ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

রেডিওহেডের প্রতি রজারের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২০ জুলাই ২০১৭

রেডিওহেডের প্রতি রজারের আহ্বান

জর্জ রজার ওয়াটার্স সব সময় মানবতার কথা বলতেন। তার প্রতিটি গানে ছিল প্রতিক্রিয়াশীল বিরুদ্ধে অবস্থনের কথা। তিনি খুব সক্রিয়ভাবে ইসরাইলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি নিজে গার্ডিয়ান পত্রিকায় এক দীর্ঘ সাক্ষাতকারে বলেছেন,- ‘১৯৮০ সালে আমি একটি গান লিখি, ‘এ্যানাদার ব্রিক ইন দ্য ওয়াল পার্ট-২’। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার এটি নিষিদ্ধ করে। সেদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুরা সম-অধিকারের কথা তুলতে এ গানটি ব্যবহার করত বলে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তখনকার বর্ণবাদী সরকার আমার গানসহ বেশকিছু গানের ওপর এক ধরনের সাংস্কৃতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। ২৫ বছর পর ২০০৫ সালে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে এক উৎসবে যোগ দেয়া ফিলিস্তিন শিশুরা পশ্চিম তীরকে ঘিরে ইসরাইলের দেয়াল তোলার প্রতিবাদ জানাতে সেই গানটি ব্যবহার করে। তারা গায় ‘ইউ ডোন্ট নিড নো অকুপেশন! উই ডোন্ট নিড নো রেসিস্ট ওয়াল!’ আমি তখনও স্বচক্ষে দেখিনি গানে তারা কিসের কথা বলতে চাইছে। পরের বছর তেলআবিবে গান পরিবেশন করার ব্যাপারে আমার সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তিটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান কিছু ফিলিস্তিনী। তারা ইসরাইলকে শিক্ষায়তনিক ও সাংস্কৃতিক বয়কটের আন্দোলনে সক্রিয়। দেয়ালের বিরুদ্ধে আমি আগেই জোরালো অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু সাংস্কৃতিক বয়কটের পথ ঠিক কিনা, তা নিয়ে তখনও আমি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। বয়কটেরপক্ষের ফিলিস্তিনীরা আমার কাছে আহ্বান জানালেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে স্বচক্ষে দেয়াল দেখতে আমি যেন পশ্চিম তীরে যাই। আমি রাজি হলাম। জাতিসংঘের নিরাপত্তাধীন জেরুজালেম ও বেথলহেমে সফর করলাম। সেদিন যা দেখলাম, তার জন্য কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। দেয়ালটি দেখতে মর্মান্তিক। ইসরাইলী তরুণ সেনারা দেয়ালের পাহারায়। তারা আমাকে বাইরে থেকে আসা নৈমিত্তিক কোন দর্শক ভেবেছে। আমার প্রতি তাদের আচরণ ছিল ঘৃণাপূর্ণ আগ্রাসী। আমি বিদেশী, একজন দর্শক। আমার প্রতিই যদি এমন আচরণ করা হয়, তাহলে একবার ভাবুন তো কেমন আচরণ করা হয় ফিলিস্তিনীদের প্রতি। তখন বুঝলাম, সেই দেয়ালের থেকে, আমার দেখা সেই ফিলিন্তিনীদের ভাগ্যের থেকে আমাকে পালিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে দেবে না আমার বিবেক। সেই থেকেই রজার আজও অবরুদ্ধ গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে (পূর্ব জেরু“জালেমসহ) ফিলিস্তিনীদের ওপর ইসরাইলে যেভাবে জঘন্য ও নির্মম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, তার পাশাপাশি ইসরাইলে উদ্বাস্তুদের নিজ বাড়িতে ফিরে আসার অধিকার অস্বীকার করে চলেছে; সেই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনীদের নাগরিক, অহিংস প্রতিরোধ-সংগ্রামের প্রতি সারা দুনিয়ার শুভ বোধসম্পন্ন মানুষের সমর্থন আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বে যেসব অল্টারনেটিভ রক দল চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, তার মধ্যে অবশ্যই রেডিওহেড-এর অবস্থান হবে প্রথম সারিতে। সম্প্রতি রজার রেডিওহেডের আসছে ইসরাইল সফরে না যেতে, কনসার্টে অংশ না নীতি অনুরোধ জানিয়ে মেইল প্রেরণ করেন। তিনি তার মেইলে বলেন, মৌলিক মানবাধিকার সবারই প্রাপ্যÑ এই ভাবনা থেকেই আমার এই প্রত্যয়। এটা ইসরাইলী জনগণের ওপর কোন আক্রমণ নয়। সঙ্গীতজগতে আমার সহকর্মী এবং অন্যান্য শিল্পের শিল্পীদের প্রতিও আমার অনুরোধ, আপনারা এই সাংস্কৃতিক বয়কটে শরিক হোন।
×