ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৩০টি আসন ছাড়তে চায় বিএনপি, শরিকরা চাচ্ছে ৬০টি

আসন বণ্টন নিয়ে ২০ দলীয় জোটে মন কষাকষি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২২ জুলাই ২০১৭

আসন বণ্টন নিয়ে ২০ দলীয় জোটে মন কষাকষি

শরীফুল ইসলাম ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আসন বণ্টন নিয়ে বিএনপি জোটে মন কষাকষি চলছে। বিএনপি চাচ্ছে শরিকদের সর্বোচ্চ ৩০টি আসন ছাড়তে। আর শরিকরা চাচ্ছে ৬০টি আসন। নির্বাচনের আগেই আসন বণ্টনের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে ফয়সালা চান ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা। কিন্তু জোটের কোন দলকেই প্রত্যাশিত আসন দিতে পারছে না বিএনপি। তবে সবাইকে আসন দেয়া সম্ভব না হলেও ক্ষমতায় গেলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, প্রাথমিক আলোচনায় বিএনপি জোটের শরিক দল জামায়াত একাই দাবি করছে ৩১টি আসন। এছাড়া এলডিপি ১০টি, বিজেপি ২টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ১টি, লেবার পার্টি ১টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে ১টি, কল্যাণ পার্টি ৩টি, জাতীয় পার্টি (জাফর) ৫টি, খেলাফত মজলিস ১টি, এনডিপি ১টি, মুসলিম লীগ ১টি, ন্যাপ ভাসানী ২টি ও জাগপা ১টি আসন দাবি করছে। কিন্তু বিএনপি জামায়াতকে সর্বোচ্চ ১৫টি, এলডিপিকে ২টি, বিজেপিকে ১টি, বাংলাদেশ ন্যাপকে ১টি, লেবার পার্টিকে ১টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে ১টি, কল্যাণ পার্টিকে ১টি, জাতীয় পার্টিকে (জাফর) ৩টি, খেলাফত মজলিসকে ১টি, এনডিপিকে ১টি, মুসলিম লীগকে ১টি, ন্যাপ ভাসানীকে ১টি ও জাগপাকে ১টি আসন দিতে চাচ্ছে। সূত্রমতে, ২০ দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও ইতোমধ্যেই জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে প্রাথমিকভাবে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। মনোনয়ন পেতে জোট নেতাদের কেউ কেউ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে তারা নিজ নিজ এলাকার সঙ্গেও যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। এদিকে প্রাথমিক আলোচনায় আসন বণ্টন নিয়ে দর কষাকষি করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই জোট নেতাদের মধ্যে মন কষাকষিও হয়েছে। শীঘ্রই আবারও জোট নেতাদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে কথা হবে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করবে বিএনপি। এর আগে জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর বিজয়ী হওয়ার মতো জোটের সুপরিচিত ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করবে। জানা যায়, জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও বিএনপি দলীয়ভাবে ২৭০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বাকি ৩০টি আসন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের দেয়ার প্রস্তুতি থাকলেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এখনও নিরাশ করা হচ্ছে না। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের বাইরের সমমনা কোন দল জোটের সঙ্গে নির্বাচনে আসলে বিএনপি ২৭০ আসন থেকে আরও ক’টি আসন ছেড়ে দেবে। আর শেষ পর্যন্ত জোটের শরিকরা না মানলেও বিএনপির নির্ধারিত আসন থেকে আরও ক’টি আসন ছাড়বে। এসব বিষয়ে লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের মতামত নেবেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি যে খসড়া প্রার্থী তালিকা করেছে তাতে অধিকাংশ সংসদীয় আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম রয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় রেখে নির্বাচনের তফসিলের পর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তবে আসন বণ্টন নিয়ে জোটের শরিকদের দর কষাকষি এবং নিজ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অতিমাত্রায় দৌড়ঝাঁপ বিএনপি হাইকমান্ডকে এখনই ভাবনায় ফেলেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে রাজনীতির একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আর মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে বড় দলের সঙ্গে ছোট দলের দর কষাকষি করতে গিয়ে মন কষাকষিও হতে পারে। তবে নির্বাচনের আগে এই মন কষাকষি আর থাকবে না। কারণ, যাদের নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে তাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে জোটের শরিকদেরও লক্ষ্য রাখতে হবে বিএনপির মতো একটি বড় দলে সব নির্বাচনী এলাকায়ই একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তাই বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে সব জায়গায় জোটের শরিক দলকে আসন ছাড়া হয়ত সম্ভব হবে না। তাই জোটের স্বার্থেই সবাইকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আসন বণ্টনের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিতে হবে। এ বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। পরবর্তীতে আরও আলোচনা হবে। ২০ দলীয় জোটের যোগ্য নেতারা মনোনয়ন পাবেন এমন আশা করা হচ্ছে। অনেকেই প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমি নিজেও নরসিংদী-৩ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। উল্লেখ্য, ২০০০ সালে জামায়াত, বিজেপি ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চারদলীয় রাজনৈতিক জোট গঠন করে বিএনপি। ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয় বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোটের ভরাডুবি হলে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকা বিএনপি নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল জোটের পরিধি বৃদ্ধি করে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে। পরে আরও ২টি দলকে নিয়ে করা হয় ২০ দলীয় জোট। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটগতভাবেই নির্বাচন করবে বিএনপি। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে ৩১টি আসন দেয় বিএনপি। আর বিজেপিকে সাতটি এবং ইসলামী ঐক্যজোটকে দেয়া হয় ছয়টি আসন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে জামায়াতকে ৩৫টি, বিজেপিকে দু’টি, ইসলামী ঐক্যজোটকে দু’টি এবং জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে দু’টিসহ শরিকদের ৪১টি আসন দেয়া হয়। তবে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় ২০ দলীয় জোটসহ সমমনা দলগুলোও নির্বাচনে যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বগুড়া-৭ (গাবতলি) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এ ছাড়াও তিনি ফেনী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকা এই ৪ জেলার যে কোন ২টি আসন থেকে নির্বাচন করবেন। আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও সদর আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এছাড়া অসুস্থ নন দলের অন্য প্রভাবশালী সিনিয়র নেতারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে যেখান থেকে অংশ নিয়েছেন এবারও সেখানেই তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে অন্তত ১০০ আসনে এবার বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন করবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়টি লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঠিক করবেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াত এবার প্রাথমিকভাবে ৩১ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। নবম জাতীয় সংসদে জামায়াত যে ৩৫টি আসনে নির্বাচন করেছে সেগুলো থেকেই এবার ৩১টি আসন চায় তারা। তবে ২০ দলীয় জোটের আসন বণ্টন চূড়ান্ত হওয়ার পর জামায়াতের প্রার্থীরা প্রস্তুতি আরও জোরদার করবে। এছাড়া যেসব আসনে তারা মনোনয়ন পাবে না সেখানে জোট মনোনিত অন্য প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবে। এবার জামায়াতের কোন নেতা কোন এলাকা থেকে প্রার্থী হচ্ছেন কৌশলগত কারণে দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে না। তবে ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমানসহ বেশ ক’জন জামায়াত নেতা ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে এবার জামায়াতের নিবন্ধন না থাকায় জোটের সমর্থনে স্বতন্ত্র হিসেবেই নির্বাচন করতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি ড. অলি আহমদ চট্টগ্রাম-১৩ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এছাড়া কুমিল্লা-৭ আসন থেকে দলটির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল করিম আব্বাসীর নেত্রকোনা-১, আবদুল গনি মেহেরপুর-২ ও আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান জয়পুরহাট-২, অধ্যাপক মোঃ আব্দুল্লাহ চাঁদপুর-৪, নুরুল আলম চট্টগ্রাম-৭, কফিলউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৫ ও কামালউদ্দিন মোস্তফা মাগুরা-২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইছেন। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম চট্টগ্রাম-৫ আসন দলের মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান পাবনা-১ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ইকবাল হাসান মাহমুদ নারায়ণগঞ্জ-২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ভোলা-১ ও তার ছোট ভাই আশিকুর রহমান ভোলা-২ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জমিয়তের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস যশোর-৫, শাহীনুর পাশা চৌধুরী সুনামগঞ্জ, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি (সাবেক মন্ত্রী শফিকুল গনি স্বপনের ছেলে এবং মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নাতি) নীলফামারী-১, মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া নরসিংদী-৩, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি চৌধুরী গাইবান্ধা-৩, মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার পিরোজপুর-১, প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিঙ্কন কুষ্টিয়া-২, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের হবিগঞ্জ-৪, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান খান (মোনায়েম খানের ছেলে) কিশোরগঞ্জ-৫, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা পাবনা-২, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান পিরোজপুর-২, ন্যাপ ভাসানীর এ্যাডভোকেট আজাহারুল ইসলাম গাইবান্ধা-৫, জাগপা সভাপতি প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে জাগপার সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার তাসনিয়া প্রধান দিনাজপুর-৩ অথবা পঞ্চগড়-২, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান পিরোজপুর-২ থেকে র্র্নিাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
×