ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নুরুল করিম নাসিম

আমার প্রথম প্রকাশিত বই

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২১ জুলাই ২০১৭

আমার প্রথম প্রকাশিত বই

খুব মনে পড়ে। আমার প্রথম প্রকাশিত বইটির কথা খুব মনে পড়ে। প্রথম বইটি ছিল ছোট গল্পের সঙ্কলন। নাম ‘যে যার ভূমিকায়।’ এই নামে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সাহিত্য সাময়িকীতে একটি গল্প ছেপেছিলেন সাময়িকী সম্পাদক কবি আহসান হাবিব। কী কারণে যেন বন্ধুবান্ধব শিল্প সহযাত্রী সবাই এই শিরোনামটি পছন্দ করলেন। আমারও মনে ধরেছিল এই নামটি। প্রথম প্রকাশিত বইয়ের কথা এত বছর পরেও খুব মনে পড়ে। প্রথম বই অনেকটা প্রথম প্রেমের মতো, ইচ্ছে করলেই ভুলে যাওয়া যায় না, শত চেষ্টাতেও মুছে ফেলা যায় না। ‘যে যার ভূমিকায়’ প্রকাশিত হয়েছিল, ১৯৭৯ সালে। বাংলা বাজারের এক তরুণ প্রকাশক রহুল আমিন বাচ্চু রুনা প্রকাশনী থেকে বইটি বের করেছিলেন। ৬ ফর্মার অর্থাৎ ৯৬ পৃষ্ঠার শীর্ণকায় একটি গল্পগ্রন্থ, দাম রাখা হয়েছিল ৮ টাকা। আমার লেখালেখি শুরু করার প্রায় ১০ বছর পর প্রথম বই। ভাবা যায়! আজকের প্রজন্ম কত সহজে পয়সা থাকলেই বই ছাপতে পারছে তখন, সেই সত্তর দশকে প্রধানতম দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকী অথবা প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য পত্রিকায় (সমকাল কণ্ঠস্বর) লেখা ছাপা না হলে কেউ লেখক বলে স্বীকৃতি পেতেন না। আজকের মতো স্বঘোষিত কবি- গল্পকার-সম্পাদক, প্রকাশক তখন ছিল না। আমার প্রথম বই ছাপতে কোন পয়সা প্রকাশককে দিতে হয়নি। শুনতে পাই, আজকাল নতুন লেখকরা প্রকাশকদের পয়সা দিয়ে বই ছাপেন। বইয়ের মান যেমনই হোক, সেসব বিষয় মুখ্য নয়। আমার গল্পগ্রন্থটিতে মোট দশটি গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আমি বাছাই করে দিয়েছিলাম। প্রায় সব গল্প দৈনিক বাংলার সাহিত্য সাময়িকী দৈনিক সংবাদ সাহিত্য সাময়িকী (তখন সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন আবুল হাসনাত) দৈনিক ইত্তেফাক সাহিত্য সাময়িকী (সাহিত্য- সম্পাদক আল মুজাহিদী) কণ্ঠস্বর-এ (সম্পাদক, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ) ছাপা হয়েছিল আগেই। ‘যে যার ভূমিকায়’ গল্পগন্থটির প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন মাহবুব আখন্দ। এখন সে কোথায় আছে, কি করছে জানি না। খুব যতœ নিয়ে চমৎকার দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ সে এঁকেছিল। প্রকাশিত ১০টি গল্পের রচনাকাল ১৯৭২-৭৯ সালের মধ্যবর্তী সময়। সেই সময়কার দেশ, সমাজ, ব্যক্তি মানুষের জীবন, ছাত্র রাজনীতি সবকিছু আন্তরিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে চেষ্টা করেছি। শব্দ, বাক্য ইত্যাদি নিয়ে এখন যেমন, তখনও খুব চিন্তাভাবনা করতাম। যেহেতু কবিতা দিয়ে আমার যাত্রা যেহেতু আমার ভেতর কবিতা ও নাটকের বসবাস ছিল, শুরু, শব্দ ও বাক্য বিষয়ে একটা খুঁতখুঁতে ভাব সবসময়ই আমাকে ব্রিবত ও উদ্বিগ্ন রাখত। সমাজ ও সময়কে আমি ফাঁকি দিইনি। হয়তো গল্পগুলো তেমনভাবে লিখতে পারিনি, কিন্তু আমার আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি ছিল না। কোন ফাক ও ফাঁকি ছিল না। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে প্রকাশিত আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রধান দৈনিকগুলোর সাহিত্য সাময়িকীর বই আলোচনা বিভাগে অগ্রজ গল্পকার শহীদ আখন্দ, আল মুজাহিদী, আবু শাহরিয়ার প্রমুখরা প্রশংসা করেছেন। এরপর আরও ৩টি গল্পগ্রন্থ পরবর্তী ৩০ বছরের সময়সীমায় বের হয়েছে। কিন্তু প্রথম প্রকাশিত বইয়ের মতো উত্তেজনা ও তৃপ্তি অনুভব করিনি। তখন আজকের দিনের মতো এত গোষ্ঠী প্রীতি, এত দলবাজি, এত বিভাজন ছিল না। ভাল গল্পের এবং ভাল গদ্যের অভাব তখনও ছিল, কিন্তু তার ভেতরেও আমাদের লেখালেখির কাজটি নিরন্তর চলতো। লেখকদের নির্মল আড্ডা হতো। কামাল বিন মাহতাব (ক্যাপ্টেন) সম্পাদিত ‘ছোটগল্প’, আনোয়ার আহমেদ সম্পাদিত কিছুধ্বনী, রফিক নওশাদ সম্পাদিত সূচীপত্র (লিটন ম্যাগ) ঘিরে গল্পলেখার আবহ গড়ে উঠেছিল। গল্পের বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে কিছু কিছু নিরীক্ষাও আমরা করার প্রয়াশ পেয়েছি।
×