে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী। জলাবদ্ধতা দূর করা না গেলে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। আরেকটা বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। বর্ষাকাল মানেই যেন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির মৌসুম। এ সময় এমনিতেই বৃষ্টি-কাদায় রাস্তার অবস্থা হয়ে যায় চলাচল অনুপযোগী। তার ওপর কোন কোন মহল্লায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চরম দুর্ভোগ বাড়ায় পথচারীদের। যে কোন এলাকায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কাজ চলবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যেন এই সময়টায় না হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। এছাড়া যান চলাচলে শৃঙ্খলা এখনও আসেনি। বেশিরভাগ গাড়িই আইন মেনে চলাচল করে না। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় যান্ত্রিক যানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে রিকশা। অথচ ট্রাফিক আইন মানলেই যানজটের সমস্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। সড়কের তুলনায় বাড়ছে জনসংখ্যা ও যানবাহন। কয়েকটি ফ্লাইওভার হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। এসব প্রকল্প পুরোদমে চালু করা গেলে যে হারে ঢাকায় কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে এবং এতে যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা কিছুটা হলেও রোধ করা যাবে।
×