ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ

নাক গলাচ্ছে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ জুলাই ২০১৭

নাক গলাচ্ছে পাকিস্তান

ভারত-ভুটান, চীন এই ত্রিদেশীয় সংযোগস্থলে চীন-ভারত সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই নয়াদিল্লীতে নিযুক্ত পাকিস্তানী হাইকমিশনার আবদুল বাসিত সেখানের চীনা রাষ্ট্রদূত লু ঝাউহুইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এরপর পাকিস্তানী হাইকমিশনার ভারতে নিযুক্ত ভুটানী রাষ্ট্রদূত ভেটসপ ন্যামগেইলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন জানতে পেরে ভারতীয কর্তৃপক্ষ চিন্তিত। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনৈতিক সূত্র এ খবরের সত্যতা সম্পর্কে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে নিশ্চিত করেছে। আগামী মাস পর্যন্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার আবদুল বাসিত ভারতে অবস্থান করবেন। এরপর তাকে ইসলামাবাদ ফিরে যেতে হবে। এ সময় চীন ও ভুটান দূতের সঙ্গে আর এই বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা। ১৯৬২ সালে যুদ্ধপরবর্তী তিক্ততা, অমীমাংসিত সীমান্ত ও তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামাকে আশ্রয় দানের জন্য ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই ভাল যাচ্ছে না। তার ওপর সম্প্রতি যোগ হয়েছে দোকালা বা দোকলাম সীমান্তে চীনের রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের সৈন্য সমাবেশ। পাকিস্তানী হাইকমিশনার বাসিত চীন ও ভুটান এই দুটি দেশের সঙ্গেই দোকলাম সীমান্ত পরিস্থিতি এবং এ বিষয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান বা মনোভাব সম্পর্কে আলোচনা করবেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া অবগত হয়েছে। দোকলাম সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই ধারণা দিতে চাইছে, চীন ও ভুটানের মধ্যে বিতর্কিত এই সীমান্ত সমস্যার মধ্যে ভারত অযাচিতভাবে ঢুকে পড়েছে এবং গায়ে পড়ে ঝগড়া করছে। পক্ষান্তরে বেইজিংয়ের মতো ভারত তার কূটনীতি বা বিদেশী দূতাবাসগুলোকে এ ধরনের তৎপরতা বা লবিং করার জন্য নিয়োজিত করেনি। এমনকী বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়াকেও এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কোন ব্রিফিং দেয়া হয়নি। শুধু কূটনৈতিকভাবে নয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার দেশের সংবাদ ও গণমাধ্যমগুলোকেও কোন ধরনের উত্তেজনা বা উস্কানিমূলক সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছে। পক্ষান্তরে, চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল টাইমসের এক কলামিস্ট এই মর্মে যুক্তি দেখিয়েছেন, যে কারণ দেখিয়ে ভারত ভুটানের পক্ষ নিয়ে দোকলাম এলাকায় চীনের সড়ক নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে সৈন্য সমাবেশ করেছে ঠিক একই কারণে বন্ধুরাষ্ট্র পাকিস্তানের অনুরোধে চীন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সৈন্য পাঠাতে পারে। দুই দেশের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তানী হাইকমিশনারের এ ধরনের তৎপরতা নতুন দিল্লী কর্তৃপক্ষের মনে নানারূপ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এবং এটিই স্বাভাবিক। ১৯৬৫ ও ’৭১ সালের দু’দুটো যুদ্ধে প্রমাণ হয়ে গেছে, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে একা কোন যুদ্ধে সুবিধা করতে পারবে না, তাই সে কী চীনকে তার পক্ষ নিয়ে খেলার জন্য কোন কূটচাল চালছে, এক কথায় যাকে বলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের কথার প্রতিধ্বনি করে ভারতকে ‘টু এ্যান্ড হাফ ফ্রন্টে’ (আড়াইটি রণক্ষেত্রে) যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে। তিব্বতে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি ॥ উত্তর তিব্বতে বেশকিছু সামরিক যান ও অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করেছে দাবি করেছে চীনের গণমাধ্যম। সিকিম সীমান্তের দোকালায় ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার পটভূমিতে বেজিংয়ে এভাবে চাপ বাড়াতে চাইছে বলে ভারত মনে করে। দোকালায় এক মাস ধরে মুখোমুখি রয়েছে দু’দেশের সেনা। এর মধ্যেই সে দেশের সরকারী সংবাদমাধ্যমে সামরিক প্রস্তুতির বিষয় প্রকাশিত হচ্ছে। সম্প্রতি চীনা সরকারী চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে বড় ধরনের সামরিক মহড়া দেখা গেছে। সরকারী চ্যানেলটির দাবি, তিব্বতের মালভূমিতে ৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ১১ ঘণ্টা ধরে ওই মহড়া চালিয়েছে চীনের সেনারা। এতে তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়েছে। উত্তর তিব্বতের কুনলুন পর্বতের দক্ষিণে একটি এলাকায় বেশকিছু গাড়ি ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে সেনা। রেল ও সড়কপথে অত্যন্ত দ্রত ওইসব অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হয়েছে বলেও দাবি সেনা মুখপাত্রের। তারা জানিয়েছে, সরঞ্জাম পরিবহনের দায়িত্বে ছিল চীনা সেনার ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড। ওই কমান্ডই তিব্বত ও জঙ্গী অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশ নিয়ন্ত্রণ করে।
×