ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নায়েফের পরিবর্তে মোহাম্মদ যেভাবে মনোনীত হলেন

সৌদি রাজপরিবারে উত্থান-পতন

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২১ জুলাই ২০১৭

সৌদি রাজপরিবারে উত্থান-পতন

২১ জুন রাতে প্রাসাদ থেকে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ (৮১) বার্তা পাঠান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফের (৫৭) কাছে। দ্রুত ছুটে যান যুবরাজ। সেদিন মক্কায় রাজপ্রাসাদের চতুর্থতলায় তিনি বাদশাহর কাছে গিয়েছিলেন রাজসিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে কিন্তু এক রাতেই সব বদলে যায়। ভোরে বিন নায়েফ পদচ্যুত হন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সৌদিরা জানল, তাদের পরবর্তী বাদশাহ হতে চলেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান (৩২)। বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠ একজন জানিয়েছেন, এটা ছিল তার জন্য বজ্রাঘাত। এটা একটি অভ্যুত্থান। যার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। ২১ জুন প্রাসাদে যাওয়ার পর তাকে পদত্যাগ করতে বলেন বাদশাহ সালমান। আনুগত্য স্বীকার করতে বলেন তার প্রিয়তম ছেলে মোহাম্মদের কাছে। সৌদি আরবের ক্ষমতায় আকস্মিক এই পরিবর্তন কিভাবে হলো, কার কি ভূমিকা ছিল তার অনুসন্ধানে গিয়ে বিভিন্ন সূত্রে নানা তথ্য পাওয়া গেছে। ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে বিন নায়েফ উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নেতৃত্বেও ছিলেন। বাদশাহর পর তিনি ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাবান। কিন্তু সালমান ভেতরে ভেতরে চ্যালেঞ্জ হয়ে হয়ে দাঁড়ান তার জন্য। নায়েফের ঘনিষ্ঠ সূত্রটি বলেছে, বাদশাহ এলেন বিন নায়েফের কাছে। শুধু তারাই ছিলেন কক্ষে। বাদশাহ বললেন, আমি চাই তুমি পদত্যাগ কর। এত বলার পরও আসক্তি কাটাতে তুমি কোন চিকিৎসাই নিচ্ছ না। যা তোমার সিদ্ধান্ত গ্রহণে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিন নায়েফের এই আসক্তি হলো পেইনকিলার ওষুধ। ২০০৯ সালে এক আলকায়েদা জঙ্গী তার প্রাসাদের সামনে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। বিন নায়েফ বেঁচে গেলেও তার দেহে থেকে যায় শার্পনেল। রাত ১১টায় রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে বাদশাহ সালমান উত্তরাধিকার কমিটিতে একটি চিঠি পড়ে শোনান। যাতে লেখা ছিলÑ ক্রাউন প্রিন্সের আসক্তি চরমে উঠেছে। দুই বছর ধরে চেষ্টার পরও চিকিৎসা নেয়ানো যায়নি তাকে। এরকম বিপজ্জনক অবস্থায় তাকে বাদ দেয়াই যুক্তিযুক্ত। তার স্থলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে মনোনীত করা হোক। নায়েফের ঘনিষ্ঠজন বলেন, ওই সময়ে প্রাসাদের একটি কক্ষে বিন নায়েফকে আটক রাখা হয়। সেখানে আর কেউ ছিল না। তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে তার দেহরক্ষীদেরও বদলে দেয়া হয়। এরপর রাজদূত উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির ৩৪ সদস্যদের স্বাক্ষর নিতে যান। তিনজন বাদে সবাই বিন নায়েফের পদচ্যুতির সিদ্ধান্তে সই করেন। যে তিনজন বিন নায়েফের পক্ষে ছিলেন তারা হলেনÑ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ বিন আবদুল আজিজ, প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহর পরিবারের প্রতিনিধি আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ ও রিয়াদের সাবেক ডেপুটি গবর্নর মোহাম্মদ বিন সাদ। যারা বাদশাহর সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন তাদের সবার ফোনকল রেকর্ড করা হয় এবং তা বিন নায়েফকে শোনানো হয়। তাকে বোঝানো হয় তার পক্ষে কেউ নেই। সারারাত আটক থাকার পর ভোরবেলা হাল ছেড়ে দেন বিন নায়েফ। বাদশাহর সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগ করার কথা জানিয়ে কাগজে সই করেন। বাদশাহর কক্ষ থেকে বেরিয়েই অবাক হয়ে যান বিন নায়েফ। বাইরে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ বিন সালমান। নতুন যুবরাজ। তাকে আলিঙ্গন করেন বিন নায়েফ। হাত ধরে চুমু খান আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে। এরপর বেরিয়ে যান তিনি। ততক্ষণে মোহাম্মদের সঙ্গে তার ছবি ও শাহি ফরমান ছড়িয়ে দেয়া হয় গণমাধ্যমে। এরপর থেকে বিন নায়েফ গৃহবন্দী হন। সপরিবারে সুইজারল্যান্ড কিংবা ব্রিটেনে যেতে চেয়েছিলেন। তবে বাদশাহ সালমান ও তার ছেলের সিদ্ধান্ত, নায়েফের ইচ্ছায় এখন কিছু হবে না। -ইয়াহু নিউজ
×