ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কদমতলীতে দুই নারীকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় গ্রেফতার ৫

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২১ জুলাই ২০১৭

কদমতলীতে দুই নারীকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় গ্রেফতার ৫

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে রাজধানীর পৃথক এলাকায় দ্ইু নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার কিনারা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন রাতে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন পূর্ব জুরাইন এলাকার একটি বাড়ি থেকে পারুল বেগম নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ওই নারীকে একাধিকবার ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া গত ১০ জুলাই রাজধানীর কদমতলী থানাধীন পূর্ব জুরাইন শিশু কবরস্থান এলাকার একটি বাড়ি থেকে ফরিদা বেগম নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীকেও একাধিকবার ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়। কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, নিহত পারুলের (৩৫) বাড়ি বাগেরহাট জেলায় কচুয়া থানা এলাকায়। আর ফরিদার (৩০) বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানা এলাকায়। দুই নারীই নিঃসন্তান ছিলেন। তার স্বামী গত ২ জুলাই মারা যান। চাঞ্চল্যকর মামলা দুইটির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বেশকিছু তথ্য প্রমাণ পায়। তারই প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই রাত থেকে রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, সাভার ও ফতুল্লা থানা এলাকা সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। অভিযানে গ্রেফতার হয় জামাল খান পাটোয়ারী (৩৫), রাজীব হাওলাদার (২৫), জাকির শিকদার (৩৮), রফিকুল ইসলাম শামীম (২৬) ও মফিজ উদ্দিন সাগর (২৫)। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ফরিদ উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জামাল ও রাজীব বন্ধু। অনেকদিন রাজীব হাওলাদার ও পারুল বেগম একটি কীটনাশক ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে পরিচয়। পরিচয় থেকে দু’জনের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল। পারুল বেগমের স্বামী লিটন পেশায় চালক। চালক হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তাকে প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতে হতো। বিষয়টি রাজীব জানতো। ঘটনার কয়েকদিন আগে জামাল ও রাজীব পারুল বেগমের বাসায় থাকা টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান মালামাল জোরপূর্বক নেবে বলে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৮ জুন পবিত্র রোজার মাসে ইফতারের পর রাজীব পারুল বেগমকে ফোন করে। ফোনে পুরনো পরিচয়ের সুবাদে অনেক কথাবার্তা হয়। রাজীব পরিকল্পনা মোতাবেক পারুলের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহের কথা জানায়। চাকরির সুবাদে পুরনো পরিচয়ের কারণে ভদ্রতা ও সামাজিকতার খাতিয়ে পারুল বেগম তাতে রাজি হন। রাজীব আম, পেয়ারা, হালিম ও দুইটি স্প্রিড নামের দুইটি কোমল পানীয়র বোতল কিনে পারুলের বাসায় বেড়াতে যায়। কোমল পানীয় ও হালিমের মধ্যে ঘুমের ওষুধ গুঁড়ো করে মিশিয়ে দেয়। বাসায় যাওয়ার পর স্বাভাবিক কারণেই পারুল রাজীবকে আপ্যায়ন করে। পারুল অন্য ফল ও খাবার রাজীবকে খাওয়ায়। আর রাজীব কৌশলে পারুলকে হালিম খাওয়ায়। হালিম খাওয়ার পর কোমল পানীয় খাওয়ায়। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পারুল ঘুমে ঢলে পড়ে। পরে জামালও ওই বাড়িতে যায়। পারুলকে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রথমে রাজীব এবং পরে জামাল ধর্ষণ করে। পালাক্রমে কয়েক দফায় ধর্ষণের পর পারুলের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। খানিকটা নড়ে ওঠে। এ সময় জামাল গলা আর রাজীব মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে পারুলকে হত্যা করে। নিশ্চিতভাবে হত্যা করতে রাজীব ও জামাল পারুলের হাত-পা বেঁধে ফেলে। পারুলকে হত্যার তারা বাসা থেকে স্যামসং মোবাইল ফোন, একটি স্বর্ণের নাকফুল ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারের পর তাদের হেফাজত থেকে পারুলের মোবাইল ফোন ও স্যামসাং মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। ওয়ারী জোনের উপকমিশনার ফরিদ উদ্দিন আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শামীম ও সাগর এবং নিহত ফরিদা বেগম এক সময় একই গার্মেন্টেসে চাকরি করত। ফরিদার স্বামী মারা গেছেন। এ জন্য তিনি একাই একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। বিষয়টি সাগর ও শামীম জানতো। স্বামী না থাকার কারণে সাগর, শামীম ও জাকির নানা কৌশলে ফরিদার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তাতে সাড়া পাচ্ছিল না খুনিরা। এ জন্য পরিকল্পিতভাবে গত ৭ জুলাই রাত ১১টার দিকে সাগর, শামীম ও জাকির ফরিদার বাসায় যায়। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে ফরিদার সঙ্গে তারা গল্প করে। একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে শামীম জোরপূর্বক ফরিদাকে অন্য দুইজনের সহায়তায় ধর্ষণ করে। এরপর পর্যায়ক্রমে জাকির ও সাগর মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে ফরিদা চিৎকার করার চেষ্টা করলে সাগর তার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া চাকু ফরিদার মুখে ঢুকিয়ে দেয়। শামীম মসলা বাটার শিল দিয়ে ফরিদার মাথায় আঘাত করে। আর জাকির ফরিদার গলায় ফাঁস লাগিয়ে টেনে শ^াসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর নরপিশাচরা ফরিদার মরদেহ ঘরে রেখে বাইর থেকে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, ওয়ারী জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার তারেক আহমেদ ও সহকারী কমিশনার ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
×