ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ কা’বা শরীফের ইতিকথা

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২১ জুলাই ২০১৭

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ কা’বা শরীফের ইতিকথা

হজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম। প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের পূর্ব পুরুষ মুসলিম জাতির জনক হযরত ইবরাহীম আলাহিস্ সালাম আল্লাহ্র নির্দেশে হজ প্রবর্তন করেন মক্কা শরীফে অবস্থিত কা’বা শরীফ প্রদক্ষিণ করার মাধ্যমে। মানব জাতির আদিপিতা হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম ও আদি মাতা হযরত হাওয়া আলায়হাস্ সালাম সুখে শান্তিতে জান্নাতে অতিবাহিত করছিলেন। আল্লাহ্ হযরত আদম ‘আলায়হিস্ সালামকে বলেছিলেন : হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যা ইচ্ছে স্বচ্ছন্দে আহার কর কিন্তু এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না, যদি হও তাহলে তোমরা জালিম বলে গণ্য হবে। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় তাদের পদস্খলন ঘটল এবং তাদেরকে তাদের অবস্থান থেকে বের করে দেয়া হলো। (সূরা বাকারা : আয়াত ৩৫-৩৬)। হযরত আদম (আ.) এসে পড়লেন শ্রীলঙ্কার এক পর্বত চূড়ায় আর মা হাওয়া পড়লেন জিদ্দায় এক সমতল ভূমিতে। প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছর ধরে আলাদা আলাদা অবস্থানে থেকে তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে কান্নাকাটি করলেন। আল্লাহ্ তাদের তওবা কবুল করলেন। তারা মক্কায় এসে ঘর বাঁধলেন তখন মক্কার নাম ছিল বাক্কা, জান্নাতে থাকাকালে তারা ফেরেশতাদের প্রদক্ষিণ গৃহ বায়তুল মামুর দেখেছিলেন। হযরত আদম (আ.) আল্লাহ্র নিকট তেমন একটা গৃহের জন্য দু’আ করলেন। আল্লাহ্ দু’আ কবুল করলেন। আল্লাহ্র নির্দেশে কয়েকজন ফেরেশতা এসে পাহাড় বেষ্টিত মক্কার সমতল ভূমিতে একটি গৃহের ভিত্তি স্থাপন করলেন। সেই ভিত্তির ওপর পাথর গেঁথে দেয়াল তুললেন আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) এই ঘরই কা’বা শরীফ। তাঁরা এই ঘর প্রদক্ষিণ (তওয়াফ) করতেন। তাঁদের সন্তানেরা এটা ওয়াফ করতেন। হযরত নূহ আলায়হিস্ সালামের সময় মহাপ্লাবনে কাবা ঘর একটা স্তূপে পরিণত হয়। হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মিসরীয় কন্যা হযরত হাজেরা আলায়হাস সালামকে তাঁর সদ্যজাত পুত্র ইসমাঈল (আ.)কে জনমানবশূন্য মক্কা রেখে যান আল্লাহ্র নির্দেশে। হযরত হাজেরা আলায়হাস সালাম শিশুপুত্রকে লালন-পালনে ত্রুটি করলেন না। পানিশূন্য এই ভূমিতে ইসমাঈলের পায়ের আঘাতে এখানে একটি পানির প্রসবন প্রবাহিত হলো। যা যমযম নামে পরিচিত হয়। হযরত ইসমাঈল (আ.) মায়ের তত্ত্বাবধানে বড় হতে লাগলেন। একদিন তিনি যমযম কুপের পাশে একটি যয়তুন বৃক্ষের ছায়ায় বসে একটি তীরে ধার দিচ্ছিলেন। এমন সময় হযরত ইবরাহীম (আ.) সেখানে এসে পুত্র ইসমাঈল (আ.)কে বললেন : আল্লাহ্ আমাকে তাঁর ঘর পুনর্নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত ইসমাঈল (আ.) পিতার সঙ্গে মিলে নিকটেই থাকা স্তূপটি খুঁড়ে ঘরের ভিত্তি বের করে তার ওপর পাথর গেঁথে দেয়াল তুললেন। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : আর যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বা ঘরের দেয়াল তুলছিল তখন তারা বলছিল : হে আমাদের রব্। আমাদের এই কাজ গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। হে আমাদের রব্। আমাদের দু’জনকে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত উম্মত করবেন। (সূরা বাকারা : আয়াত ১২৭-১২৮)। এই ঘর তোলার পর আল্লাহ্ এই ঘরে হজ করার ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ্র নির্দেশে হজের ঘোষণা দেন। কালক্রমে হজের আনুষ্ঠানিকতায় র্শিক প্রবেশ করে। শেষত প্রিয় নবী (সা.) সেই হজে পুনরায় তওহীদী অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত করেন। ৬৩১ খ্রিস্টাব্দে হজের বিধান নাযিল হয়। ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায়। তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী। তাতে আছে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন, আছে মাকামে ইব্রাহীম। আর কেউ যদি সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষদের মধ্যে যে ব্যক্তির সেখানে যাবার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ্র উদ্দেশে, ওই গৃহের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৯৬-৯৭) এখানে উল্লেখ্য, বর্তমান লেখক বেশ কয়েকবার হজ করেছেন, স্ত্রী মায়া ও পুত্র মিঠুসহ। তবুও বার বার হজে যাবার ইচ্ছে হয়। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট হযরত মুহম্মদ (সা.)
×