ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈধ পাসপোর্ট ছাড়াই তিন বছর লন্ডনে বাস করছেন তারেক রহমান

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২২ জুলাই ২০১৭

বৈধ পাসপোর্ট ছাড়াই তিন বছর লন্ডনে বাস করছেন তারেক রহমান

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করলেও তিন বছর ধরে তার কাছে বাংলাদেশের কোন বৈধ পাসপোর্ট নেই। তিনি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে কোন আবেদনও করেননি। তবে সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি হিসেবে তাকে ফিরিয়ে আনতে আইনী প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের অভিবাসন স্ট্যাটাসের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান বাংলাদেশী পাসপোর্টটির বৈধতা হারিয়েছেন। সে কারণে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনেও সে সময় মালয়েশিয়া যেতে পারেননি তিনি। তারেক ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে যাওয়ার পর ওই বছরের ডিসেম্বরে তার পাসপোর্ট সর্বশেষ নবায়ন করেন। তার মেয়াদ ২০১৩ সালে শেষ হয়। এরপর তিনি পাসপোর্ট ব্রিটিশ সরকারের কাছে জমা দেন। পরবর্তীতে সেই পাসপোর্টটি ব্রিটিশ সরকার লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে হস্তান্তর করে। তবে সেটা নবায়ন করতে কখনই তারেক রহমান লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেননি। এছাড়া তারেক রহমান এখনও কোন ব্রিটিশ পাসপোর্টও পাননি। তারেক রহমান কোন স্টাট্যাসে লন্ডনে অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে নেই। লন্ডনে অবস্থানের কারণে ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তখন কুয়ালালামপুরে যেতে পারেননি। তিনি প্রায় ৯ বছর ধরে যুক্তরাজ্যেই অবস্থান করছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বুধবার জানিয়েছেন, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে আইনী প্রক্রিয়া চলছে। তারেক রহমানের বিষয়ে আমরা ইন্টারপোলকে জানিয়েছি। তিনি একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, এখন ফেরারি। তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলবে। একই দিনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারেক রহমান ব্রিটিশ সরকারের কাছে তিন বছর আগে তার পাসপোর্টটি জমা দেন। ওই পাসপোর্টটি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে এখন সরকারের কাছে আছে। একাধিক মামলার আসামি এবং সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে ফিরিয়ে দিতে কয়েকবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলেও গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে ব্রিটিশ সরকার তা অগ্রাহ্য করে আসছে। কিন্তু তারা যে ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন সেটি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেছেন, তারেক রহমানের বর্তমান অভিবাসন স্ট্যাটাস নিয়েও আমাদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য নেই। আমাদের ধারণা, রাজনৈতিক আশ্রয়ের মাধ্যমে সাময়িক ব্যবস্থায় তারেক লন্ডনে আছেন। ২০০৮ সালে জরুরী অবস্থার সময় গ্রেফতার তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাড়ি দিলেও সেখানে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে তিনি অংশগ্রহণ করে আসছিলেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ ডজনখানেক মামলা মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে ফিরিয়ে আনতে অনেক দিন ধরেই তৎপরতা চালাচ্ছে বর্তমান সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিকার আহ্বানের ফলে যুক্তরাজ্য সরকারও তারেকের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। যদিও চিকিৎসাকেই অবস্থানের কারণ হিসেবে দেখিয়ে আসছেন তিনি। ২০০৮ সালে জরুরী অবস্থার সময় গ্রেফতার তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাড়ি দিলেও সেখানে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে তিনি অংশগ্রহণ করে আসছিলেন। মামলায় পলাতক থাকা তারেকের বিভিন্ন বক্তব্যে বিতর্কের ঝড় বইলে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের আদালত তার বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন তারেকের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরসহ সংশ্লিষ্ট সব কার্যালয়ে তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির পররাষ্ট্র দফতরে চিঠিও দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী স্বাক্ষরিত চিঠি লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়। সেখান থেকে চিঠিটি তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, তারেক লন্ডনে যাওয়ার পর আর দেশে ফেরত আসেননি। তিনি আইনের চোখে একজন পলাতক আসামি। লন্ডনে তিনি (তারেক রহমান) তার অবস্থানের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছেন যার ফলে বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং স্বার্থ ক্ষুণœ হচ্ছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালে যখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন তখন তাকে হত্যা করার চেষ্টা মামলায় তারেক রহমান একজন অভিযুক্ত এবং বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামাত জোট দেশে যে সহিংস তা-ব চালিয়েছে তার একজন প্রধান হোতা হিসেবে তিনি কাজ করেছেন এবং বর্তমান সরকারকে বিশৃঙ্খলা ও অবরোধ সৃষ্টির মাধ্যমে উৎখাত করার জন্য তারেক বিভিন্ন ধরনের ভিডিও বার্তা ও অন্যান্য উপায়ে ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, লন্ডনে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার, খুনী ও পাকবন্ধু’ ও ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের বেআইনী প্রেসিডেন্ট ও তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করে ইতিহাস বিকৃতির অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। এর আগে লন্ডনে একাধিকবার তারেক রহমান বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে ইতিহাস বিকৃতি করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। ২০১৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডনে বিএনপির এক জনসভায় তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার, খুনী ও পাকবন্ধু’ বলে অভিহিত করেন। তার এ মন্তব্যে সরকারসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন মহলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই বক্তব্যে তিনি তার বাবা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি বলেও দাবি করেন। ওই বক্তৃতায় ‘স্বাধীনতার ঘোষণা আসার আগে ইয়াহিয়া খানকে প্রেসিডেন্ট মেনে নিয়ে সমঝোতা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু’ এমন মন্তব্যও করেন বিএনপির এই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। এছাড়া ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিনিস্টারে বিএনপির কর্মসূচী পালনের জন্য হল ভাড়া নিয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগও ওঠে। বিএনপির এক নেতার কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে সেই হল ভাড়া পরিশোধ করা হয়। একই সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড থেকেও টাকা সরিয়ে ফেলা হয়। এ নিয়ে সে সময় বিএনপি থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। উল্লেখ্য, বিএনপি নেতা তারেক রহমানের মা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে দুই মাস অবস্থান করবেন। সে কারণে লন্ডনে তারেক রহমানের অভিবাসন স্ট্যাটাসের বিষয়টি আবারও সামনে চলে এসেছে।
×