ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরী

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২১ জুলাই ২০১৭

সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরী

উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে দেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রায় নারীর অবস্থান এবং ক্ষমতায় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। সমাজের অর্ধাংশ হিসেবে নারীরা যে কোনভাবেই পিছিয়ে নেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বিভিন্ন কর্মকা-ে অংশগ্রহণ আর কর্তৃত্বের কাঠামোয় অংশীদারিত্ব দুটোই আলাদা জিনিস। সমৃদ্ধির প্রায় ক্ষেত্রেই নারীর সক্রিয় সম্পৃক্ততা দৃশ্যমান। কিন্তু পাশাপাশি স্বাধীনতা, অধিকার এবং মর্যাদার বিষয়গুলো উপেক্ষিত হলে শুধু অংশগ্রহণের আলোকে ক্ষমতায়ন নির্ধারণ করা যায় না। তার ওপর বিভিন্ন জরিপে উঠে আসা নারী নির্যাতনের সচিব প্রতিবেদন সমাজে নারীর অবস্থানকে সবার সামনে তুলে ধরে। সময়ের দাবিতে, প্রয়োজনের তাড়নায়, সমাজের চাহিদায় নারীরা আজ পরিবারের ক্ষুদ্রতর গ-ি থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর সামাজিক আঙ্গিনায় নিজেদের সক্রিয় ভূমিকা জোরদার করেই চলেছে। এর পরও শুধুমাত্র অংশগ্রহণই ক্ষমতা নির্ণয়কের একমাত্র চাবিকাঠি নয়। মতামত দেয়ার অধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কতখানি অর্জিত হয়েছে কিংবা আদৌ হয়েছে কিনা তাও বিবেচনার দাবি রাখে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে গ্রামীণ নারীদের কর্মযোগ উৎপাদনে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। ফসল বোনা থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত যাবতীয় কর্মপ্রক্রিয়ায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমান দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু এই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নারী কৃষকের মূল্যায়ন কি তার পুরুষ সহকারীর সমপর্যায়ে প্রথমেই দৃষ্টিগোচর হয় শ্রমমজুরির বৈষম্য। নারী হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের অধিকারও সে পায় না। পুরুষ কৃষকেরাও যে আইনী প্রক্রিয়ায় প্রাপ্য মজুরি পেয়ে থাকে তাও কিন্তু নয়। কিন্তু নারীদের তুলনায় তারা সব সময়ই বেশি শ্রমমজুরি পেয়ে থাকে। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে বিত্ত-নির্বিত্তের ফারাক তো থাকেই তার ওপর লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হতে হয় এবং যার দাম দিতে হয় নারীকেই। পরবর্তী পর্যায়ে নিজের উপার্জিত টাকার ওপর তার অধিকার কতখানি বজায় থাকে। উপার্জন করার সুবাদে সংসারেই বা তার কর্তৃত্ব কতখানি? এসব প্রশ্ন আসতেই পারে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে বের হয়ে আসে সাংসারিক প্রয়োজনেই তাকে উপার্জন করতে হয় এবং সে চাহিদাই তার টাকা খরচও হয়ে যায়। অভাব-অনটনের সংসারের ঘানি টানতে শ্রম, অর্থ সময়, শক্তিÑ সবই একজন নারীকে নিঃশেষে বিলিয়ে দিতে হয়। আর এসব সে নিজের দায়িত্ব আর কর্তব্যবোধ থেকেই করে। অধিকার, স্বাধীনতা আর মর্যাদার মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো কখনও একজন সাধারণ নারীর মাথায় কাজ করে না। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত শ্রমজীবী নারীরা বুঝতেও পারে না তাদের অধিকার আর মর্যাদার অপরিহার্য বিষয়গুলো কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয় নারীদের অধিকার হরণ, তার ওপর হয়ে যাওয়া নির্যাতনের মাত্রা সর্বোপরি পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে নিগৃহীতার নির্মম চিত্র। এ তো গেল সমাজের সুবিধাঞ্চিত অঞ্চলের নারী নিপীড়নের দুঃসহ ব্যাপার। অপেক্ষাকৃত ভাল আর সচ্ছল পরিবেশে নারীদের সামাজিক অবস্থান কি তার চারপাশের অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এখানেও ভিন্নমাত্রার কোন দৃশ্য চোখে পড়ার মতো নয়। শহরাঞ্চলের শিল্প এলাকায়ও যদি নারীর ক্ষমতায়ন বিবেচনায় আনি সেখানেও দেখা যাবে অনিয়ম আর বৈষম্যের বহুমাত্রিক সমস্যা। পোশাক শিল্প খাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অগ্রগতির সমস্ত সূচককে পেছনে ফেলে রাখে। আর এই পোশাক শিল্পের প্রধান নির্ণায়ক শক্তি নারী শ্রম। এখানে নারী শ্রমের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করা হয় না বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠে আসে। ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে শোষণ আর বঞ্চনার শিকার মূলত সব শ্রমিকরাই। কিন্তু অসহায় এবং দুর্বল হিসেবে নারীরাই সিংহভাগ দুর্ভোগের শিকার হয়। শুধু প্রতিষ্ঠান নয় সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে নারীরা তাদের যথার্থ সম্মান আর অধিকারও পায় না। এটাই শ্রেণী বিভক্ত সমাজের অপরিহার্য গতি আর পরিণতি। নারীদের মধ্যে যারা একটু গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অবস্থানে তারা কিছুটা হলেও তাদের ক্ষমতাকে কর্মক্ষেত্র এবং পারিবারিক জীবনে প্রয়োগ করতে পারে। শিক্ষক, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা বাহিনীতে পেশাজীবী নারী, বিভিন্ন গণমাধ্যম নারী কর্মী তাদের সামাজিক অবস্থানকে মজবুত করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সফলও হচ্ছে নিজেদের প্রমাণ করতে। যদিও তাদের সংখ্যা পুরো জনগোষ্ঠীর তুলনায় নগণ্য। নারীর এই পিছিয়ে পড়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শুধু উৎপাদনেই সার্বিক অংশগ্রহণ নয় শিক্ষাকেও সমান গুরুত্বের সঙ্গে সামনে নিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরী। নারীর ক্ষমতাকে সংহত এবং যথার্থ করতে নারী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। গ্রামগঞ্জে, শিল্প-কারখানায় উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী শিক্ষার অভাবে জানতেই পারে না তাদের অধিকার কতখানি, আইনগতভাবে কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করতে পারে সর্বোপরি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিজের জায়গা কিভাবে মজবুত করা সম্ভব। সুতরাং এ সবই জানতে পারে একজন সচেতন এবং সুশিক্ষিত নারী। নিজের সামাজিক ভূমিকাকে জোরালো অবস্থায় নিয়ে আসতে নারীকেই তার যাবতীয় অধিকার এবং স্বাধীনতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা অতি আবশ্যক। শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হলে অজ্ঞানতার সমস্ত অর্গল খুলে যেতে বেশি সময় নেবে না। অপরাজিতা ডেস্ক
×