ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মকর্তাদের মারধর ও জিএমের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ;###;সভাপতি সেক্রেটারিসহ চাকরিচ্যুত ৩;###;বাধ্যতামূলক অবসরে ১ ও বদলি ৪

৮ সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল রূপালী ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২০ জুলাই ২০১৭

৮ সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল রূপালী ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সিবিএ নেতাদের দাপট নতুন কিছু নয়। বদলি, ঋণের তদবিরসহ নানা অপকর্ম তারা করে থাকেন। বাধা দেয়া যাবে না। বাধা এলেই হয়রানি ও নাজেহাল হতে হয় এ সিবিএ কর্মচারীদের হাতে। উর্ধতন কর্মকর্তা থেকে ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা পর্যন্ত তাদের হাতে হেনস্থা হন। তারা যেন সবকিছুর উর্ধে। প্রথম এবং সর্বশেষ ১৪ বছর আগে গবর্নরের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ সিবিএ নেতাকে বরখাস্ত করেছিলেন তৎকালীন গবর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ। এবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসাদাচারণের দায়ে রূপালী ব্যাংকের তিন সিবিএ নেতাকে বহিষ্কারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে জানিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাহসী পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করছেন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর স্থানীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপকসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে রূপালী ব্যাংকের সিবিএ নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় বুধবার জড়িতদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রশাসনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সিবিএ সভাপতি খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, সেক্রেটারি মোঃ কাবিল হোসেন কাজী ও কেয়ার টেকার মোঃ আরমান মোল্লাকে স্থায়ীভাবে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে ড্রাইভার মোঃ আবুল কালাম আজাদকে। আর ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে কেয়ারটেকার মোঃ আনোয়ার হোসেন, ছাব্বির আহমেদ ভূঁইয়া ও মনিরুল ইসলামসহ এ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (গ্রেড-১) মোঃ আহসান হাবিবকে। সিবিএ নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘটনায় রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাবেক ডেপুটি গবর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, উশৃঙ্খল সিবিএ নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা পুরো আর্থিক খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যারা ইউনিয়ন করার নামে আর্থিক খাত বিরোধী কর্মকা-ে জড়িত তারা একটা কঠোর বার্তা পাবে। আর্থিক খাতের জন্য এটা উদাহরণ হয়ে থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য আমি ব্যাংকের বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই। বিশেষ করে ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহী আতাউর রহমান প্রধান যেভাবে সাহসীকতার সঙ্গে বিষয়টা সমাধান করেছেন, এটা প্রশংসনীয়। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সকালে রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক মোঃ নূরুজ্জামান, উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ শওকত আলী খান, সহকারী মহাব্যবস্থপক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ও প্রিন্সিপাল অফিসার মোঃ জসিম উদ্দিন সরকারের সঙ্গে গুরুতর অসদাচরণ ও অশালীন আচরণ করে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করেন আলোচিত এই সিবিএ নেতারা। এর প্রেক্ষিতে ওইদিনই ৫ জনকে (সংস্থাপন ও কল্যাণ বিভাগের অফিস সহকারী মোঃ কাবিল হোসেন কাজী, একই বিভাগের ড্রাইভার মোঃ আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোঃ আনোয়ার হোসেন ও এ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার গ্রেড-১ মোঃ আহসন হাবিব এবং কাপ্তান বাজার শাখার অফিস সহকারী মোঃ আরমান মোল্লা) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সিবিএ সভাপতি মতিঝিল কর্পোঃ শাখার জুনিয়র অফিসার খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, ভিজিলেন্স ও ইন্টিলিজেন্স বিভাগের অফিস সহকারী মোঃ মনিরুল ইসলাম ও শিল্প ঋণ বিভাগের অফিস সহকারী মোঃ ছাব্বির আহমেদ ভূইয়াকে চার্জশীট করা হয়। পরে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে জড়িত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। উল্লিখিত সিবিএ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মারধর এবং সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।
×