ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব

এবার তাজিকদের মুখোমুখি বিধ্বস্ত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২১ জুলাই ২০১৭

এবার তাজিকদের মুখোমুখি বিধ্বস্ত বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ আগের ম্যাচে জর্দান যেন বলে-কয়ে গর্দান নিয়েছে। পরের ম্যাচে কী তাজিকদের বিরুদ্ধে ম্যাজিক দেখাতে পারবে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ অনুর্ধ-২৩ জাতীয় ফুটবল দল? এই প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আজ শুক্রবার রাতে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় খেলা শুরু হবে, ফিলিস্তিনের হেবরনের দুরা স্টেডিয়ামে যেখানে বাংলাদেশ যুব দল মোকাবেলা করবে তাজিকিস্তানের। এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম পরীক্ষায় ‘ডাহা ফেল’ মেরেছিল লাল-সবুজরা। জর্দানের কাছে তারা শোচনীয়ভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল ০-৭ গোলে। জর্দানের চেয়ে আরও শক্তিধর প্রতিপক্ষ তাজিকরা। বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমীরা তাই শঙ্কায় আছেনÑ এই ম্যাচে না বাংলাদেশ দল আবার ১৪ গোল খেয়ে বসে। এ প্রসঙ্গে অতুল ওয়াহিদ হেমন্ত নামের এক রসিক ফুটবলপ্রেমী মন্তব্য করেন, ‘ব্রাজিলও সাত গোল খায়, বাংলাদেশও সাত গোল খায়! তবে তফাতটা হলো ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতে, আর বাংলাদেশ সাফ অঞ্চলেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না। জর্ডান-বিপর্যয় শেষ। এবার তাজিক-ধাক্কা কিভাবে সামাল দেয়া যায় সেদিকে আজ দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের। এবারের পরীক্ষা আরও কঠিন। দুই দলের মধ্যে যদি শক্তির নিরিখে যাচাই করা হয় তাহলে দেখা যাবে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। বলা যায়, দুই দল যেন মেরুতে অবস্থান করছে। গত ম্যাচে জর্দানের বিপক্ষে দলকে ইউরোপিয়ান ধাঁচে খেলিয়েছিলেন কোচ এ্যান্ড্রু অর্ড। ফল কি হয়েছে, তা সবারই জানা। অবশ্য তাজিকিস্তানও নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিততে পারেনি। তাই বলে তারা আবার হারেওনি। ২-২ গোলে ড্র করেছে স্বাগতিক ফিলিস্তিনের সঙ্গে। ফিলিস্তিনও শক্তিশালী দল। এই (‘ই’) গ্রুপের অন্যতম ফেবারিট দল। ফলে আজ সেই তাজিকদের বিরুদ্ধে ভঙ্গুর মানসিকতা ও ক্ষীণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে সোহেল রানারা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। শুধু তাই নয়, দু’দলের হেড টু হেড পরিসংখ্যানও কিন্তু তাজিকদের পক্ষে। সিনিয়র দলের সঙ্গে ১০ ম্যাচের সাতটিতেই জিতেছে তাজিকিস্তান (র‌্যাঙ্কিং ১৪৯)। বাংলাদেশের (১৯০) জয় মাত্র একটি। বাকি দুই ম্যাচ হয়েছিল ড্র। একমাত্র জয়টি এসেছিল ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, সুগাথাদাসায়। বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ গোলে। যুব বা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অবশ্য এই প্রথম তাজিকদের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও বয়সভিত্তিক দলে শক্তির তফাতটা উনিশ-বিশ। কিন্তু কিশোর ছাড়া তার ওপরের বয়সভিত্তিক খেলায় বাংলাদেশের অবস্থা একেবারেই যা-তা। গত ম্যাচের (বিপক্ষ জর্দান) কথাই ধরা যাক। জর্দান খেলেছে একচেটিয়া। বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের সীমানাতেই ঢুকতে পারেনি। মাঝমাঠেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের আক্রমণ। জর্দান খেলেছে লম্বা পাসে, বেশি জায়গা নিয়ে এবং দ্রুতগতিতে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ডিফেন্স ছিল একেবারেই দুর্বল। এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস এতটাই বাজে খেলেন যে, প্রথমার্ধের ৪১ মিনিটেই কোচ অর্ড তাকে উঠিয়ে নিতে বাধ্য হন। এদিকে দেশ ছাড়ার আগে এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে একটি জয়ের স্বপ্ন দেখানো অর্ডের কৌশল সমালোচিত হয়েছে। ডিফেন্স সামলে এ্যাটাকে যাওয়ার প্ল্যান মোটেও কাজে দেয়নি। এ্যাটাকে যাবে কি, সেভাবে তো বলই পায়নি তারা। বল নিয়ন্ত্রণ ৮০ শতাংশই ছিল জর্দানের। মূলত প্রতিপক্ষের গতির কাছে বারবারই পরাস্ত হয়েছে বাংলাদেশের রক্ষণ। ফলে এমন জঘন্য হারের ফলে আত্মবিশ্বাসের পারদ এখন তলানিতে। শিষ্যদের এমন মানসিকতায় অর্ড চিন্তিত হলেও জয়ের আশা করছেন তিনি, ‘আমাদের সবসময় জয়ের চেষ্টা নিয়ে ম্যাচ খেলতে হবে। যদি ড্র নিয়ে ফিরতে পারি, তাহলেও এ মুহূর্তে সেটা আমাদের জন্য একটা সাফল্য হবে। দলের যে কঠিন দিকটা খুঁজে পেয়েছি, সেটা হচ্ছে আমরা ভীষণ ভঙ্গুর মানসিকতার। যখন তাদের দেশের বাইরে খেলতে নেয়া হয়, ছেলেরা আগের ম্যাচগুলোর ফলে ভিত এবং প্রবল স্নায়ুচাপে থাকে।’ অথচ এই স্নায়ুচাপ কাটিয়ে উঠতে দেশে-বিদেশে চারটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে দল। কিন্তু তাতে যে কোন উন্নতি হয়নি সেটা তো এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এমনকি ফিলিস্তিনের কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুতি ম্যাচের সঙ্গে কাতারে তিনদিন অনুশীলনও করেছিল যুবারা। কিন্তু তাতেও কোন ফল হয়নি। তাই বলে হাল ছাড়তে নারাজ অর্ড, ‘সম্ভবত আগের ম্যাচের হারের কারণ অনুসন্ধানে খুব গভীরে যাওয়ার সময় নয়। আমাদের হাতে আরও দুটো ম্যাচ আছে এবং এদিকে মনোযোগ দেয়া দরকার। টুর্নামেন্ট শেষে যখন সবকিছুর নিষ্পত্তি হবে, তখন এই সফরের তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করা হবে গুরুত্বপূর্ণ।’
×