ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়খেকোরা বহাল তবিয়তে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২২ জুলাই ২০১৭

পাহাড়খেকোরা বহাল তবিয়তে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে নিহতের ঘটনায় পুলিশী আইন ও পরিবেশ আইনের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয় না। গত ১২ ও ১৩ জুনে পাহাড়ের মাটিধসে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের খাতায় কোন হত্যা মামলা দায়ের হয়নি। তবে দফায় দফায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। এদিকে, সিএমপির খুলশী ও বায়েজিদ থানা এলাকায় ভূমিদস্যুদের নির্দেশে পাহাড় কাটা ও ধসের ঘটনায় ২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে প্রায় অর্ধসহস্র মৃত্যুর ঘটনায়ও থানায় অপমৃত্যুর মামলা ছাড়া হত্যা মামলা দায়ের হয়নি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জেলার বাইরে সীতাকু-ের জঙ্গল সিলিমপুরে এক পরিবারের আত্মীয়স্বজনসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় সীতাকু- থানা পুলিশ শুক্রবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপমৃত্যু মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে সীতাকু-ের এসিল্যান্ড মোহাম্মদ রুহুল আমীন জনকণ্ঠকে জানান, পাহাড় যারা কাটায় তাদের পাওয়া যায় না কেয়ারটেকারের কারণে। আর পাহাড়ের মাটি যারা কাটে তারা মূলত কেয়ারটেকারের নির্দেশনায় চলে। কর্তনকৃত পাহাড়ের মাটিধসের ঘটনায় মারা যায় হতদরিদ্র ও নিরীহ শ্রেণীর মানুষ। কম পয়সার মানুষ হওয়ার কারণে এ শ্রেণীকে উচ্ছেদ অভিযান ও শত মাইকিং করেও সরানো যায় না ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে। এদিকে পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে কোন ধরনের মামলা দায়ের না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের প্রাক্কালে উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা দেয়া হয়। মাইকিং করা হয় লোক দেখানো। জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকও হয়। মসজিদের মাইকে মাইকে ঝুঁকিপূর্ণদের সরে আসতে বলা হলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না অপরাধীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, তদন্তের ঝামেলা থেকে পুলিশ ও পরিবেশ অধিদফতর নিজেদের বাঁচাতে চায়। ফলে মামলা হয় না। পরিবেশ অধিদফতর মামলা করতে পারে পাহাড়ের মালিকানা অনুযায়ী মালিকের বিরুদ্ধে। যেহেতু পাহাড়ের মালিকই সমতলের উদ্দেশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। কিন্তু তা করছে না কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাহাড় কাটার তথ্য থাকার পরও নির্দেশদাতা কিংবা ঘটনাস্থলে থাকা কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে কোন মামলা করার নজির নেই। তবে পুলিশ পাহাড় কাটার সময় বেলচা, কোদাল ও শাবলসহ দিনমজুরদের ধরে এনে অর্থ আদায়ের মাধ্যমেই ছেড়ে দেয়ার ঘটনা অহরহ। প্রশ্ন উঠেছে, কেন পাহাড় কাটবে না ভূমিদস্যুরা। আইনের লোক ও প্রশাসনের লোকের অর্থ বাণিজ্য ও দায়িত্বহীনতার কারণেই পাহাড়ের মাটি যেমন কাটা হচ্ছে, তেমনি ভূমিধসের ঘটনাও ঘটবে। আইনের ফাঁকে বেঁচে যাবে রাঘববোয়ালরা। ২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাইরে বিভিন্ন পাহাড়ের মাটিধসের ঘটনায় বান্দরবানের লামা ও কক্সবাজারের মহেশখালী থানায় প্রায় অর্ধশত অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু পাহাড় কর্তনের মাধ্যমে যারা পাহাড়ের পাদদেশে ভাড়া বাণিজ্য ও ভূমি বাণিজ্য চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। আরও অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়ের মাটিধসের পেছনে মূল কারণ হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে ভূমি দখলের অপচেষ্টা। ভূমিদস্যুরা রাজনৈতিক ও পেশীশক্তি ব্যবহার করে সরকারী পাহাড় দখলে নিয়ে যুগ যুগ ধরে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল। এসব পাহাড় কাটার পেছনে যে সিন্ডিকেট রয়েছে, এর মধ্যে পুলিশেরও সম্পৃক্ততা থাকায় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার দাবি করতে পারছে না থানা পুলিশের কাছে। পুলিশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখিয়ে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ধসের ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।
×