ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুরে ভাঙ্গনের মুখে ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২১ জুলাই ২০১৭

মাদারীপুরে ভাঙ্গনের মুখে ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ২০ জুলাই ॥ পদ্মা ও আড়িয়ালখাঁর ভাঙ্গনে শিবচর উপজেলার ৩ ইউনিয়নে কয়েক শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ, ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে স্কুল-মাদ্রাসাসহ অসংখ্য বাড়িঘর। জানা গেছে, পদ্মা ও আড়িয়ালখাঁ নদের পানি কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় শিবচর উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত ও আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী সন্ন্যাসীরচরে নদী ভাঙ্গনে শত শত ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গন কাছাকাছি চলে আসায় কাউলিপাড়া দারুল উলুম মাদ্রাসা ও মাদানী কমপ্লেক্স সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে চরাঞ্চলের ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়সহ অসংখ্য ঘরবাড়ি। ভাঙ্গনের তীব্রতায় ক্ষতিগ্রস্তরা ঘরবাড়ি গবাদিপশু সরিয়ে নিতেও হিমশিম খাচ্ছেন। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে সন্নাসীরচর উচ্চ বিদ্যালয়, ৭৬নং সন্ন্যাসীরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, সেতুসহ অসংখ্য স্থাপনা। ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষ এখন না খেয়ে জীবনযাপন করছে। সরকারী কোন সাহায্য-সহযোগিতা এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। দূর থেকে কাউকে আসতে দেখলেই ভাঙ্গনকবলিতরাভাবে এই বুঝি কেউ আমাদের জন্য সাহায্য নিয়ে আসছে। সব চেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে পদ্মা বেষ্টিত চরজানাজাত ও কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের মানুষ। মঙ্গলবার বিকেলে পদ্মা নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাওলিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরিফুল ইসলাম পরিদর্শন করে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন। কাউলিপাড়া গ্রামের নদীগর্ভে বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের আনোয়ার চৌকিদার জানান, সরকার আমাদের এ পর্যন্ত কোন সাহায্যই দেয়নি। আমার সাজানো ভিটে বাড়ি ও ৬ বিঘা ফসলি জমি আড়িয়াল খাঁ গ্রাস করেছে। আমিসহ আমার পরিবার পরিজন এখন সর্বশান্ত। শুধু আনোয়ার চৌকিদার নয়, এরমত শত শত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সরকারী সাহায্য সহানুভূতির প্রতিক্ষায় বসে আছে। কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মাহবুব ফকির বলেন, পদ্মার ভাঙ্গনে ১নং ওয়ার্ডের প্রায় সম্পূর্ণটাই বিলীন হয়ে গেছে। কাউলিপাড়া দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসা ও মাদানী কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষ আব্দুর রকিব বলেন, ‘পদ্মা নদী এখন মাদ্রাসাটির খুব নিকটে এসে পড়েছে। যে কোন সময় মাদ্রাসাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যেই মহিলা মাদ্রাসাটি ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। কওমি মাদ্রাসাটিও ভেঙ্গে অন্যত্র সরানো হবে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’ মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ভাঙ্গনকবলিতদের জন্য আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ত্রাণের চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করি দু-একদিনের মধ্যেই আমরা ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারব। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আপাতত উঁচু স্থানে অস্থায়ী ঘর তুলে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ বরিশাল স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে ॥ সুগন্ধা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মহিষাদী গ্রামের একমাত্র কার্পেটিং সড়কটি ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বিলীনের মুখে রয়েছে এলাকার মহিষাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক জমি রাক্ষুসী সুগন্ধা গ্রাস করে নিয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙ্গন থেকে মূল স্কুলভবনের দূরত্ব এখন ২০ ফুটেরও কম। তাই যে কোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। স্কুলের দুই শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষকরা ওই স্কুলে পাঠদান করাচ্ছেন।স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ডাঃ হেমায়েত উদ্দিন মানিক জানান, মহিষাদী গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যে কোন সময় নদীতে গ্রাস করে নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ মাইলের মধ্যেও আর কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় স্কুলটি নদীতে গ্রাস করে নিলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে। মহিষাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলটিতে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে নিয়মিত ক্লাস করে ১৫৭ জন কোমল শিক্ষার্থী। তীব্র ভাঙ্গন ঝুঁকির মধ্যেই স্কুলে তাদের নিয়মিত পাঠদান করানো হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসে একাধিকবার লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এলজিইডি দফতরে পর্যায়ক্রমে তিনবার ছবি তুলে জমা দেয়া হয়েছে। তবু এখনও কিছুতেই কিছু হয়নি। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ তুহিন সরকার জানান, স্কুলটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য আগেই মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য প্রেরিত তালিকায়ও মহিষাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান জানান, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (দোয়ারিকা সেতু) রক্ষার জন্য বৃহৎ একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেতুর দুই দিকে প্রায় এক কিলোমিটার করে নদীশাসনের ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হলে মাহিষাদী গ্রামে নদী ভাঙ্গন আর থাকবে না।
×