ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব্যসাচী দাশ

পিয়ার আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার গল্প

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২০ জুলাই ২০১৭

পিয়ার আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার গল্প

এমন ঘটেছে অনেক। কেউ যখন কোন কিছুর জন্য মরিয়া হয়ে যায়, তখন জাগতিক কোন কিছুই আর তাকে আটকাতে পারে না! পরিষ্কার করে বললে কোন প্রতিবন্ধকতাই তাকে থামাতে পারে না। সে ছুটে চলে নিরন্তর। কেবল যথাযথ মর্যাদাই তাকে স্থির করতে পারে! তবে, চাইলেই কিন্তু সবাই মরিয়া হতে পারে না। এ জন্য চাই শিকড় থেকে উঠে আসা বুকভরা আত্মবিশ্বাসের বাষ্প। খুঁজলে এমন মানুষ মিলবে ঢেড়! তাদের ইতিহাস তুলে ধরলে তা হবে অন্তহীন আখ্যান। আমাদের দেশেও এমন মানুষের সংখ্যা যে একেবারেই কম তা কিন্তু নয়। তবে শোবিজ ওয়ার্ল্ডে খুঁজলে তার সংখ্যা নিশ্চই অনেক নয়। হ্যাঁ। আসলে ব্যাপারটা তাই। হাজারটা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এই ওয়ার্ল্ডে। অনেকের প্রবল ইচ্ছা বা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনুষঙ্গ আরও কিছুর অভাবে শেষমেশ আর পেরে ওঠেন না। তবে কেউ কেউ অবশ্যই পারে। জাগতিক কোন কিছুই তাকে আটকাতে পারে না! কারণ, সে জানে তার লক্ষ্য কি। এমনি একজন অপ্রতিরোদ্ধ মানুষের কথোপকথন নিয়ে আজকের আয়োজন। যিনি মডেল হয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, অভিনয়ে যোগ করেছেন ভিন্নতর মাত্র। জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। দেশে এবং দেশের বাইরে যার অবস্থান অনন্য। সম্প্রতি এই আন্তর্জাতিক মডেল ও অভিনেত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ কথা হয় আনন্দকণ্ঠের। প্রথমেই জানতে চওয়া হায়, আপনার নামের সঙ্গে মডেল ও অভিনেত্রী এই দুই বিশেষণ। কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? পিয়া, আমি আসলে যখন যেটা করি সেটা খুব মনোযোগের সঙ্গে করি। যখন মডেলিং করি তখন ওটাতেই ডিপ কনসেন্ট্রেট, আবার যখন অভিনয় করি তখন ঠিক তাই। এখন কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন? এখন মূলত আমার বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত আছি। আপনার বন্ধুদের নিয়ে গড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উই’র খবর কী? হ্যাঁ, ভাল,। আমি খুব একটা সময় দিতে পারি না তবে, আমার বন্ধুরা ঠিক ঠিক কাজ করছে। দেশের বাইরে ইন্ডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ইতালি, মিসরের মতো দেশে একাধিক শো করেছেন। এ সবের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলুন? পিয়া, দেশের বাইরে অনেক শো করেছি ঠিক। অভিজ্ঞতা যদি বলতে হয়, তা হলো পুরোপুরি পেশাদারিত্বের মনোভাব থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা, এর বাইরে আসলে টিকও সম্ভব নয়। আসলে পেশাদারিত্বের মনোভাব না থাকলে কোন কাজই কাজ হয় না, তা আমি যাই করেন না কেন। আমাদের দেশে তো অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে, কাজ করছে এবং আরও করতে চায় তাদের সম্পর্কে আপনার অভিমত? পিয়া, দেখেন আগেই বলেছি আমি আপনি যাই করি না কেন সবার আগে কাজের মূল্য বুঝতে হবে, কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের বাইরে যখন কাজ করেছি অনেক অর্গানাইজারা বলেছে, তোমাদের দেশ থেকে আরও মডেল পাঠাও। আমাদের দেশের অনেক মেয়েই স্বপ্ন দেখে মডেল হবে, অনেক বড় বড় শো করবে কিন্তু, বাস্তবে ওই স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে যায়! সমস্যা কোথায়? সমস্যা অনেক তার মধ্যে পেশাদারিত্বের মনোভাবের অভাব সব থেকে প্রকট। এই যেমনÑ আপনি সংবাদিকতা করেন, রাস্তায় বের হলে আপনার বিপদ হতে পারে, এই ভেবে কি আপনি রাস্তায় বের হবেন না! আসল ব্যাপাটাও তাই। আমাদের দেশের ফ্যাশন শো সম্পর্কে বলুন? আমাদের দেশে খুব ভাল ভাল শো হয়, কিছুদিন আগেও আড়ংয়ের একটা খুব ভাল শো ছিল রেডিসনে। মূলত যারা দেশীয় অর্গানাইজার তারা আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো বোঝেন। যে কারণে, বেশ ভাল ভাল শো হয়। ইন্টারনেটে যখন আপনার বিকিনি পড়া ছবি প্রকাশ পেল তখন, আপনাকে নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে এটা কিভাবে মেইন্টেইন করেছেন? পিয়া, দেখেন প্রথমত আমি এই ছবি ইন্টারনেটে শেয়ার করিনি। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে কেউ একজন ছবিটা শেয়ার করেছে। আমি খুব ভালভাবে বুঝি, আমাদের দেশে পোশাকের বিষয়গুলো কিভাবে দেখা হয়, তো আমার দিক থেকে এই ছবি প্রকাশ করার কোন প্রশ্নই আসে না। দেখেন, বিকিনি পরার প্রথম প্রস্তাব ছিল ইন্ডিয়াতে, সেখানে বলেছিলাম আমি একটা মুসলিম দেশের মেয়ে এটা আমার জন্য একটু অন্যরকম। আর্গানাইজারা আমার বিষয়টা বুঝতে পেরে বলেছিলেন, তুমি পরতে চাওনা ঠিক আছে। এরপর যখন জার্মানিতে গিয়েছি সেখানকার ইউরোপীয়ান অর্গানাইজারা আমাকে সরাসরি বলেছে ‘বিকিনি না পরলে তুমি শো থেকে বাদ পড়ে যাবে’ সো আমাকে পরতে হয়েছে। এক্ষেত্রে, আমি মনে করি এটাই হচ্ছে আমার আসল পেশাদারিত্বের মনোভাবের পরিচয়। আর একটা কথা, আমি কিন্তু প্রথম বাংলাদেশী মেয়ে নয় যে বিকিনি পরেছি, ২০০৪-০৫ এর দিকে নায়লা নাইমও পরেছে। সিনেমা করেছেন, নাটক করেছেন, অভিনয় নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি? পিয়া, পরিকল্পানা গুরুতর কিছু না, সুযোগ পেলে করব। তবে, আমাদের ছোট ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরে এত এত পলিটিক্স তাতে করে ভয়ই পাই, শেষে কি হাল হয় অদূর ভবিষ্যতে! তবে, ভাল চরিত্র এবং সিনেমায় কাজের ইচ্ছা অবশ্যই আছে। আপনার আইন পেশার খবর কি? এই তো আগামী ২১ তারিখ বারকাউন্সিলে পরীক্ষা দেবে। আর ব্যারিস্টারি? ওটাও দেয়ার ইচ্ছা আছে। আর কী প্লান আছে? সব ঠিক থাকলে আগামী ২৬ তারিখ আমেরিকা যাব, ওখানে কিছু অর্গানাইজেশনের সঙ্গে মিট করব। আপনার আইকন? নওমি ক্যাম্পবেল, দিপিকা পাডুকোন আর স্পেশালি পিয়াংকা চোপড়া! ওর যে, মেধা তাতে সত্যই মুগ্ধ হওয়ার মতো! পিয়া ২০০৭ সালের মিস বাংলাদেশী, ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড মিস ইউনির্ভাসিটি’ শিরোপাজয়ী। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ভোগ’ এর মুম্বাই সংস্করণের প্রচ্ছদ মডেল হয়েছেন। এছাড়া ২০১২ সালে রেদোয়ান রনির পরিচালনায় ‘চোরাবালি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তারপর আরও একাধিক চলচ্চিত্র সঙ্গে টিভি নাটকও ক্যারিয়ারে মডেলিং নিয়ে আছেন টানা ৯ বছর। সব মিলিয়ে পিয়া ইতোমধ্যে পেরিয়েছেন দেশ কাল সীমানার গ-ি। বাকিটা ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা! ছবি : আরিফ আহমেদ
×