ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এমাসেই টেন্ডার আহ্বান করা হবে ॥ রেলের মহাপরিচালক

কমলাপুর স্টেশন থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চার লেনের রেললাইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২১ জুলাই ২০১৭

কমলাপুর স্টেশন থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চার লেনের রেললাইন হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে পাল্টে যাচ্ছে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইনের দু’ধারের চিত্র। এজন্য দেশের অন্যতম বৃহৎ রেলস্টেশন কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চার লেনের রেললাইন তৈরি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। একই লক্ষ্যে কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারের রেলওয়ের অবৈধভাবে দখলে থাকা হাজার হাজার একর জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি। এজন্য একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে সংস্থা। দেয়াল নির্মাণ করে রেলওয়ের জমির সর্বোচ্চ সুরক্ষা করা, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা, রেললাইনের ওপর দিয়ে নাগরিকদের চলাচল বন্ধ করতে ও এই রুটের সকল ট্রেনকে ক্রসিংয়ের নামে যাত্রা সময় নষ্ট না করতে এই উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে বলে রেলসূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, অবৈধভাবে দখলকৃত এসব জমি উদ্ধার করে স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে সীমানা চিহ্নিত করে রেলওয়ের পক্ষ থেকে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে এ রুটে মাত্র দুটি রেললাইন রয়েছে। নতুন নির্মিতব্য অপর দুটি লাইন শুধু ডেমু বা কমিউটার ট্রেন চলাচলের জন্য তৈরি করা হবে। যাত্রীসাধারণের অতি প্রয়োজনীয় এ ডবল লাইনটি তৈরি হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কমলাপুর স্টেশনে আসা কোন ট্রেনকে এখন থেকে আর কমলাপুর স্টেশনের বাইরে থামিয়ে অপর ট্রেনকে কমলাপুর থেকে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। চলতি জুলাই মাসেই এ লাইনটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। গৃহীত প্রকল্পটি আগামী ২ বছরে সমাপ্ত করা হবে ও এ লাইনটি নির্মাণের পর প্রথমবারের মতো একসঙ্গে দুটি ট্রেন কমলাপুরে পৌঁছতে এবং কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন। রেলসূত্র জানায়, অতি প্রয়োজনীয় এ রুটটির উন্নয়নে অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা নেয়া হলেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি কোন সরকারই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলওয়ের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে রুটটির সার্বিক উন্নয়নে সরকার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্প সূত্র জানায়, ডবল রেললাইন নির্মাণ, অবৈধ জমি উদ্ধার ও চিহ্নিত করে দু’পাশে সীমানা ঘেঁষে দেয়াল নির্মাণ, জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ, রেলক্রসিংয়ের স্থানে গেট নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেলওয়ের দু’পাশে শত শত একর জমি বর্তমানে অবৈধ দখলে রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অতিদ্রুত এসব জমি উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হবে। এসব জমিতে বর্তমানে স্থায়ী ও অস্থায়ী কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে রেললাইন ঘেঁষেই ঘর ও দোকান তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি গড়ে উঠেছে বস্তিই। প্রকল্পে রেলের জমির সীমানা ঘেঁষেই ৬ থেকে ৭ ফুট উঁচু দেয়াল তৈরি করা হবে। নির্দিষ্ট রেলক্রসিংয়ের জন্য লোহার বেষ্টনী দিয়ে শক্তিশালী ফটক তৈরি করা হবে। ঢাকা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যেসব স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে অসংখ্য লোকের চলাচল করতে হয় এমন স্থান বিবেচনা করে পাঁচটি ফুটওভারব্রিজ তৈরি করা হবে। এর মধ্যে অতি জনসমাগমের স্থান হিসেবে কমলাপুর থেকে মগবাজারের মধ্যে তিনটি স্থানে ফুটওভারব্রিজ ও নাখালপাড়া এবং কুড়িলে একটি করে ২ টি ওভারব্রিজ তৈরি করা হবে। এছাড়া সকল রেলক্রসিংয়ে উন্নতমানের গেট তৈরি করা হবে। দেয়াল সম্পর্কে জানা গেছে, রেলওয়ের জমিতে চিরস্থায়ীভাবে অবৈধ দখল বন্ধ করতে সীমানার পাশে এমনভাবে দেয়াল তৈরি করা হবে যাতে কোন ব্যক্তি এই দেয়ালের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে না পারেন। বর্তমানে রেললাইনের ওপর দিয়ে হাঁটা ও সীমানায় চলাচল করার ওপর সর্বাবস্থায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। নির্দিষ্ট কোন সীমানা দেয়াল না থাকায় বর্তমানে নিয়ম না মেনে লোকজন অনায়াসে যাতায়াত করছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার পর এ রুটে ১৪৪ ধারা সর্বাবস্থায় কার্যকর থাকবে। ফলে কোন ব্যক্তি রেললাইনের জমি দিয়ে চলাচল করতে পারবেন না। ফলে প্রতিদিন ঘটতে থাকা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের লাইনের দুই ধারে মোট ৬৫ ফুট নিজস্ব জমি রয়েছে। এই সীমানায় এমনভাবে দেয়াল তৈরি করা হবে যাতে ট্রেন চলাচলের সময় কোন ব্যক্তি হেঁটে যেতে পারবেন না। এমনকি কেউ যাওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি নিশ্চিত দুর্ঘটনার শিকার হবেন। ফলে পথচারী বা কেউ বাধ্য হয়েই রেললাইনে কাটা পড়ার ভয়ে চলাচল করতে আগ্রহী হবেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের অন্যতম বৃহৎ রেলস্টেশন কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চার লেনের রেললাইন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রেলওয়ের জমির সর্বোচ্চ সুরক্ষা করা, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা, রেললাইনের ওপর দিয়ে নাগরিকদের চলাচল বন্ধ করতে ও ট্রেন চলাচল নিরাপদ-নির্বিঘœ করতে আমরা কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেলাইনের দু’ধারে সীমানা ঘেঁষে ৬ থেকে ৭ ফুট উঁচু দেয়াল তৈরি করব। এজন্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি আগামী ২ বছরে সমাপ্ত করা হবে। কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারের রেলওয়ের বর্তমানে অবৈধভাবে দখলে থাকা সকল জমি উদ্ধার ও সকল অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। চলতি জুলাই মাসেই প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে এ রুটে মাত্র দুই লেনের রেললাইন রয়েছে। নতুন নির্মিতব্য অপর দুটি লাইন শুধু ডেমু বা কমিউটার ট্রেন চলাচলের জন্য তৈরি করা হবে। যাত্রীসাধারণের অতি প্রয়োজনীয় এ ডবল লাইনটি তৈরি হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কমলাপুর স্টেশনে আসা কোন ট্রেনকে এখন থেকে আর কমলাপুর স্টেশনের বাইরে থামিয়ে অপর ট্রেনকে কমলাপুর থেকে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে দুটি ট্রেন কমলাপুরে পৌঁছাতে ও কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তাছাড়া ডবল লাইনের কারণে ঢাকার আশপাশের সকল কাছের জেলার লোকজন খুব সহজেই কমিউটার ট্রেনের মাধ্যমে রাজধানীতে নিয়মিত এসে অফিস ও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ ও রেলক্রসিংয়ের স্থানে গেট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া রেলের সীমানায় জনসাধারণের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী সর্বাবস্থায় ১৪৪ ধারা কার্যকর করা সম্ভব হবে।
×