ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নকল ডিবি পুলিশ

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২১ জুলাই ২০১৭

নকল ডিবি পুলিশ

ভুয়া ডিবি পুলিশের ১২ সদস্যের গ্রেফতারের বিষয়টি উদ্বেগজনক বৈকি। ধৃতদের কাছে নোয়া মাইক্রোবাসসহ বিদেশী পিস্তল, বুলেট, নকল ওয়্যারলেস সেট, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ, স্কচটেপ, ডিবির আদলে তৈরি নকল জ্যাকেটÑ এসবই ছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সোমবার রাতে আসল ডিবি পুলিশের হাতে তারা বমাল ধরা পড়েছে যাত্রাবাড়ী এলাকায়। ধরা পড়ার আগে তারা বিভিন্ন স্থানে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ডাকাতিও করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে সেই অর্থও। ইতিপূর্বে ভুয়া পুলিশ, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি সদস্য, এমনকি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নামে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পর্যন্ত ধরা পড়ার খবর মিলেছে। নকল বা ভুয়া ডিবি পুলিশ বোধ করি এই প্রথম। নকলের ভিড়ে যেন আসলের হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখনই যথেষ্ট সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন না করলে সামনে আরও বিপদ হতে পারে। আশার কথা এই যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কেননা সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপও ঘোষণা করেছে। বরাবরের মতোই জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মাঠ সরগরম হবে তাতে আর বিচিত্র কী! বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের সমালোচনায় বিভোর। দলটির পেছনে কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধী মানবতাবিরোধী দল জামায়াত তো আছেই। মাঝে-মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী তৎপরতা এবং জঙ্গী ধরার খবরও মেলে। এর পাশাপাশি অপহরণ, গুম, মুক্তিপণ দাবি, এমনকি খুন করার খবর পর্যন্ত পাওয়া যায়। এসব ঘিরেই প্রধানত আঙ্গুল তোলা হয় সরকারের দিকে দাতা দেশ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে। তাতে স্বভাবতই দেশে-বিদেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় সরকারের। বাস্তবে এসব কিছুর পেছনেই প্রকৃতপক্ষে সরকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত কিনা এমন প্রশ্ন উঠতে পারে, বিশেষ করে ভুয়া ডিবি পুলিশ গ্রেফতারের পর। সম্প্রতি ফরহাদ মজহারের তথাকথিত অপহরণের পর এমন প্রশ্ন উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তিনি অপহৃত হননি, বরং অপহরণের ‘নাটক’ সাজিয়েছিলেন নিজেই। এমতাবস্থায় এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা! নিকট অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট কর্তৃক নির্বাচন বানচালের জন্য জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা ইত্যাদির কথা মানুষ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। সে অবস্থায় এবারও যে তারা মাঠে থাকবে না এমন কথা বলা যায় না। সাধারণত ঈদ, পূজা উপলক্ষে ভুয়া র‌্যাব-পুলিশের উৎপাত কিছুটা বৃদ্ধি পায়। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রধানত চাঁদাবাজি ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়। সামনেই ঈদ-উল-আযহা। গরুর হাটের হাঁক-ডাক শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে লেনদেন। সে অবস্থায় ভুয়া ডিবি পুলিশ গ্রেফতারের বিষয়টিকে আমলে নিতে হবে বৈকি। দেশে গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হচ্ছে। জঙ্গী তৎপরতাসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমও অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। ছিনতাই-রাহাজানিও কমেছে। তাই বলে আত্মপ্রসাদ লাভের মাধ্যমে থেমে থাকলে চলবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটাতে হবে। দেশব্যাপী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সুবিস্তৃত সীমান্তপথে অস্ত্রশস্ত্র, মাদক ও অবৈধ পণ্যের চোরাচালান বন্ধে নিতে হবে সর্বতোমুখী পদক্ষেপ। সর্বোপরি সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে জনসাধারণকে। গণমাধ্যমও এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। মোট কথা নকল ও ভুয়াদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে হবে যে কোন মূল্যে।
×