ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ নির্দেশের পরও কাক্সিক্ষত ফল আসছে না

ছাপ্পান্ন মিশনের ৩১টিই রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২২ জুলাই ২০১৭

ছাপ্পান্ন মিশনের ৩১টিই রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি

রহিম শেখ ॥ রফতানি উন্নয়নে বিদেশে কর্মরত মিশনগুলোর প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তৎপরতার নির্দেশ কোন ফল দিচ্ছে না। ফলে রফতানি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বিদেশে দেশের অধিকাংশ মিশন। মোট ৫৬ মিশনের মধ্যে গত অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি ৩১ বাণিজ্যিক মিশনে। এর মধ্যে ৬ মিশনে সবচেয়ে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- প্যারিস, বার্লিন, মাদ্রিদ, জাকার্তা, হ্যানয় ও স্ককহোম। কিন্তু পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। ফলে সামগ্রিকভাবে কমে গেছে রফতানি আয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতানুগতিক দেশের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রফতানি খাত। এজন্য নতুন নতুন দেশের দিকে ব্যবসায়িক পরিসর বাড়াতে হবে। মিশনগুলো এই কাজে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে পারে। জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার। অর্থাৎ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। রফতানির এ আয়ে বড় ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা বৈদেশিক মিশনগুলো। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৫৬টি মিশন রয়েছে। রফতানির ৯৭ শতাংশেরও বেশি আয় হয় এসব মিশনের আওতায় থাকা অঞ্চলগুলো থেকে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ৫৬ মিশন থেকে মোট রফতানি আয় হয়েছে প্রায় ৩৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, যা মোট আয়ের ৯৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ ৫৬ মিশনের মধ্যে ২৫ মিশন রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। আর ব্যর্থ হয়েছে ৩১ মিশন। এর মধ্যে ২৫ মিশনের আয় আগের বছরের আয়ের চেয়েও কম। এগুলো হলো- দিল্লী, লন্ডন, ওয়াশিংটন, টোকিও, তেহরান, ক্যানবেরা, ব্রাসেলস, অটোয়া, ইয়াঙ্গুন, দুবাই, জেনেভা, থিম্পু, আম্মান, মালে, মেক্সিকো সিটি, নাইরোব, ত্রিপোলি, দারুসসালাম, প্রিটোরিয়া, কুয়েত, ব্রাসেলিয়া, আঙ্কারা, মানামা, দোহা ও সিউল। এর মধ্যে বৃহৎ ও প্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন মিশনের গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয়ের। কিন্তু আয় হয়েছে ৫৮৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ অঞ্চল থেকে আয় হয়েছিল ৬২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এ বছর আয় কমেছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। একক বাজার হিসেবে আরেক বৃহৎ বাজার যুক্তরাজ্য। দেশটিতে থাকা লন্ডন মিশনের (আয়ারল্যান্ডসহ) গত অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রফতানি। কিন্তু অর্জন হয়েছে ৩৭৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর আগের অর্থবছরে একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। কানাডার অটোয়া মিশনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আগের বছর থেকে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ রফতানি কম হয়েছে। জাপানের টোকিও মিশনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং আগের বছর থেকে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ রফতানি কম হয়েছে। তবে ছয়টি মিশন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও তাদের রফতানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে। এগুলো হলোÑ প্যারিস, বার্লিন, হ্যানয়, মাদ্রিদ, জাকার্তা ও স্টকহোম। এর মধ্যে বড় বাজার স্পেনের মাদ্রিদ মিশনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১০ দশমিক ২ শতাংশ কম হলেও আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে। আর ফ্রান্সের প্যারিস মিশনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ কম হলেও আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে। যদিও ইপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মিশনভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় দেশের রফতানির চিত্র আশাব্যঞ্জক বলা যায়। কিছু মিশন পিছিয়ে পড়লেও অনেক মিশন ভাল করছে। তারা বলেন, মিশনগুলোর কাজ হলো, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ করে দেয়া। বাকি কাজটা করতে হবে ব্যবসায়ীদের। দ্বিপক্ষীয় সংযোগ ঘটানোই মিশনগুলোর প্রধান ভূমিকার বিষয়। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রফতানি আয় করতে পারা ২৫ মিশন হলো- বেজিং, মস্কো, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, কায়রো, ভিয়েনা, এথেন্স, হংকং, বাগদাদ, রোম, বৈরুত, পোর্ট লুই, রাবাত, হেগ, মাস্কাট, ম্যানিলা, লিসবন, কোপেনহেগেন, রিয়াদ, কলম্বো, কাঠমান্ডু, ইসলামাবাদ, ব্যাংকক, তাসখন্দ ও ওয়ারশ। যদিও এ মিশনগুলোর অধিকাংশই অপ্রচলিত ও ছোট বাজার। এদিকে বর্তমানে ৫৬ মিশনের মধ্যে ১৮ গুরুত্বপূর্ণ মিশনে কমার্শিয়াল উইং রয়েছে। এগুলো থেকে অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ২৬৫০ কোটি ২৫ লাখ ডলার, যা মোট রফতানি আয়ের ৭৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। এই ১৮ ইউংয়ের মধ্যে শুধু ৪ উইং তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। এগুলো হলো- বার্লিন, বেজিং, মস্কো, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুর। আর ব্যর্থ হওয়া ১৪ উইংয়ের মধ্যে ছয়টির রফতানি আয় আগের বছরের এ সময়ের চেয়ে বেশি হয়েছে। এগুলো হলো- প্যারিস, বার্লিন, মাদ্রিদ, জাকার্তা, হ্যানয় ও স্টকহোম। আর ১১ উইং লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারেনি, আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধিও করতে পারেনি। এগুলো হলো- ক্যানবেরা, ব্রাসেলস, অটোয়া, দিল্লী, তেহরান, টোকিও, ইয়াঙ্গুন, জেনেভা, দুবাই, লন্ডন ও ওয়াশিংটন।
×